১০:০৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান। সোমবার (৪ আগস্ট) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকায় পুলিশের গুলিতে তার বাঁ হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। তাকে আগারগাঁওয়ের পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৬ বা ২৭ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে শেখ হাসিনা পঙ্গু হাসপাতালে আসেন এবং সরাসরি তার সঙ্গে কথা বলেন। শেখ হাসিনাকে তিনি “ম্যাডাম” বলে সম্বোধন করলে তিনি বলেন “আমাকে আপা বলো।” পরে শেখ হাসিনা জানতে চান, সে আন্দোলনকারী কি না, পুলিশ গুলি করেছে কি না। এরপর শেখ হাসিনা হেল্পডেস্কে গিয়ে “নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ” আদেশ দিয়ে যান বলে তিনি শুনেছেন।

আবদুল্লাহ আল ইমরান অভিযোগ করেন, যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে তার পা কেটে তাকে কারাগারে নিতে চেয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার জন্য তিনি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও তৎকালীন আইজিপি মামুনকে দায়ী করেন।

এর আগে রোববার এই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ।

গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ বিচার শুরু হয়।

এই মামলায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক অবস্থায় রয়েছেন, তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন ছিলেন। অপর আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারি বাহিনীর হাতে যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তা সত্য এবং তিনি সে বিষয়ে আদালতকে সব তথ্য দিতে প্রস্তুত।

গত ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। ১ জুলাই প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়। ১ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫টি অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল এবং শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

১৭ জুন আদালত শেখ হাসিনা ও কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করে এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা আত্মসমর্পণ না করায় অনুপস্থিতিতেই বিচার চলছে।

আলোচিত এই মামলায় জাতি তাকিয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ও সাক্ষ্যপ্রক্রিয়ার দিকে।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:৫১:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ অগাস্ট ২০২৫

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান। সোমবার (৪ আগস্ট) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন তিনি।

জবানবন্দিতে তিনি বলেন, গত বছরের ১৯ জুলাই বিজয়নগর পানির ট্যাংক এলাকায় পুলিশের গুলিতে তার বাঁ হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। তাকে আগারগাঁওয়ের পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৬ বা ২৭ জুলাই সকাল ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে শেখ হাসিনা পঙ্গু হাসপাতালে আসেন এবং সরাসরি তার সঙ্গে কথা বলেন। শেখ হাসিনাকে তিনি “ম্যাডাম” বলে সম্বোধন করলে তিনি বলেন “আমাকে আপা বলো।” পরে শেখ হাসিনা জানতে চান, সে আন্দোলনকারী কি না, পুলিশ গুলি করেছে কি না। এরপর শেখ হাসিনা হেল্পডেস্কে গিয়ে “নো ট্রিটমেন্ট নো রিলিজ” আদেশ দিয়ে যান বলে তিনি শুনেছেন।

আবদুল্লাহ আল ইমরান অভিযোগ করেন, যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে তার পা কেটে তাকে কারাগারে নিতে চেয়েছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার জন্য তিনি শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও তৎকালীন আইজিপি মামুনকে দায়ী করেন।

এর আগে রোববার এই মামলার প্রথম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মাইক্রোবাসচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ।

গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এ বিচার শুরু হয়।

এই মামলায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক অবস্থায় রয়েছেন, তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন ছিলেন। অপর আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারি বাহিনীর হাতে যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তা সত্য এবং তিনি সে বিষয়ে আদালতকে সব তথ্য দিতে প্রস্তুত।

গত ১০ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয়। ১ জুলাই প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে অভিযোগ গঠনের শুনানি শেষ হয়। ১ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫টি অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল এবং শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

১৭ জুন আদালত শেখ হাসিনা ও কামালকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ জারি করে এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা আত্মসমর্পণ না করায় অনুপস্থিতিতেই বিচার চলছে।

আলোচিত এই মামলায় জাতি তাকিয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায় ও সাক্ষ্যপ্রক্রিয়ার দিকে।