০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ক্যারিবিয়ান সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, ভেনেজুয়েলায় হামলার শঙ্কা

ক্যারিবিয়ান সাগরে মার্কিন সামরিক শক্তির উপস্থিতি ঘিরে লাতিন আমেরিকায় নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশকে সরাসরি সামরিক হামলার টার্গেট বানিয়েছে। তিনি দাবি করেন, আটটি যুদ্ধজাহাজ ও এক হাজার দুইশ মিসাইল নিয়ে মার্কিন সেনারা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। এ পরিস্থিতিকে তিনি গত এক শতাব্দীর মধ্যে ভেনেজুয়েলার জন্য সবচেয়ে বড় সামরিক হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন। মাদুরোর অভিযোগ, মাদক চোরাচালান ঠেকানোর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আসলে সরকার পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে এবং এজন্য সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে।

প্রেসিডেন্ট মাদুরো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সামরিক হুমকি দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ভেনেজুয়েলা যেকোনো আগ্রাসন মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এরই মধ্যে সীমান্ত ও উপকূলীয় এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং সাধারণ জনগণকে আধাসামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তার মতে, ভেনেজুয়েলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশটির প্রতিটি নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, ভেনেজুয়েলা মাদক চোরাচালানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এবং প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সরাসরি এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলা থেকে পরিচালিত মাদক পাচার যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে। যদিও এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হলো, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবেই ক্যারিবিয়ান সাগরে তাদের এ সামরিক উপস্থিতি।

বর্তমানে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে এজিস গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস গ্র্যাভলি ও ইউএসএস জেসন ডানহাম। এছাড়া ইউএসএস স্যাম্পসন ডেস্ট্রয়ার এবং ইউএসএস লেক এরি ক্রুজারও অবস্থান করছে লাতিন আমেরিকার উপকূলের কাছে। এএফপি জানিয়েছে, খুব শিগগিরই এ অঞ্চলে আরও জাহাজ যোগ হতে পারে এবং চার হাজার নাবিক ও মার্কিন মেরিন নিয়ে অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজও মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভেনেজুয়েলার মাটিতে সেনা নামানোর ঘোষণা দেয়নি।

মাদুরোকে দুর্বল করার অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন গত আগস্টে তাকে ধরিয়ে দিতে ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। এর আগে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার মাদক পাচারকারী চক্র ও অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ভেনেজুয়েলা সরকার মনে করছে, এসব পদক্ষেপ আসলে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চায়।

ক্যারিবিয়ান সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি শুধু ভেনেজুয়েলাই নয়, পুরো লাতিন আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশকে নড়বড়ে করে তুলছে। অনেকের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের চাপ প্রয়োগ কূটনীতির সর্বশেষ ধাপ, যার মাধ্যমে মাদুরোকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা এবং তার সরকারের পতন ঘটানোই মূল লক্ষ্য। অন্যদিকে ভেনেজুয়েলার বক্তব্য, দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা সর্বোচ্চ মূল্য দিতে প্রস্তুত।

ট্যাগ

ক্যারিবিয়ান সাগরে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ, ভেনেজুয়েলায় হামলার শঙ্কা

প্রকাশিত হয়েছে: ০৯:৪১:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ক্যারিবিয়ান সাগরে মার্কিন সামরিক শক্তির উপস্থিতি ঘিরে লাতিন আমেরিকায় নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশকে সরাসরি সামরিক হামলার টার্গেট বানিয়েছে। তিনি দাবি করেন, আটটি যুদ্ধজাহাজ ও এক হাজার দুইশ মিসাইল নিয়ে মার্কিন সেনারা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছে। এ পরিস্থিতিকে তিনি গত এক শতাব্দীর মধ্যে ভেনেজুয়েলার জন্য সবচেয়ে বড় সামরিক হুমকি বলে উল্লেখ করেছেন। মাদুরোর অভিযোগ, মাদক চোরাচালান ঠেকানোর অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্র আসলে সরকার পরিবর্তনের পরিকল্পনা করছে এবং এজন্য সামরিক শক্তি প্রদর্শন করছে।

প্রেসিডেন্ট মাদুরো এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সামরিক হুমকি দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্টভাবে সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তিনি হুঁশিয়ারি দেন, ভেনেজুয়েলা যেকোনো আগ্রাসন মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এরই মধ্যে সীমান্ত ও উপকূলীয় এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং সাধারণ জনগণকে আধাসামরিক বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তার মতে, ভেনেজুয়েলার স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দেশটির প্রতিটি নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, ভেনেজুয়েলা মাদক চোরাচালানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে এবং প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো সরাসরি এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ অনুযায়ী, ভেনেজুয়েলা থেকে পরিচালিত মাদক পাচার যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করছে। যদিও এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটন কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। তবুও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান হলো, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবেই ক্যারিবিয়ান সাগরে তাদের এ সামরিক উপস্থিতি।

বর্তমানে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে এজিস গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস গ্র্যাভলি ও ইউএসএস জেসন ডানহাম। এছাড়া ইউএসএস স্যাম্পসন ডেস্ট্রয়ার এবং ইউএসএস লেক এরি ক্রুজারও অবস্থান করছে লাতিন আমেরিকার উপকূলের কাছে। এএফপি জানিয়েছে, খুব শিগগিরই এ অঞ্চলে আরও জাহাজ যোগ হতে পারে এবং চার হাজার নাবিক ও মার্কিন মেরিন নিয়ে অতিরিক্ত যুদ্ধজাহাজও মোতায়েনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভেনেজুয়েলার মাটিতে সেনা নামানোর ঘোষণা দেয়নি।

মাদুরোকে দুর্বল করার অংশ হিসেবে ওয়াশিংটন গত আগস্টে তাকে ধরিয়ে দিতে ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করে। এর আগে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার মাদক পাচারকারী চক্র ও অপরাধী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ভেনেজুয়েলা সরকার মনে করছে, এসব পদক্ষেপ আসলে একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চায়।

ক্যারিবিয়ান সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি শুধু ভেনেজুয়েলাই নয়, পুরো লাতিন আমেরিকার ভূ-রাজনৈতিক পরিবেশকে নড়বড়ে করে তুলছে। অনেকের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের চাপ প্রয়োগ কূটনীতির সর্বশেষ ধাপ, যার মাধ্যমে মাদুরোকে আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করা এবং তার সরকারের পতন ঘটানোই মূল লক্ষ্য। অন্যদিকে ভেনেজুয়েলার বক্তব্য, দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তারা সর্বোচ্চ মূল্য দিতে প্রস্তুত।