বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)-এর মধ্যে ২৫-২৮ আগস্ট অনুষ্ঠিত ৫৬তম মহাপরিচালক পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলন আজ যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মাধ্যমে শেষ হয়েছে। সম্মেলনে সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিক কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশি নাগরিকদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা ও আহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। উভয় পক্ষ আন্তঃসীমান্তে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে একমত হয়।
সম্মেলনে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ২১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং বিএসএফের মহাপরিচালক শ্রী দালজিৎ সিং চৌধুরীর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। সীমান্ত হত্যার পুনরাবৃত্তি রোধে বিএসএফ অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দেয় এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাতের টহল জোরদারের সিদ্ধান্ত জানায়।
উভয়পক্ষ যৌথভাবে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সীমান্তের অলঙ্ঘনীয়তা সম্পর্কে জনসচেতনতা এবং অপরাধীদের আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়। বিজিবি প্রধান বিএসএফ কর্তৃক ভারতীয় ও বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ-ইন নিয়ে উদ্বেগ জানান এবং নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণে আহ্বান জানান। বিএসএফ প্রধান ভারতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আশ্বাস দেন।
সীমান্তে মাদক, অস্ত্র, স্বর্ণ, জাল মুদ্রা ও চোরাচালান প্রতিরোধে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ‘সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা’ আরও জোরদারের সিদ্ধান্ত হয়। সীমান্তবর্তী জনগণকে সীমান্ত আইন লঙ্ঘন থেকে বিরত রাখতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও আইন প্রয়োগে একমত হয় উভয়পক্ষ।
সীমান্তে ১৫০ গজের মধ্যে পূর্বানুমোদন ছাড়া উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে একমত হয় দুই পক্ষ। অভিন্ন নদীগুলোর তীরে অননুমোদিত কাজ বন্ধ, যৌথ নদী কমিশন অনুমোদিত প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং দহগ্রামের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ দ্রুত শেষ করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিষয়ে রিয়েল-টাইম তথ্য আদান-প্রদান এবং সীমান্তে স্থায়ী পিলার স্থাপন, নদী এলাকা সীমারেখা নির্ধারণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
আকাশসীমা লঙ্ঘন রোধে রিয়েল-টাইম ফ্লাইট তথ্য শেয়ারের সিদ্ধান্ত হয়। মিডিয়ার মাধ্যমে গুজব ও অপপ্রচার বন্ধে দুই দেশের গণমাধ্যমকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেবে দুই পক্ষ।
সম্মেলনের শেষে উভয় মহাপরিচালক আলোচনার ফলাফল নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সীমান্ত রক্ষায় যৌথভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।