
ভারত সরকার এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স (সাবেক টুইটার)-এর মধ্যে অনলাইন স্বাধীনতা নিয়ে তীব্র উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এই প্ল্যাটফর্ম এবং নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সরকার—দুই পক্ষের অবস্থান এখন মুখোমুখি।
উত্তেজনার সূচনা ২০২১ সালে কৃষক আন্দোলনের সময়। সে সময় এক্স-এ ছড়িয়ে পড়া প্রতিবাদমূলক পোস্টগুলোকে কেন্দ্র করে মোদি সরকার কঠোর অবস্থান নেয়। সরকার দাবি করে, এসব পোস্ট ভারতের বিরুদ্ধে “ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা” ছড়াচ্ছে এবং দেশটির নিরাপত্তা ও সংহতির জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে। ফলস্বরূপ, অনেক পোস্ট সরানোর নির্দেশ দেয় ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
এক্স আংশিকভাবে কিছু পোস্ট সরিয়ে নেয়, তবে পুরোপুরি সরকারের নির্দেশ মানেনি। এতে করে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এক্স-এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি আসে। এমনকি কর্মীদের গ্রেপ্তারের সম্ভাবনার কথাও জানানো হয়।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ইলন মাস্ক বলেন, “আমরা সরকারের আদেশ মানতে বাধ্য হই—না হলে আমাদের কর্মীদের বিপদ হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি এই অনুরোধের সঙ্গে একমত নই।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু অনেক সময় সরকার আমাদের এমন কিছু করতে বলে যা এই স্বাধীনতার সম্পূর্ণ বিপরীত।”
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এসব পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে জাতীয় নিরাপত্তা ও সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে। তাদের মতে, এক্স-এ ছড়ানো কিছু পোস্ট “বিদ্বেষমূলক” ও “উসকানিমূলক”, যা দাঙ্গা কিংবা রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার ইন্ধন জোগাতে পারে।
তবে এই পরিস্থিতি শুধু এক্স বনাম ভারত সরকারের দ্বন্দ্ব নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে—ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর সরকারের কতটা নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত?
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে আইন কঠোর করছে। ভারতের সাম্প্রতিক অবস্থান সেই ধারারই অংশ। তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি অনলাইন সেন্সরশিপের ভয়ানক উদাহরণ হয়ে উঠছে, যা গণতান্ত্রিক চেতনার পরিপন্থী।
বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা এবং সরকারের নিরাপত্তা চিন্তার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করাই হবে আগামী দিনের বড় চ্যালেঞ্জ।