বাংলাদেশের গণতন্ত্র নয়, বরং বাণিজ্য ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক প্রতিযোগিতাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন— এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান।
ওয়াশিংটনভিত্তিক সাময়িকী ফরেন পলিসির উইকলি সাউথ এশিয়া ব্রিফিং-এ কুগেলম্যান বলেছেন, ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। এখন ওয়াশিংটনের কাছে ঢাকার সঙ্গে সম্পর্কের মূল বিষয় বাণিজ্যিক অংশীদারিত্ব ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা সহযোগিতা, যা মূলত চীনা প্রভাব মোকাবিলার কৌশল হিসেবেই বিবেচিত।
কুগেলম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যা একটি কঠিন বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ। এই অবস্থায় ওয়াশিংটনের তরফে গণতন্ত্র পুনর্গঠন বা রাষ্ট্রীয় সংস্কারে আগ্রহ খুবই সীমিত। “বাইডেন প্রশাসনের শেষদিকে যে স্বল্পমেয়াদি গণতান্ত্রিক সহায়তার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, তা ট্রাম্প প্রশাসনে কার্যত আর অগ্রাধিকার পাচ্ছে না।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত জোট-নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতিও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অসুবিধার কারণ হতে পারে। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে ঢাকা আরও স্পষ্টভাবে চীনবিরোধী জোটে যোগ দিক।
৩০ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফোনালাপ হয়। দুই দেশের পক্ষ থেকেই জানানো হয়, আলোচনায় অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীরতর করার পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা জোরদার নিয়ে একমত হওয়া হয়।
মাইকেল কুগেলম্যানের মতে, “এ আলোচনার ভাষা থেকেই বোঝা যায়, ওয়াশিংটনের কাছে বাংলাদেশের ভূ-অবস্থান এখন অনেক বড় খেলায় ব্যবহৃত হওয়ার মতো উপাদান, গণতন্ত্র নয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কনীতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ গত এপ্রিলে জরুরি বৈঠকের আয়োজন করে। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। অর্থ উপদেষ্টা নতুন শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক কাঠামো ঘোষণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির পথ সহজ করার পদক্ষেপ নিয়েছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলমান আলোচনা ইতিবাচক দিকে যাচ্ছে এবং শুল্ক সংকটের একটি সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব। এ বিষয়ে আগামী ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় দফা উচ্চপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।