
নবুয়তের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তা কারও মুক্তির নিশ্চয়তা নয়—এ সত্য স্পষ্ট করে দিয়েছে কোরআন। পবিত্র গ্রন্থে হজরত নুহ (আ.) ও হজরত লুত (আ.)-এর স্ত্রীর উদাহরণ তুলে ধরে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সতর্ক করেছেন।
হজরত নুহ (আ.) দীর্ঘ নয়শ বছর তাঁর জাতিকে আল্লাহর পথে ডাকেন। অসংখ্য কষ্ট-নিপীড়ন সহ্য করেও সত্য প্রচার থেকে বিরত হননি। কিন্তু তাঁর স্ত্রী বিশ্বাসের বদলে অবিশ্বাস বেছে নেন। স্বামীকে “পাগল” আখ্যা দেন, তাঁর গোপন কথা শত্রুদের কাছে ফাঁস করে দেন। শেষপর্যন্ত যখন আল্লাহ তায়ালা অবাধ্য জাতিকে মহাপ্লাবনে ধ্বংস করেন, তখন সেই শাস্তি থেকে বাঁচতে পারেননি নুহ (আ.)-এর অবিশ্বাসী স্ত্রীও।
একই পরিণতি ঘটে হজরত লূত (আ.)-এর স্ত্রীর ক্ষেত্রে। লুত (আ.)-এর জাতি এমন অশ্লীলতা ও অশুভ কাজে লিপ্ত হয়েছিল, যা মানবসভ্যতার ইতিহাসে নজিরবিহীন। সমকামিতা, প্রবৃত্তিপূজা ও সীমাহীন অপকর্ম তাদের সমাজকে কলুষিত করেছিল। লুত (আ.)-এর স্ত্রীও সেই অন্যায়ের প্রতি সমর্থনশীল ছিলেন এবং গোপনে শত্রুদের সাহায্য করতেন। আকাশ থেকে যখন আল্লাহর আজাব নেমে আসে—পাথরের বৃষ্টি ও ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে পুরো জাতি নিশ্চিহ্ন হয়, তখন লুত (আ.)-এর স্ত্রীও সেই পরিণতি থেকে বাঁচতে পারেননি।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন—
“আল্লাহ কাফেরদের জন্য নুহের স্ত্রী ও লুতের স্ত্রীকে দৃষ্টান্ত হিসাবে পেশ করেছেন। তারা উভয়েই আমার দু’জন সৎকর্মশীল বান্দার বিবাহাধীন ছিল; কিন্তু তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে আল্লাহর পাকড়াওয়ের সামনে তারা তাদের কোনো কাজে আসেনি। আর তাদেরকে বলা হল, (জাহান্নামে) প্রবেশকারীদের সাথে তোমরাও জাহান্নামে প্রবেশ কর।” (সুরা তাহরীম, আয়াত : ১০)
শিক্ষা: আত্মীয়তা নয়, ঈমানই মূল
এই আয়াত মানুষকে স্মরণ করিয়ে দেয়—আল্লাহর কাছে মুক্তির একমাত্র শর্ত হলো ঈমান ও সৎকর্ম। পারিবারিক মর্যাদা, নবীর নিকটবর্তী সম্পর্ক কিংবা সামাজিক অবস্থান কারও মুক্তির নিশ্চয়তা নয়।
আল্লাহর বিচারের দিনে রক্ষা পাবে কেবল সেই ব্যক্তিই, যে ঈমান ও আমল নিয়ে তাঁর কাছে হাজির হবে।