০৬:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তীব্র গরমে নিজ হাতে বানানো কুলারেই ভরসা আফগান চালকদের

আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের কান্দাহার শহরে যখন তাপমাত্রা প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে যাচ্ছে, তখন রাস্তায় চলতে থাকা ট্যাক্সিগুলোর ছাদে দেখা মিলছে অদ্ভুত সব যন্ত্রপাতির—পুরনো প্লাস্টিকের ড্রাম, মোটা পাইপ, আর আঠালো টেপ দিয়ে লাগানো ফ্যান। প্রথম দেখায় অব্যবস্থাপনা মনে হলেও বাস্তবে এটি এক অসাধারণ উদ্ভাবন। আর্থিক দৈন্যতা ও ভাঙা এসির ভোগান্তি থেকে বাঁচতে কান্দাহারের ট্যাক্সিচালকেরা নিজেরাই তৈরি করে নিচ্ছেন এই হাতের বানানো এয়ার কুলার।

চালকরা বলছেন, প্রচলিত এসি শুধু গাড়ির সামনের অংশ ঠাণ্ডা করতে পারে। কিন্তু এই কুলার গাড়ির ভেতরের প্রতিটি কোণে বাতাস পৌঁছে দেয়। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্যাক্সিচালক আব্দুল গফুর বলেন, “এই কুলার এসির চেয়ে ভালো কাজ করে। এসি তো শুধু সামনের দিকেই কাজ করে, কিন্তু কুলার পুরো গাড়ি ঠাণ্ডা রাখে।” ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, তিনি একটি মোটা পাইপ জানালার পাশে লাগাচ্ছেন যাতে ভেতরে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়, এবং একজন সহকারী গাড়ির ছাদে বসানো ড্রাম ও ফ্যান ঠিকঠাক বসাচ্ছেন।

এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে পানিনির্ভর। দিনে দুইবার ট্যাংকে পানি ভরতে হয়। গফুর এটিকে ঝামেলা মনে করলেও কার্যকারিতার দিক থেকে সন্তুষ্ট। কারণ, এভাবে অন্তত ভয়াবহ গরমে চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্যই স্বস্তি নিশ্চিত হয়।

কান্দাহারের আরেক ট্যাক্সিচালক  মোহাম্মদ জানান, কয়েক বছর আগেই তিনি আবহাওয়ার তীব্রতা বুঝে এধরনের কুলার ব্যবহার শুরু করেন। তাঁর ভাষায়, “এই গাড়িগুলোর এসি কাজ করতো না, আর মেরামতের খরচও অনেক। তাই আমি এক টেকনিশিয়ানের সাহায্যে নিজের মতো করে একটি কুলার বানিয়ে ফেলি।” এতে তার খরচ পড়ে মাত্র তিন হাজার আফগানি।

এই কুলার যাত্রীদের কাছেও প্রশংসিত হচ্ছে। ১৯ বছর বয়সী যাত্রী  বলেন, “যখন কুলার থাকে না, তখন টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আমি গরমের জন্য সবসময় ওষুধ রাখি।” তিনি জানান, সাম্প্রতিক এক সময়ে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে তাকে স্যালাইন নিতে হয়েছিল।

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আফগানিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বসন্তকাল পার করেছে দেশটি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সতর্ক করেছে, দেশজুড়ে ভয়াবহ খরায় কৃষি ও গ্রামীণ জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আফগানিস্তানের মানবিক সংকটকে আরও গভীরতর করে তুলছে।

অন্যদিকে, ২০২১ সালের অগাস্টে তালেবান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আফগানিস্তানকে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক আলোচনার মঞ্চ থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই দেশটি, যেটি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের অন্যতম একটি রাষ্ট্র।

সব মিলিয়ে, আফগান ট্যাক্সিচালকদের এই হাতে বানানো কুলার শুধু গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ই নয়—বরং এটি এক অসহায় বাস্তবতার মধ্যে থেকেও টিকে থাকার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সরকারি সহায়তা না থাকলেও জনগণের উদ্ভাবনী ক্ষমতা যে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই অভিনব উদ্যোগ।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

