মানুষের জীবনে ভালো ও মন্দ উভয় শক্তির প্রভাব বিদ্যমান। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, ফেরেশতা মানুষকে সৎপথে আহ্বান করে, আর শয়তান তাকে ভুল পথে টানতে চেষ্টা করে। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বারবার সতর্ক করা হয়েছে শয়তানের ধোঁকা ও কুমন্ত্রণার ব্যাপারে।

🔸 শয়তানের প্রতিশ্রুতি ও ধোঁকা

আল্লাহ তায়ালা কোরআনে স্পষ্টভাবে বলেছেন,

“আমি অবশ্যই তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব; তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করব… আল্লাহর পরিবর্তে কেউ শয়তানকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করলে, সে স্পষ্টতই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
📖 (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১১৯)

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট হয়, শয়তানের প্রধান কাজ হলো মানুষকে বিভ্রান্ত করা এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করতে উদ্বুদ্ধ করা।

🔸 হাদিসে এসেছে শয়তানের কুমন্ত্রণা প্রসঙ্গে

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন—

“মানুষের ওপর শয়তানের প্রভাব রয়েছে। শয়তান মানুষকে অমঙ্গলের ভয় দেখায় এবং সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আর ফেরেশতা শুভসান্ত্বনা ও সত্যের প্রতি সমর্থন প্রদান করে। যে শয়তানের কুমন্ত্রণা অনুভব করে, সে যেন আল্লাহর কাছে আশ্রয় চায়।”
📚 (তিরমিজি)

আরেকটি হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন—

“শয়তান মানুষকে এমন প্রশ্ন করতে থাকে— কে সৃষ্টি করেছে এটা, কে সৃষ্টি করেছে ওটা? তারপর এক পর্যায়ে সে বলে, ‘আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে?’ তখন মুসলমানের উচিত বিতর্ক বন্ধ করা এবং শয়তানের ধোঁকা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা।”
📚 (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

🔸 কী করণীয় শয়তানের কুমন্ত্রণা এলে?

ইসলাম ধর্ম শিখিয়েছে, শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা পেতে নিচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত—

✅ আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা

“আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম” — এই দোয়াটি পাঠ করা অত্যন্ত উপকারী।

✅ সুরা নাস পাঠ করা

“…সেই কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে, যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে…”
📖 (সুরা নাস, আয়াত ১-৬)

✅ সন্দেহজনক বিতর্ক এড়িয়ে চলা

দ্বিধা বা সন্দেহমূলক চিন্তা মনে এলে তা নিয়ে বিতর্ক না করে সাথে সাথে আল্লাহর স্মরণে মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে।

✅ ভালো কাজ ও আল্লাহর প্রশংসায় লিপ্ত থাকা

এতে শয়তানের প্রবেশের সুযোগ কমে যায় এবং আত্মা শান্তিতে থাকে।

শয়তানের কুমন্ত্রণা হঠাৎ করেই মানুষের অন্তরে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু একজন ঈমানদার ব্যক্তি যদি সচেতন থাকে, কোরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করে এবং আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায়, তবে সে অবশ্যই এই ধোঁকা থেকে রক্ষা পেতে পারে।

🕋 ইসলাম মানুষের জন্য দিকনির্দেশনা, আর সেই দিকনির্দেশনা অনুসরণ করলেই অন্তরের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।