দিল্লির লালগোয়ায় ভুয়া দূতাবাসের ঘটনায় ঠেকা না দিয়ে এবার উত্তরপ্রদেশের নয়ডা থেকে এক ভুয়া 'পুলিশ অফিস' উন্মোচিত হয়েছে। নয়ডা পুলিশ এই মিথ্যা সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতরা সবাই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা এবং তাদের ‘মাথা’ বিভাস অধিকারী, যিনি একসময় পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা ছিলেন।
বিভাস অধিকারীর নাম পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতেও জড়িয়ে ছিল। নয়ডা পুলিশের তল্লাশিতে ভুয়া থানায় তৈরি করা পুলিশের প্রতীক, পরিচয়পত্র, সিল, প্যাডসহ নানা জাল নথি উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ভুয়া সংস্থার নাম ছিল ‘ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ অ্যান্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো’, যার একটি ওয়েবসাইটও ছিল। তারা ভারতের পুলিশের লাল-নীল রঙ ব্যবহার করে সাইনবোর্ড বানিয়েছিল এবং ২০২৫ সালে নিজেদের সংস্থা রেজিস্ট্রি করিয়েছিল। ওয়েবসাইটে নিজেদের ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ তদন্ত সংস্থা’ হিসেবে দাবি করলেও, এ সংস্থাগুলোর বেশিরভাগই সাধারণ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং এর কোনোটিই আসল অপরাধ তদন্তের ক্ষমতা রাখে না।
নয়ডার সেন্ট্রাল জোনের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার শক্তিমোহন অবস্থী জানিয়েছেন, ধৃতরা জাল পরিচয় দিয়ে সরকারি কর্মকর্তা সেজে সমান্তরাল ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল। তাঁদের মধ্যে বিভাস অধিকারীর ছেলে রয়েছেন। পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়ে জুন মাসের শুরুতে ওই অফিসের উপর নজর দেয় এবং তদন্ত শুরু করে। সেখানে ভিজিটিং কার্ড, পরিচয়পত্র, চেকবই ও অন্যান্য নথি উদ্ধার হয়।
ধৃতরা নিজেদের পুলিশ কর্মী পরিচয় দিয়ে অনুদান সংগ্রহ করত, যা আসলে চাঁদাবাজি ছিল। পুলিশ অভিযানকালে ১৭টি স্ট্যাম্প সিল, নয়টি পরিচয়পত্র, ছয়টি এটিএম কার্ড, নয়টি মোবাইল ফোন এবং নগদ অর্থ জব্দ করা হয়। অফিস খোলার দশকের মধ্যে তারা বেশ কয়েকজনকে টার্গেট করেছিল।
মূল অভিযুক্ত বিভাস অধিকারীর বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার নলহাটিতে। তিনি দীর্ঘদিন তৃণমূল কংগ্রেসের নলহাটি – দুই নম্বর ব্লকের সভাপতি ছিলেন, তবে ২০২১ সালের ভোটের আগে দল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। সেই বছর তিনি নিজের একটি দল গঠন করেন এবং সাতজন প্রার্থী দিয়েছিলেন বিধানসভা নির্বাচনে। তার মালিকানাধীন একটি শিক্ষক-শিক্ষণ কলেজও রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ঘটেছিল, তার তদন্তেও বিভাস অধিকারীর নাম জড়িত রয়েছে। প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জী, যিনি বর্তমানে জেলখানায় আছেন, তার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই) ও এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট তার বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি চালিয়েছে। তিনি ‘বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং কলেজ অ্যাসোসিয়েশন’এর সভাপতি ছিলেন।
নয়ডা পুলিশ এই জালিয়াতি ও সরকারি নথির অপব্যবহার সংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।