তীব্র গরমে নিজ হাতে বানানো কুলারেই ভরসা আফগান চালকদের

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:০২:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের কান্দাহার শহরে যখন তাপমাত্রা প্রতিদিনই ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে যাচ্ছে, তখন রাস্তায় চলতে থাকা ট্যাক্সিগুলোর ছাদে দেখা মিলছে অদ্ভুত সব যন্ত্রপাতির—পুরনো প্লাস্টিকের ড্রাম, মোটা পাইপ, আর আঠালো টেপ দিয়ে লাগানো ফ্যান। প্রথম দেখায় অব্যবস্থাপনা মনে হলেও বাস্তবে এটি এক অসাধারণ উদ্ভাবন। আর্থিক দৈন্যতা ও ভাঙা এসির ভোগান্তি থেকে বাঁচতে কান্দাহারের ট্যাক্সিচালকেরা নিজেরাই তৈরি করে নিচ্ছেন এই হাতের বানানো এয়ার কুলার।

চালকরা বলছেন, প্রচলিত এসি শুধু গাড়ির সামনের অংশ ঠাণ্ডা করতে পারে। কিন্তু এই কুলার গাড়ির ভেতরের প্রতিটি কোণে বাতাস পৌঁছে দেয়। বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্যাক্সিচালক আব্দুল গফুর বলেন, “এই কুলার এসির চেয়ে ভালো কাজ করে। এসি তো শুধু সামনের দিকেই কাজ করে, কিন্তু কুলার পুরো গাড়ি ঠাণ্ডা রাখে।” ভিডিওচিত্রে দেখা যায়, তিনি একটি মোটা পাইপ জানালার পাশে লাগাচ্ছেন যাতে ভেতরে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়, এবং একজন সহকারী গাড়ির ছাদে বসানো ড্রাম ও ফ্যান ঠিকঠাক বসাচ্ছেন।

এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে পানিনির্ভর। দিনে দুইবার ট্যাংকে পানি ভরতে হয়। গফুর এটিকে ঝামেলা মনে করলেও কার্যকারিতার দিক থেকে সন্তুষ্ট। কারণ, এভাবে অন্তত ভয়াবহ গরমে চালক ও যাত্রী উভয়ের জন্যই স্বস্তি নিশ্চিত হয়।

কান্দাহারের আরেক ট্যাক্সিচালক  মোহাম্মদ জানান, কয়েক বছর আগেই তিনি আবহাওয়ার তীব্রতা বুঝে এধরনের কুলার ব্যবহার শুরু করেন। তাঁর ভাষায়, “এই গাড়িগুলোর এসি কাজ করতো না, আর মেরামতের খরচও অনেক। তাই আমি এক টেকনিশিয়ানের সাহায্যে নিজের মতো করে একটি কুলার বানিয়ে ফেলি।” এতে তার খরচ পড়ে মাত্র তিন হাজার আফগানি।

এই কুলার যাত্রীদের কাছেও প্রশংসিত হচ্ছে। ১৯ বছর বয়সী যাত্রী  বলেন, “যখন কুলার থাকে না, তখন টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। আমি গরমের জন্য সবসময় ওষুধ রাখি।” তিনি জানান, সাম্প্রতিক এক সময়ে অতিরিক্ত গরমে অসুস্থ হয়ে তাকে স্যালাইন নিতে হয়েছিল।

চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আফগানিস্তানের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বসন্তকাল পার করেছে দেশটি। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সতর্ক করেছে, দেশজুড়ে ভয়াবহ খরায় কৃষি ও গ্রামীণ জীবিকায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আফগানিস্তানের মানবিক সংকটকে আরও গভীরতর করে তুলছে।

অন্যদিকে, ২০২১ সালের অগাস্টে তালেবান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর আফগানিস্তানকে জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক আলোচনার মঞ্চ থেকেও বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এই দেশটি, যেটি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা বিশ্বের অন্যতম একটি রাষ্ট্র।

সব মিলিয়ে, আফগান ট্যাক্সিচালকদের এই হাতে বানানো কুলার শুধু গরম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায়ই নয়—বরং এটি এক অসহায় বাস্তবতার মধ্যে থেকেও টিকে থাকার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সরকারি সহায়তা না থাকলেও জনগণের উদ্ভাবনী ক্ষমতা যে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই অভিনব উদ্যোগ।