১২:১৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চীনে জন্ম নিলেই বছরে ৫০০ ডলার!

চীন সরকার দেশজুড়ে জন্মহার বৃদ্ধি ও জনসংখ্যা সংকট মোকাবেলায় নতুন একটি নগদ ভর্তুকি কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে। এই কর্মসূচির আওতায়, প্রতিটি নবজাতক শিশু (প্রথম সন্তানসহ) প্রতি বছর ৩,৬০০ ইউয়ান—প্রায় ৫০০ মার্কিন ডলার—পাবে, এবং তা তিন বছর বয়স পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আগে এমন ধরনের ভর্তুকি বা প্রণোদনা কেবল কিছু প্রদেশ ও শহরভিত্তিকভাবে সীমিত ছিল, এবার এই সুবিধা সারাদেশব্যাপী প্রযোজ্য হবে।

এই উদ্যোগ এসেছে এমন এক সময়, যখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে পরিচিত চীনের জনসংখ্যা অভূতপূর্ব হারে হ্রাস পাচ্ছে। সরকারিভাবে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬ সালে যেখানে চীনে ১৭.৯ মিলিয়ন শিশু জন্ম নিয়েছিল, ২০২৪ সালে সে সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯.৫৪ মিলিয়নে—অর্থাৎ মাত্র ৮ বছরে জন্মহার প্রায় ৫০% হ্রাস পেয়েছে।

এছাড়া, দেশটির গড় প্রজনন হার (fertility rate) বর্তমানে ১.২, যা একটি স্থিতিশীল জনসংখ্যা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় হার ২.১-এর অনেক নিচে। এমন হার বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশেও বিরল, এবং এটি ভবিষ্যতে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী বেড়ে যাওয়া, শ্রমশক্তির ঘাটতি ও অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করতে পারে।

চীনা সরকারের মতে, এই ভর্তুকি কর্মসূচির লক্ষ্য হলো দম্পতিদের সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক উদ্বেগ কিছুটা লাঘব করা। বিশেষ করে শহুরে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলোর জন্য এটি সহায়ক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে জনসংখ্যাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, শুধুমাত্র নগদ সহায়তা দিয়ে এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়। সন্তান লালন-পালনের ব্যয়, কর্মজীবী মায়েদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা, শিশুর যত্ন নেওয়ার জন্য সরকারি ডে-কেয়ার সেবা, আবাসন খরচ, এবং শিক্ষা খাতে চাপ—এসব বিষয়ও সমানভাবে সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে। অনেক দম্পতি মনে করেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থা সন্তান ধারণ ও লালন-পালনের জন্য যথেষ্ট অনুকূল নয়।

চীনের সরকার গত কয়েক বছর ধরে ধাপে ধাপে এক সন্তান নীতির কড়াকড়ি তুলে নিয়ে দুই সন্তান এবং পরে তিন সন্তান নীতি চালু করেছে। কিন্তু এই নীতিগত শিথিলতাও জন্মহারে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারেনি। বরং উল্টো তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সন্তান নেওয়ার আগ্রহ ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, সরকার আগামী দিনে আরও কিছু প্রকল্প চালু করতে পারে—যেমন ট্যাক্স ছাড়, মাতৃত্বকালীন দীর্ঘ ছুটি, বিনামূল্যে শিশু স্বাস্থ্যসেবা, কিংবা আবাসন ও শিক্ষা সহায়তা। তবে এই ভর্তুকি কর্মসূচিকে তারা চীনের ‘ডেমোগ্রাফিক ইমারজেন্সি’-র প্রতি প্রথম বড় প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন।

চীন এখন এমন এক বাঁকে দাঁড়িয়ে, যেখানে ভবিষ্যতের অর্থনীতি, শিল্প ও প্রযুক্তি খাত—সবই নির্ভর করছে টেকসই জনসংখ্যা বৃদ্ধির ওপর। আগামী কয়েক বছরে এই কর্মসূচি কতটা কার্যকর হয়, তা শুধু চীনের নয়, বিশ্বের জনসংখ্যা নীতির ইতিহাসেও একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকবে।

ট্যাগ

চীনে জন্ম নিলেই বছরে ৫০০ ডলার!

