১১:০০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গৃহযুদ্ধ চললেও জান্তা সরকার ঘোষণা দিল নির্বাচনের

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার দেশটির বহুল প্রতিশ্রুত জাতীয় নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এক বিবৃতিতে এ তারিখ প্রকাশ করা হয়। তবে দেশজুড়ে চলমান গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিরোধীদের প্রতিরোধের মধ্যে এই নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা ‘প্রহসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

২০২১ সালে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দখল করে সেনাবাহিনী। সেই সময় ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলে সেনা, কিন্তু এর প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে এবং বিদ্রোহী ও গেরিলা গোষ্ঠীর কাছে অনেক অঞ্চল হারিয়েছে জান্তা। এসব অঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠনগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা ভোটকেন্দ্র স্থাপন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের প্রকৃত লক্ষ্য হলো সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের ক্ষমতা ধরে রাখা। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘‘এ নির্বাচন শুধুমাত্র সামরিক স্বৈরশাসকদের ক্ষমতায় রাখার জন্য, জনগণের জন্য এর কোনো গুরুত্ব নেই।’’

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরাও নির্বাচনকে প্রহসন আখ্যা দিয়েছেন। দেশটিতে কয়েক বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, অর্ধেকের বেশি মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়েছেন এবং ৩৫ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

সামরিক জান্তা জানিয়েছে, দেশের সংঘাত শেষ করার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, এবং নগদ অর্থ পুরস্কারেরও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে গণতন্ত্রপন্থি নেতা অং সান সু চি কারাগারে বন্দি আছেন এবং ক্ষমতাচ্যুত বিরোধীদলীয় অনেক আইনপ্রণেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ বর্জন করেছেন।

মিয়ানমারের ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ‘‘২৮ ডিসেম্বর, রোববার সংসদীয় প্রত্যেক আসনের জন্য বহু দলীয় গণতান্ত্রিক সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী ধাপগুলোর তারিখ পরে ঘোষণা করা হবে।’’

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনের সময় দেশে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা আরও বাড়তে পারে। সাম্প্রতিক আইন অনুযায়ী নির্বাচনের সমালোচক বা বিক্ষোভকারীদের সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ভোটকেন্দ্র বা ভোটকর্মীদের ক্ষতি করলে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

বিদ্রোহী ও জান্তাবিরোধী গোষ্ঠীগুলো ২০২৩ সালের শেষ দিকে সমন্বিত হামলা চালিয়ে দেশটির কিছু এলাকা দখল করে। সাড়া হিসেবে সেনাবাহিনীও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং বাধ্যতামূলক সৈন্য নিয়োগ কার্যক্রম চালু করেছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনকে নিরাপদ ও স্বতন্ত্রভাবে পরিচালনা করা কঠিন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

ট্যাগ

গৃহযুদ্ধ চললেও জান্তা সরকার ঘোষণা দিল নির্বাচনের

প্রকাশিত হয়েছে: ১১:০৬:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫

মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার দেশটির বহুল প্রতিশ্রুত জাতীয় নির্বাচন আগামী ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এক বিবৃতিতে এ তারিখ প্রকাশ করা হয়। তবে দেশজুড়ে চলমান গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিরোধীদের প্রতিরোধের মধ্যে এই নির্বাচনকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা ‘প্রহসন’ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

২০২১ সালে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দখল করে সেনাবাহিনী। সেই সময় ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তোলে সেনা, কিন্তু এর প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি। অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ চলতে থাকে এবং বিদ্রোহী ও গেরিলা গোষ্ঠীর কাছে অনেক অঞ্চল হারিয়েছে জান্তা। এসব অঞ্চল নিয়ন্ত্রণকারী সংগঠনগুলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা ভোটকেন্দ্র স্থাপন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের প্রকৃত লক্ষ্য হলো সেনাপ্রধান মিন অং হ্লেইংয়ের ক্ষমতা ধরে রাখা। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘‘এ নির্বাচন শুধুমাত্র সামরিক স্বৈরশাসকদের ক্ষমতায় রাখার জন্য, জনগণের জন্য এর কোনো গুরুত্ব নেই।’’

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরাও নির্বাচনকে প্রহসন আখ্যা দিয়েছেন। দেশটিতে কয়েক বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের ফলে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, অর্ধেকের বেশি মানুষ দারিদ্র্যের কবলে পড়েছেন এবং ৩৫ লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

সামরিক জান্তা জানিয়েছে, দেশের সংঘাত শেষ করার একমাত্র পথ হলো নির্বাচন। বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে অস্ত্র জমা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, এবং নগদ অর্থ পুরস্কারেরও ঘোষণা করা হয়েছে। তবে গণতন্ত্রপন্থি নেতা অং সান সু চি কারাগারে বন্দি আছেন এবং ক্ষমতাচ্যুত বিরোধীদলীয় অনেক আইনপ্রণেতা নির্বাচনে অংশগ্রহণ বর্জন করেছেন।

মিয়ানমারের ইউনিয়ন নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ‘‘২৮ ডিসেম্বর, রোববার সংসদীয় প্রত্যেক আসনের জন্য বহু দলীয় গণতান্ত্রিক সাধারণ নির্বাচনের প্রথম ধাপ অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তী ধাপগুলোর তারিখ পরে ঘোষণা করা হবে।’’

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, নির্বাচনের সময় দেশে সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা আরও বাড়তে পারে। সাম্প্রতিক আইন অনুযায়ী নির্বাচনের সমালোচক বা বিক্ষোভকারীদের সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ভোটকেন্দ্র বা ভোটকর্মীদের ক্ষতি করলে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।

বিদ্রোহী ও জান্তাবিরোধী গোষ্ঠীগুলো ২০২৩ সালের শেষ দিকে সমন্বিত হামলা চালিয়ে দেশটির কিছু এলাকা দখল করে। সাড়া হিসেবে সেনাবাহিনীও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে এবং বাধ্যতামূলক সৈন্য নিয়োগ কার্যক্রম চালু করেছে। এ পরিস্থিতিতে নির্বাচনকে নিরাপদ ও স্বতন্ত্রভাবে পরিচালনা করা কঠিন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।