বাংলাদেশ এখন পুরোপুরি নির্বাচনমুখী। রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ বাড়ছে প্রতিদিন। দলগুলো একদিকে যেমন ভোটারদের কাছে ধরনা দিচ্ছে, অন্যদিকে সমীকরণ মিলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে সম্ভাব্য জোট নিয়ে। প্রকাশ্যে অনেকে নির্বাচন বর্জনের হুমকি দিলেও ভেতরের খেলা ভিন্ন—শেষ পর্যন্ত সবাই ভোটের মাঠেই থাকবে বলে সংশ্লিষ্টদের দৃঢ় বিশ্বাস। কারণ গণতন্ত্রে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো নির্বাচন।
বর্তমানে জাতীয় রাজনীতিতে তিনটি সম্ভাব্য জোটই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রথমত, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট, যেখানে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক ১২ দল, সমমনা জোট ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ইতোমধ্যে একসঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছে। এর পাশাপাশি গণতন্ত্র মঞ্চ, এবি পার্টি, এনসিপি ও গণ-অধিকার পরিষদকে ভেড়ানোর চেষ্টা চলছে। তবে একটি বিষয় একেবারে স্পষ্ট—বিএনপি কোনো অবস্থাতেই জামায়াতকে সঙ্গে নেবে না।
দ্বিতীয় জোটের কেন্দ্রবিন্দু জামায়াতে ইসলামী। তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ (চরমোনাই পীর), খেলাফত মজলিস ও হেফাজতের একটি অংশকে নিয়ে আলাদা ইসলামী জোট গড়ার চেষ্টা করছে। যদিও হেফাজতের ভেতরে বিভাজন থাকায় সবাই একসঙ্গে যাবে কি না তা অনিশ্চিত।
তৃতীয় শক্তি হিসেবে নড়েচড়ে বসেছে জাতীয় পার্টি। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের ছায়াতলে থাকলেও তারা এখন নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে সচেষ্ট। বিশেষ করে রংপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও খুলনা অঞ্চলে তাদের উপস্থিতি বিএনপি বা জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোটের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
নির্বাচনের মাঠ গরম করার পাশাপাশি আসন ভাগাভাগি নিয়েই মূল লড়াই। বিএনপি সর্বোচ্চ ৬০ আসন জোটসঙ্গীদের ছাড়তে রাজি হলেও বাস্তবে ১৭টির বেশি ছাড়তে চায় না। এনসিপি ৩০ আসনের দাবি জানাচ্ছে, আর জামায়াত চাইছে কমপক্ষে ৫০টি। দাবি পূরণ না হওয়ায় জামায়াত নির্বাচনে না যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব আসলে কৌশল—আসন সমঝোতায় চাপ তৈরি করার জন্যই এমন বক্তব্য আসছে।
বিএনপি এখন স্পষ্টভাবে জামায়াত থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে। যুগপৎ আন্দোলনে শরিক অন্য দলগুলোকে গুরুত্ব দিলেও জামায়াতকে জোটে না নেবার সিদ্ধান্ত প্রায় চূড়ান্ত। এ কারণেই জামায়াত নিজেদের আলাদা ইসলামী জোট গড়তে তৎপর হয়েছে।
আদালতের এক আদেশে জি এম কাদেরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জাতীয় পার্টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। তাদের সক্রিয়তা হঠাৎ বেড়ে যাওয়াকে অনেকেই সরকারের কৌশল বলেই মনে করছেন। আওয়ামী লীগের নিষ্ক্রিয় সমর্থক ও ভাসমান ভোট ব্যাংককে পুঁজি করে জাতীয় পার্টিকে বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর মতে, যারা নির্বাচনে যাবে না বলছে তারাও শেষ পর্যন্ত ভোটে অংশ নেবে। কারণ গণতন্ত্রে উত্তরণের একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। বিএনপিকে বড় দল হিসেবে জোটসঙ্গীদের আরও ছাড় দিতে হতে পারে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে জোটের রাজনীতি এখন তুঙ্গে। আসন বণ্টন নিয়ে দর-কষাকষি, জোট গঠন নিয়ে আলোচনা, প্রকাশ্যে না যাওয়ার হুমকি—সবই শেষ পর্যন্ত ভোটের কৌশল। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কোন দল কোন জোটে দাঁড়াবে, সেটিই এখন সময়ের বড় প্রশ্ন। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—সবচেয়ে জটিল হিসাব-নিকাশ হবে আসন ভাগাভাগি নিয়েই।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।