২০২৪ সালে জার্মানিতে জন্মহার আরও হ্রাস পেয়েছে, যা দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে এক গভীর জনসংখ্যাগত সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ফেডারেল পরিসংখ্যান অফিসের তথ্যমতে, প্রতি নারীর গড়ে সন্তান জন্মদানের হার কমে দাঁড়িয়েছে ১.৩৫, যা প্রায় দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। এই হার ২০০৬ সালের পর সবচেয়ে নিচে নামলো, যখন তা ছিল ১.৩৩।
বিশেষ করে জার্মান নাগরিকত্বধারী নারীদের মধ্যে জন্মহার আরও বেশি কমেছে। ২০২৪ সালে এই হার নেমে এসেছে ১.২৩-এ, যা ১৯৯৬ সালের ১.২২-পরবর্তী সর্বনিম্ন রেকর্ড। অন্যদিকে, জার্মানিতে বসবাসরত বিদেশি নারীদের মধ্যে প্রজনন হার তুলনামূলকভাবে বেশি—প্রতি নারী ১.৮৪ শিশু, তবে সেখানেও ২ শতাংশ হ্রাস লক্ষ্য করা গেছে। ২০১৭ সাল থেকে এই শ্রেণিতে জন্মহারের নিম্নগামী ধারা বজায় রয়েছে।
২০২৪ সালে জার্মানিতে মোট ৬,৭৭,১১৭টি শিশু জন্মগ্রহণ করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫,৮৭২ জন কম। এই হ্রাস হার ২০২৩ সালে ছিল ২% (১.৩৮ থেকে ১.৩৫), যদিও ২০২২ ও ২০২৩ সালে এটি যথাক্রমে ৮% ও ৭% ছিল—এতে বোঝা যায় হ্রাসের গতি কিছুটা শ্লথ হলেও তা অব্যাহত রয়েছে।
জার্মানির বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে জন্মহারে পার্থক্য লক্ষ্য করা গেছে। লোয়ার স্যাকসনি রাজ্যে জন্মহার সবচেয়ে বেশি—১.৪২, অন্যদিকে বার্লিন ছিল সবচেয়ে কম, মাত্র ১.২১। পশ্চিম জার্মানিতে গড় জন্মহার ১.৩৮ হলেও, পূর্ব জার্মানিতে তা ১.২৭। থুরিংজিয়ায় সবচেয়ে বড় পতন ঘটেছে, ৭% হ্রাস পেয়ে হার দাঁড়িয়েছে ১.২৪। তুলনায় দক্ষিণ-পশ্চিমের বাডেন-ওয়ার্টেমবার্গে জন্মহারের পতন ছিল সবচেয়ে কম, মাত্র ১%।
শিশুজন্মের সময় নারীদের গড় বয়স ২০২৪ সালে ছিল ৩১.৮ বছর, পুরুষদের ক্ষেত্রে ৩৪.৭ বছর। প্রথমবার মা হওয়া নারীদের গড় বয়স ছিল ৩০.৪, এবং প্রথমবার বাবাদের ক্ষেত্রে ৩৩.৩ বছর। ১৯৯১ সালের তুলনায় পিতামাতার গড় বয়স প্রায় ৪ বছর বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৭৫ সালে জন্ম নেয়া নারীরা, যারা ২০২৪ সালে তাদের প্রজনন সময়ের শেষ প্রান্তে, তারা গড়ে ১.৫৮ সন্তান জন্ম দিয়েছেন—যা ১৯৬৮ সালে জন্ম নেয়া নারীদের (১.৪৯) তুলনায় কিছুটা বেশি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনায় দেখা যায়, ২০২৩ সালে ইইউ-জুড়ে গড় প্রজনন হার ছিল ১.৩৮, যা জার্মানির সমান। বুলগেরিয়া সবচেয়ে বেশি প্রজনন হারের দেশ হিসেবে উঠে এসেছে (১.৮১), অন্যদিকে মাল্টা (১.০৬) ও স্পেন (১.১২) ছিল সর্বনিম্নের কাতারে।
এই ক্রমাগত হ্রাস পাওয়া জন্মহার জার্মানির ভবিষ্যৎ অর্থনীতি, শ্রমবাজার, পেনশন ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে চাপ বাড়াবে বলে বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন। ২.১-এর ‘প্রতিস্থাপন হার’ থেকে অনেক নিচে এই হার দীর্ঘমেয়াদে জনসংখ্যা সংকোচন ও বার্ধক্য সমাজ সৃষ্টি করতে পারে, যা দেশটির নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।