১০:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা ১০ বছর, পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে এসেছে প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদসীমা নির্ধারণ ও স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের দুটি বড় প্রস্তাব। রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত চলমান সংলাপের ১৯তম দিনে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এদিন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি-সহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় জোটকে আলোচনায় ডাকা হয়নি।

এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন—এ বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এটি আলোচনায় আনুষ্ঠানিকভাবে বলা না হলেও সকলেই প্রস্তাবটির পক্ষে মত দিয়েছেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এটি কি বিএনপির পূর্বের শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না। জবাবে সালাহউদ্দিন জানান, তাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাবটি এসেছে এবং পূর্বের অবস্থান এখনো বহাল আছে। তারা চান, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া সংবিধানে যুক্ত থাকলে তা এই আলোচনার বাইরে না যাক।

বাংলাদেশ পুলিশের জবাবদিহিতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন একটি ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাবও আলোচনায় উত্থাপিত হয় এবং এতে অংশগ্রহণকারী সব দল একমত হয়। আলী রীয়াজ বলেন, “পুলিশ কমিশনের বিষয়ে দলগুলো ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে এবং বিস্তারিত কাঠামো পরে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।”

প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের নেতৃত্বে থাকবেন একজন ৭২ বছরের নিচে অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারপতি। সদস্য সচিব হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি (৬২ বছরের নিচে)। কমিশনে সরকার দল ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে—সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার প্রতিনিধিসহ একজন হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী, একজন মানবাধিকারকর্মী এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি সদস্য হবেন।

কমিশনের সদস্যদের মধ্যে অন্তত দুইজন নারী থাকতে হবে। বাছাই কমিটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংসদের স্বরাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন হাইকোর্ট বিচারক অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব পূর্ণকালীনভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, অন্য সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবেন। তবে বৈঠকে অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব পালনে সম্মানী পেতে পারবেন।

কমিশনের কার্যক্রম, সদস্যদের দায়িত্ব, অপসারণ প্রক্রিয়া ও নীতিমালা একটি আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। নীতিগত সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মত অনুযায়ী গৃহীত হবে। পুলিশ সদস্য ও সাধারণ নাগরিক—উভয়ের অভিযোগের শুনানি ও নিষ্পত্তির দায়িত্বও কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকবে।

এই প্রস্তাবনা দুটি—প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা এবং স্বাধীন পুলিশ কমিশন—বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারে এক বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও এটি এখনো প্রস্তাবনার পর্যায়ে আছে, তবে এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী নীতিগত ভিত্তি তৈরির ইঙ্গিত দেয়।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা ১০ বছর, পুলিশ কমিশন গঠনের প্রস্তাব

প্রকাশিত হয়েছে: ০৫:৩১:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্যে এসেছে প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদসীমা নির্ধারণ ও স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের দুটি বড় প্রস্তাব। রোববার (২৭ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত চলমান সংলাপের ১৯তম দিনে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এদিন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি-সহ প্রায় ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলীয় জোটকে আলোচনায় ডাকা হয়নি।

এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন—এ বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে বলে জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, এটি আলোচনায় আনুষ্ঠানিকভাবে বলা না হলেও সকলেই প্রস্তাবটির পক্ষে মত দিয়েছেন। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, এটি কি বিএনপির পূর্বের শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না। জবাবে সালাহউদ্দিন জানান, তাদের পক্ষ থেকেই প্রস্তাবটি এসেছে এবং পূর্বের অবস্থান এখনো বহাল আছে। তারা চান, নির্বাচন কমিশন নিয়োগ প্রক্রিয়া সংবিধানে যুক্ত থাকলে তা এই আলোচনার বাইরে না যাক।

বাংলাদেশ পুলিশের জবাবদিহিতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে স্বাধীন একটি ‘পুলিশ কমিশন’ গঠনের প্রস্তাবও আলোচনায় উত্থাপিত হয় এবং এতে অংশগ্রহণকারী সব দল একমত হয়। আলী রীয়াজ বলেন, “পুলিশ কমিশনের বিষয়ে দলগুলো ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে এবং বিস্তারিত কাঠামো পরে আলোচনা করে চূড়ান্ত করা হবে।”

প্রস্তাবিত পুলিশ কমিশনের নেতৃত্বে থাকবেন একজন ৭২ বছরের নিচে অবসরপ্রাপ্ত আপিল বিভাগের বিচারপতি। সদস্য সচিব হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি (৬২ বছরের নিচে)। কমিশনে সরকার দল ও বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব থাকবে—সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার প্রতিনিধিসহ একজন হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী, একজন মানবাধিকারকর্মী এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি সদস্য হবেন।

কমিশনের সদস্যদের মধ্যে অন্তত দুইজন নারী থাকতে হবে। বাছাই কমিটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংসদের স্বরাষ্ট্রবিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং ১০ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন হাইকোর্ট বিচারক অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব পূর্ণকালীনভাবে দায়িত্ব পালন করবেন, অন্য সদস্যরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করবেন। তবে বৈঠকে অংশগ্রহণ ও দায়িত্ব পালনে সম্মানী পেতে পারবেন।

কমিশনের কার্যক্রম, সদস্যদের দায়িত্ব, অপসারণ প্রক্রিয়া ও নীতিমালা একটি আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। নীতিগত সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের মত অনুযায়ী গৃহীত হবে। পুলিশ সদস্য ও সাধারণ নাগরিক—উভয়ের অভিযোগের শুনানি ও নিষ্পত্তির দায়িত্বও কমিশনের উপর ন্যস্ত থাকবে।

এই প্রস্তাবনা দুটি—প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদসীমা এবং স্বাধীন পুলিশ কমিশন—বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কারে এক বড় অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও এটি এখনো প্রস্তাবনার পর্যায়ে আছে, তবে এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী নীতিগত ভিত্তি তৈরির ইঙ্গিত দেয়।