ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ দখলের যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল ইয়ায়েল জামির। সিএনএন-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেল আবিবে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ও নিরাপত্তা উপকমিটির সদস্যরাও। সেখানে নেতানিয়াহু সেনাপ্রধানকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “পুরো গাজা দখল আমাদের লক্ষ্য। যদি আপনার এই লক্ষ্য গ্রহণযোগ্য না হয়, তবে দায়িত্ব ছেড়ে দিন।”
সেনাপ্রধান ইয়ায়েল জামির জবাবে বলেন, “এটা একটি মারাত্মক ভুল হবে। পুরো গাজা দখল মানে দীর্ঘমেয়াদে সেখানে আমাদের সেনাবাহিনীর অবস্থান নিশ্চিত করা, যা হামাসের মোকাবিলায় আমাদের দুর্বল করে তুলবে। এখনো হামাসের ক্ষমতা শেষ হয়নি, আর যেসব জিম্মি রয়েছে—তাদের জীবন আরও ঝুঁকিতে পড়বে।”
তিনি আরও জানান, টানা অভিযানের কারণে সেনাবাহিনীর অনেকে ক্লান্ত, মানসিকভাবে বিধ্বস্ত এবং আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। রিজার্ভ ফোর্স দিয়েই বর্তমানে গাজার দখলকৃত অঞ্চলগুলো সামলাতে হচ্ছে। এ অবস্থায় পূর্ণ দখল সম্ভব নয়।
জেনারেল জামির জানান, গাজার প্রায় ৭৫ শতাংশ এলাকা বর্তমানে আইডিএফের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু মূল লক্ষ্য—হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা—এখনও অর্জিত হয়নি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় অভিযানে নামে। প্রায় ২২ মাসের অভিযানে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী, শিশু ও বেসামরিক মানুষ। আহত প্রায় দেড় লাখ। গাজা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
সামরিক লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় আইডিএফের ভেতরে নেতানিয়াহুর সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিমত বাড়ছে। অনেক সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। সম্প্রতি প্রাক্তন ২০০ সেনা কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়ে নেতানিয়াহুর ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকার যদিও সেনাবাহিনীর ভিন্নমতকে খোলাখুলি স্বীকার করছে না, তবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক্সে দেওয়া বিবৃতিতে বলেন, “সেনাপ্রধানের মতপ্রকাশের অধিকার রয়েছে। তবে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেসব সিদ্ধান্ত নেয়, তা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সেনাবাহিনীর।”
এই ঘটনায় ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের মধ্যে দূরত্ব নতুন মাত্রা পেল।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।