১০:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ٱلْجَبَّارُ আল-জাব্বার: নিপীড়িতের আশ্রয়, অত্যাচারীর ভয়

আল্লাহ্‌র ৯৯টি গুণবাচক নামের মধ্যে আল-জাব্বার এমন একটি নাম, যার মধ্যে রয়েছে একাধারে মহাশক্তি, দয়াশীলতা ও সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের মিলন। “জাব্বার” শব্দটি আরবি “جَبْر” (জাবর) ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ “বলপূর্বক করা”, “সংশোধন করা”, বা “ভাঙা কিছু ঠিক করে দেওয়া”। এই নামটি বোঝায় যে আল্লাহ এমন এক সত্তা যিনি যা ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা, যেমন ইচ্ছা করে থাকেন—কারও কোনো ক্ষমতা নেই তাতে বাধা দেওয়ার।

তবে এই “বলপ্রয়োগ” কোনো দমন-পীড়ন নয়, বরং তা হল মহান ও হিকমতপূর্ণ শাসন। পৃথিবীতে যদি কেউ “জবরদস্তি” করে, সেটা হয় সীমালঙ্ঘন; কিন্তু আল্লাহ যখন কিছু চাপিয়ে দেন বা কোনো সিদ্ধান্ত দেন, তা হয় পরিপূর্ণ জ্ঞান, ন্যায়বিচার ও রহমতের ভিত্তিতে। কারণ তিনিই সকল কিছুর স্রষ্টা, এবং সৃষ্টির চেয়ে স্রষ্টা সর্বদাই মহান।

আল-জাব্বার এমন এক প্রভু যিনি অত্যাচারীদের ওপর জোর প্রয়োগ করে তাদের দমন করেন এবং মজলুমের পক্ষ নেন। তিনি দুর্বলকে শক্তি দেন, নিপীড়িতকে সাহস দেন, ভেঙে যাওয়া হৃদয়কে জোড়া লাগান। যখন কেউ দুঃখে ভেঙে পড়ে, তখন আল্লাহ তার অন্তরের ভিতর শান্তি দেন; কেউ যখন পথ হারায়, তখন তিনিই সেই পথ দেখান। তিনিই সেই শক্তি, যিনি ছাড়া কেউ ক্ষমতাবান নয়।

কুরআনে সূরা হাশরে আল্লাহ নিজেকে এই নাম দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন—

“হুয়াল্লাহুল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আল-মালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল ‘আজীযুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির…”
“তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি রাজাধিরাজ, পরম পবিত্র, শান্তিদাতা, নিরাপত্তাদাতা, পর্যবেক্ষক, পরাক্রমশালী, জাব্বার (জবরদস্তি ক্ষমতাবান), ও অহংমত্ত মহান।”
(সূরা হাশর, ৫৯:২৩)

এখানে আল্লাহর নামগুলো পরপর উচ্চারণ করে বোঝানো হয়েছে—তাঁর ক্ষমতা, বিশুদ্ধতা, শান্তি প্রদান ও নিরাপত্তা দেওয়া কতটা পরিপূর্ণ এবং অনন্য।

🌿 জীবনে এই নাম থেকে শিক্ষা:

আত্মসমর্পণ শিখি – আল্লাহ আল-জাব্বার, তাই আমরা যদি তাঁকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে তাঁর হুকুমে আত্মসমর্পণ করি, তাহলে জীবন সহজ ও শান্তিময় হয়।

ভাঙা মন নিয়ে তাঁর কাছেই ফিরে আসি – যখন হতাশ হই, দুঃখে ডুবে যাই, তখন তাঁর কাছে কাঁদি—কারণ তিনিই জোড়া লাগানোর মালিক।

অত্যাচারীদের ভয় নয়, আল্লাহর ভয় করি – যেকোনো শাসক বা শক্তিধর ব্যক্তি আসলে ক্ষণস্থায়ী। চূড়ান্ত পরাক্রম একমাত্র আল-জাব্বার আল্লাহর।

ভরসার জায়গা খুঁজি না, তৈরি করি – আমাদের জীবনের কোনো দুঃসময়ই শেষ কথা নয়। আল-জাব্বার সবকিছু ঠিক করে দিতে পারেন—শর্ত শুধু একটাই: আমরা যেন তাঁর উপর নির্ভর করি।

🤲 একান্ত দোয়া:

“হে আল-জাব্বার! তুমি আমার ভেঙে যাওয়া হৃদয়কে জোড়া লাগাও, তুমি আমার ব্যর্থতাগুলোতে তোমার সাহায্য দাও। আমাকে এমন একজন বানাও যে শুধু তোমার ওপর নির্ভর করে, আর কারও ওপর নয়। আমিন।”

 

ট্যাগ
জনপ্রিয় সংবাদ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ٱلْجَبَّارُ আল-জাব্বার: নিপীড়িতের আশ্রয়, অত্যাচারীর ভয়

