১০:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মূল খুনিরা বাদ, রহস্য দেখছে বিএনপির তিন অঙ্গ-সংগঠন

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে যুবদল কর্মী মোহাম্মদ সোহাগকে হত্যার ঘটনায় এখনও মূল আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপির তিন অঙ্গ-সংগঠন—যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।

শনিবার (১২ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলে তারা বলেন, ভিডিও ফুটেজে হত্যাকারীদের পরিচয় স্পষ্ট হলেও রহস্যজনকভাবে মামলার এজাহার থেকে মূল তিন আসামির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ডেও খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে’

সংবাদ সম্মেলনে যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, “রাজধানীর চকবাজার থানার ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী মোহাম্মদ সোহাগকে যেভাবে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা দেখে পুরো জাতি স্তম্ভিত। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতকরা এখনও ধরা পড়েনি—এটা আমাদের বোধগম্য নয়।”

তিনি বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত আমাদের সংগঠনের পাঁচজনের বিরুদ্ধে আমরা নিজস্ব তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি। কিন্তু যাদের ভিডিও ফুটেজে হত্যা করতে দেখা গেছে, তারা কেন এখনও মামলা থেকে বাদ পড়ল?”

‘পুলিশ কৌশলে আসামি বদলেছে’

মুন্না অভিযোগ করেন, “মামলার বাদীর মেয়ে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, পুলিশ মামলার এজাহার তৈরি করতে গিয়ে কৌশলে মূল খুনিদের বাদ দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। এতে করে খুনিদের আড়াল করা হয়েছে। ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও যাদের হাতে হত্যা সংঘটিত হয়েছে, তারা কেন এখনো ধরা পড়ছে না—এটা একটা বড় প্রশ্ন।”

‘প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রেখে অরাজকতা তৈরির ষড়যন্ত্র’

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান প্রশাসনিক ব্যর্থতায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরমভাবে অবনতি ঘটেছে। পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রেখে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর পেছনে উদ্দেশ্য হতে পারে আগামী জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা।”

‘বহিষ্কারের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি, প্রশাসন নেয়নি’

বিএনপি নেতারা দাবি করেন, তাদের সংগঠনের বিরুদ্ধে যখনই অভিযোগ উঠেছে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। “গত এক বছরে আমরা শত শত নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে?”—প্রশ্ন তোলেন মোনায়েম মুন্না।

‘দেশে সহিংসতার উৎস একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী’

সংবাদ সম্মেলনে গত এক বছরের বিভিন্ন সহিংস ঘটনার কথা তুলে ধরে বলা হয়, খুলনায় যুবদলের বহিষ্কৃত নেতাকে রগ কেটে হত্যা, চাঁদপুরে ইমামের ওপর হামলা, কুমিল্লায় একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতাদের হত্যা—এই সব ঘটনায় একটি চিহ্নিত রাজনৈতিক গোষ্ঠী জড়িত। এই গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে ‘রগকাটা রাজনীতি’র চর্চা করে আসছে বলেও অভিযোগ করেন নেতারা।

‘তারুণ্যের সমর্থন বিএনপির প্রতি’

বিএনপি নেতারা বলেন, সম্প্রতি তরুণদের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ তরুণই বিএনপির প্রতি আস্থা ও সমর্থন রাখে। যারা নিজেদের একমাত্র তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী বলে দাবি করে, তাদের সেই দাবি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।

উপস্থিত ছিলেন যারা:

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করীম পল এবং ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

মূল খুনিরা বাদ, রহস্য দেখছে বিএনপির তিন অঙ্গ-সংগঠন

প্রকাশিত হয়েছে: ০৬:১৭:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে প্রকাশ্যে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে যুবদল কর্মী মোহাম্মদ সোহাগকে হত্যার ঘটনায় এখনও মূল আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিএনপির তিন অঙ্গ-সংগঠন—যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।

শনিবার (১২ জুলাই) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলে তারা বলেন, ভিডিও ফুটেজে হত্যাকারীদের পরিচয় স্পষ্ট হলেও রহস্যজনকভাবে মামলার এজাহার থেকে মূল তিন আসামির নাম বাদ দেওয়া হয়েছে।

‘প্রকাশ্য হত্যাকাণ্ডেও খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে’

সংবাদ সম্মেলনে যুবদল সভাপতি মোনায়েম মুন্না বলেন, “রাজধানীর চকবাজার থানার ব্যবসায়ী ও যুবদল কর্মী মোহাম্মদ সোহাগকে যেভাবে প্রকাশ্যে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা দেখে পুরো জাতি স্তম্ভিত। কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডের মূল ঘাতকরা এখনও ধরা পড়েনি—এটা আমাদের বোধগম্য নয়।”

তিনি বলেন, “ঘটনার সঙ্গে জড়িত আমাদের সংগঠনের পাঁচজনের বিরুদ্ধে আমরা নিজস্ব তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছি। কিন্তু যাদের ভিডিও ফুটেজে হত্যা করতে দেখা গেছে, তারা কেন এখনও মামলা থেকে বাদ পড়ল?”

‘পুলিশ কৌশলে আসামি বদলেছে’

মুন্না অভিযোগ করেন, “মামলার বাদীর মেয়ে গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, পুলিশ মামলার এজাহার তৈরি করতে গিয়ে কৌশলে মূল খুনিদের বাদ দিয়ে নিরপরাধ তিনজনকে আসামি করেছে। এতে করে খুনিদের আড়াল করা হয়েছে। ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও যাদের হাতে হত্যা সংঘটিত হয়েছে, তারা কেন এখনো ধরা পড়ছে না—এটা একটা বড় প্রশ্ন।”

‘প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রেখে অরাজকতা তৈরির ষড়যন্ত্র’

তিনি আরও বলেন, “বর্তমান প্রশাসনিক ব্যর্থতায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরমভাবে অবনতি ঘটেছে। পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রেখে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এর পেছনে উদ্দেশ্য হতে পারে আগামী জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করা।”

‘বহিষ্কারের দায়িত্ব আমরা নিয়েছি, প্রশাসন নেয়নি’

বিএনপি নেতারা দাবি করেন, তাদের সংগঠনের বিরুদ্ধে যখনই অভিযোগ উঠেছে, তারা তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে। “গত এক বছরে আমরা শত শত নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছি। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে?”—প্রশ্ন তোলেন মোনায়েম মুন্না।

‘দেশে সহিংসতার উৎস একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী’

সংবাদ সম্মেলনে গত এক বছরের বিভিন্ন সহিংস ঘটনার কথা তুলে ধরে বলা হয়, খুলনায় যুবদলের বহিষ্কৃত নেতাকে রগ কেটে হত্যা, চাঁদপুরে ইমামের ওপর হামলা, কুমিল্লায় একই পরিবারের তিনজনকে হত্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল নেতাদের হত্যা—এই সব ঘটনায় একটি চিহ্নিত রাজনৈতিক গোষ্ঠী জড়িত। এই গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে ‘রগকাটা রাজনীতি’র চর্চা করে আসছে বলেও অভিযোগ করেন নেতারা।

‘তারুণ্যের সমর্থন বিএনপির প্রতি’

বিএনপি নেতারা বলেন, সম্প্রতি তরুণদের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ তরুণই বিএনপির প্রতি আস্থা ও সমর্থন রাখে। যারা নিজেদের একমাত্র তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বকারী বলে দাবি করে, তাদের সেই দাবি জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি।

উপস্থিত ছিলেন যারা:

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করীম পল এবং ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।