ইরানকে আরও কোণঠাসা করতে তার জাহাজ পরিবহন নেটওয়ার্ক ও সংশ্লিষ্ট পরিষেবা ব্যবস্থার ওপর বৃহৎ পরিসরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) মার্কিন ট্রেজারি মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। এতে ১১৭ ব্যক্তি, কোম্পানি ও জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে, যার মধ্যে ইরানের শীর্ষ জাহাজ পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কোম্পানিও রয়েছে।
এই নিষেধাজ্ঞার অন্যতম লক্ষ্য মোহাম্মদ হোসেইন শামখানি, যিনি ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত জাহাজ পরিবহন ব্যবস্থার মূল নেতৃত্বে রয়েছেন। তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা আলী শামখানির পুত্র। ট্রেজারি কর্মকর্তারা জানান, বাবার প্রভাব কাজে লাগিয়ে তিনি ইরানের অন্যতম প্রভাবশালী জাহাজ পরিবহন সংগঠক হয়ে উঠেছেন। তার অধীনে থাকা বিশাল কন্টেইনার ও ট্যাংকার নেটওয়ার্ক আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা অতিক্রম করে তেল রপ্তানির অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমেই ইরান বছরে শত শত কোটি ডলারের তেল বিক্রি করে, যার একটি বড় অংশ যায় দেশটির সামরিক খাতে। হোসেইন খামশানি মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে এই বিক্রির সেতুবন্ধন গড়ে তোলেন এবং কার্যত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা জাহাজ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই তেল সরবরাহ নিশ্চিত করেন।
ট্রেজারির ঘোষণায় বলা হয়, নিষেধাজ্ঞায় ইরানের ১৫টি জাহাজ নির্মাণ কোম্পানি, ৫২টি জাহাজ, ১২ জন ব্যক্তি এবং ১৭টি দেশের ৫৩টি বাণিজ্যিক কোম্পানি অন্তর্ভুক্ত আছে। এই বিদেশি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ইরানের জাহাজ পরিবহন ও তেল রপ্তানির সাথে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জড়িত।
রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ট্রেজারির এক কর্মকর্তা বলেন, “২০২৫ সালের শুরুতে ইরান প্রতিদিন প্রায় ১৮ লাখ ব্যারেল তেল রপ্তানি করত, যা বর্তমানে নেমে এসেছে ১২ লাখ ব্যারেলে। এই নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে তেল বিক্রি আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।”
তবে যুক্তরাষ্ট্র আশা করছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আন্তর্জাতিক তেলের বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে না। ট্রেজারির ভাষ্য, যদি এমন কিছু ঘটে, তবে ওয়াশিংটন তাতে উৎসাহিত হবে না এবং প্রয়োজন হলে হস্তক্ষেপ করবে।
প্রসঙ্গত, গত জুনে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ‘অপারেশন মিডনাইট হ্যামার’-এ ইরানের একাধিক পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সামরিক আঘাত হানা হয়েছিল। সেই ঘটনার পর এবারই প্রথম আবারও ইরানের বিরুদ্ধে এমন একটি বড় অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিলো ওয়াশিংটন।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।