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:৫৮:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫

আল্লাহ্‌র ৯৯টি গুণবাচক নামের মধ্যে আল-জাব্বার এমন একটি নাম, যার মধ্যে রয়েছে একাধারে মহাশক্তি, দয়াশীলতা ও সর্বোচ্চ কর্তৃত্বের মিলন। “জাব্বার” শব্দটি আরবি “جَبْر” (জাবর) ধাতু থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ “বলপূর্বক করা”, “সংশোধন করা”, বা “ভাঙা কিছু ঠিক করে দেওয়া”। এই নামটি বোঝায় যে আল্লাহ এমন এক সত্তা যিনি যা ইচ্ছা, যখন ইচ্ছা, যেমন ইচ্ছা করে থাকেন—কারও কোনো ক্ষমতা নেই তাতে বাধা দেওয়ার।

তবে এই “বলপ্রয়োগ” কোনো দমন-পীড়ন নয়, বরং তা হল মহান ও হিকমতপূর্ণ শাসন। পৃথিবীতে যদি কেউ “জবরদস্তি” করে, সেটা হয় সীমালঙ্ঘন; কিন্তু আল্লাহ যখন কিছু চাপিয়ে দেন বা কোনো সিদ্ধান্ত দেন, তা হয় পরিপূর্ণ জ্ঞান, ন্যায়বিচার ও রহমতের ভিত্তিতে। কারণ তিনিই সকল কিছুর স্রষ্টা, এবং সৃষ্টির চেয়ে স্রষ্টা সর্বদাই মহান।

আল-জাব্বার এমন এক প্রভু যিনি অত্যাচারীদের ওপর জোর প্রয়োগ করে তাদের দমন করেন এবং মজলুমের পক্ষ নেন। তিনি দুর্বলকে শক্তি দেন, নিপীড়িতকে সাহস দেন, ভেঙে যাওয়া হৃদয়কে জোড়া লাগান। যখন কেউ দুঃখে ভেঙে পড়ে, তখন আল্লাহ তার অন্তরের ভিতর শান্তি দেন; কেউ যখন পথ হারায়, তখন তিনিই সেই পথ দেখান। তিনিই সেই শক্তি, যিনি ছাড়া কেউ ক্ষমতাবান নয়।

কুরআনে সূরা হাশরে আল্লাহ নিজেকে এই নাম দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন—

“হুয়াল্লাহুল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আল-মালিকুল কুদ্দুসুস সালামুল মু’মিনুল মুহাইমিনুল ‘আজীযুল জাব্বারুল মুতাকাব্বির…”
“তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই। তিনি রাজাধিরাজ, পরম পবিত্র, শান্তিদাতা, নিরাপত্তাদাতা, পর্যবেক্ষক, পরাক্রমশালী, জাব্বার (জবরদস্তি ক্ষমতাবান), ও অহংমত্ত মহান।”
(সূরা হাশর, ৫৯:২৩)

এখানে আল্লাহর নামগুলো পরপর উচ্চারণ করে বোঝানো হয়েছে—তাঁর ক্ষমতা, বিশুদ্ধতা, শান্তি প্রদান ও নিরাপত্তা দেওয়া কতটা পরিপূর্ণ এবং অনন্য।

🌿 জীবনে এই নাম থেকে শিক্ষা:

আত্মসমর্পণ শিখি – আল্লাহ আল-জাব্বার, তাই আমরা যদি তাঁকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে তাঁর হুকুমে আত্মসমর্পণ করি, তাহলে জীবন সহজ ও শান্তিময় হয়।

ভাঙা মন নিয়ে তাঁর কাছেই ফিরে আসি – যখন হতাশ হই, দুঃখে ডুবে যাই, তখন তাঁর কাছে কাঁদি—কারণ তিনিই জোড়া লাগানোর মালিক।

অত্যাচারীদের ভয় নয়, আল্লাহর ভয় করি – যেকোনো শাসক বা শক্তিধর ব্যক্তি আসলে ক্ষণস্থায়ী। চূড়ান্ত পরাক্রম একমাত্র আল-জাব্বার আল্লাহর।

ভরসার জায়গা খুঁজি না, তৈরি করি – আমাদের জীবনের কোনো দুঃসময়ই শেষ কথা নয়। আল-জাব্বার সবকিছু ঠিক করে দিতে পারেন—শর্ত শুধু একটাই: আমরা যেন তাঁর উপর নির্ভর করি।

🤲 একান্ত দোয়া:

“হে আল-জাব্বার! তুমি আমার ভেঙে যাওয়া হৃদয়কে জোড়া লাগাও, তুমি আমার ব্যর্থতাগুলোতে তোমার সাহায্য দাও। আমাকে এমন একজন বানাও যে শুধু তোমার ওপর নির্ভর করে, আর কারও ওপর নয়। আমিন।”