প্রকাশিত হয়েছে: ০৯:৩৮:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

চীন সরকার দেশজুড়ে জন্মহার বৃদ্ধি ও জনসংখ্যা সংকট মোকাবেলায় নতুন একটি নগদ ভর্তুকি কর্মসূচি চালু করতে যাচ্ছে। এই কর্মসূচির আওতায়, প্রতিটি নবজাতক শিশু (প্রথম সন্তানসহ) প্রতি বছর ৩,৬০০ ইউয়ান—প্রায় ৫০০ মার্কিন ডলার—পাবে, এবং তা তিন বছর বয়স পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আগে এমন ধরনের ভর্তুকি বা প্রণোদনা কেবল কিছু প্রদেশ ও শহরভিত্তিকভাবে সীমিত ছিল, এবার এই সুবিধা সারাদেশব্যাপী প্রযোজ্য হবে।

এই উদ্যোগ এসেছে এমন এক সময়, যখন বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ হিসেবে পরিচিত চীনের জনসংখ্যা অভূতপূর্ব হারে হ্রাস পাচ্ছে। সরকারিভাবে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, ২০১৬ সালে যেখানে চীনে ১৭.৯ মিলিয়ন শিশু জন্ম নিয়েছিল, ২০২৪ সালে সে সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯.৫৪ মিলিয়নে—অর্থাৎ মাত্র ৮ বছরে জন্মহার প্রায় ৫০% হ্রাস পেয়েছে।

এছাড়া, দেশটির গড় প্রজনন হার (fertility rate) বর্তমানে ১.২, যা একটি স্থিতিশীল জনসংখ্যা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় হার ২.১-এর অনেক নিচে। এমন হার বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশেও বিরল, এবং এটি ভবিষ্যতে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী বেড়ে যাওয়া, শ্রমশক্তির ঘাটতি ও অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি করতে পারে।

চীনা সরকারের মতে, এই ভর্তুকি কর্মসূচির লক্ষ্য হলো দম্পতিদের সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে আর্থিক উদ্বেগ কিছুটা লাঘব করা। বিশেষ করে শহুরে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলোর জন্য এটি সহায়ক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তবে জনসংখ্যাবিদ ও সমাজ বিশ্লেষকদের মতে, শুধুমাত্র নগদ সহায়তা দিয়ে এই সংকট মোকাবিলা সম্ভব নয়। সন্তান লালন-পালনের ব্যয়, কর্মজীবী মায়েদের মাতৃত্বকালীন সুবিধা, শিশুর যত্ন নেওয়ার জন্য সরকারি ডে-কেয়ার সেবা, আবাসন খরচ, এবং শিক্ষা খাতে চাপ—এসব বিষয়ও সমানভাবে সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে। অনেক দম্পতি মনে করেন, বর্তমান সমাজব্যবস্থা সন্তান ধারণ ও লালন-পালনের জন্য যথেষ্ট অনুকূল নয়।

চীনের সরকার গত কয়েক বছর ধরে ধাপে ধাপে এক সন্তান নীতির কড়াকড়ি তুলে নিয়ে দুই সন্তান এবং পরে তিন সন্তান নীতি চালু করেছে। কিন্তু এই নীতিগত শিথিলতাও জন্মহারে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারেনি। বরং উল্টো তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সন্তান নেওয়ার আগ্রহ ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, সরকার আগামী দিনে আরও কিছু প্রকল্প চালু করতে পারে—যেমন ট্যাক্স ছাড়, মাতৃত্বকালীন দীর্ঘ ছুটি, বিনামূল্যে শিশু স্বাস্থ্যসেবা, কিংবা আবাসন ও শিক্ষা সহায়তা। তবে এই ভর্তুকি কর্মসূচিকে তারা চীনের ‘ডেমোগ্রাফিক ইমারজেন্সি’-র প্রতি প্রথম বড় প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন।

চীন এখন এমন এক বাঁকে দাঁড়িয়ে, যেখানে ভবিষ্যতের অর্থনীতি, শিল্প ও প্রযুক্তি খাত—সবই নির্ভর করছে টেকসই জনসংখ্যা বৃদ্ধির ওপর। আগামী কয়েক বছরে এই কর্মসূচি কতটা কার্যকর হয়, তা শুধু চীনের নয়, বিশ্বের জনসংখ্যা নীতির ইতিহাসেও একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকবে।