০৭:৫৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রেনে বেইজিং পৌঁছালেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন

সাঁজোয়া ট্রেনে চেপে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজের এক দিন আগে মঙ্গলবার তিনি বেইজিং পৌঁছান। সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করার কথা রয়েছে কিমের।

২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে খুব কমই বিদেশ সফরে গেছেন কিম জং উন। এর মধ্যে সর্বাধিকবার তিনি সফর করেছেন চীনে। অন্তত চারবার বেইজিং সফরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার, রাশিয়া সফর করেছেন মাত্র দু’বার। সবচেয়ে ব্যতিক্রমী সফর ছিল ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে, যেখানে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এরপর ২০১৯ সালে হ্যানয়ে তাদের আরেকটি বৈঠক হয়। এছাড়া দুইবার দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তের যৌথ নিরাপত্তা অঞ্চলেও গেছেন তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, কিম সাধারণত বহুপাক্ষিক আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন না, কারণ সেখানে রাজনৈতিক বার্তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এই সফরকে একটি অস্বাভাবিক ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ক্রিস্টোফার গ্রিন বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক আর যুদ্ধবিমানে ঠাসা কুচকাওয়াজে কিম, শি ও পুতিনের একসঙ্গে উপস্থিতি মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক ব্যবস্থার বিকল্প এক চিত্র তুলে ধরবে।

সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির জেমস চার মনে করেন, বেইজিংয়ের এই কুচকাওয়াজ মূলত জাপান ও পশ্চিমা ব্লকের উদ্দেশে শক্তিশালী বার্তা বহন করছে। কিমের উপস্থিতি এই প্রচারণাকে একটি ‘ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট’-এর রূপ দিচ্ছে। একইসঙ্গে দেশীয় রাজনীতিতেও এটি কিমের জন্য একটি সাফল্য, কারণ এর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার জনগণের কাছে তিনি দেখাতে চাইছেন—আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকলেও চীন ও রাশিয়ার কাছে তাদের গুরুত্ব রয়েছে।

তবে চীন ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক সবসময় অস্বস্তিকর। ক্রিস্টোফার গ্রিনের মতে, চীন আসলে উত্তর কোরিয়াকে একটি বাফার রাষ্ট্র ও কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দেখে, পাশাপাশি সস্তা শ্রমের উৎস হিসেবেও ব্যবহার করে। চীনের প্রত্যাশা হলো, উত্তর কোরিয়া যেন খুব বেশি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করে। কিন্তু বাস্তবে এ প্রত্যাশা সবসময় পূরণ হয়নি।

অন্যদিকে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাস্টিন হেস্টিংস বলেন, কিমের স্থায়ী নীতি হলো চীনের প্রভাব কমিয়ে অন্য উৎস থেকে সমর্থন ও নিরাপত্তা খোঁজা। গত বছর রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যার আওতায় উত্তর কোরিয়ার সেনারা ইউক্রেন যুদ্ধে লড়াই করছে। তার মতে, কুচকাওয়াজে কিমকে আমন্ত্রণ জানানো প্রমাণ করে শি জিনপিং চাইছেন পিয়ংইয়ংকে বেইজিংয়ের কক্ষপথে ধরে রাখতে—যখন মস্কোর সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে।

ট্যাগ

ট্রেনে বেইজিং পৌঁছালেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন

প্রকাশিত হয়েছে: ১২:২৭:২২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সাঁজোয়া ট্রেনে চেপে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছেছেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষে আয়োজিত সামরিক কুচকাওয়াজের এক দিন আগে মঙ্গলবার তিনি বেইজিং পৌঁছান। সফরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠক করার কথা রয়েছে কিমের।

২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে খুব কমই বিদেশ সফরে গেছেন কিম জং উন। এর মধ্যে সর্বাধিকবার তিনি সফর করেছেন চীনে। অন্তত চারবার বেইজিং সফরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার, রাশিয়া সফর করেছেন মাত্র দু’বার। সবচেয়ে ব্যতিক্রমী সফর ছিল ২০১৮ সালে সিঙ্গাপুরে, যেখানে তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। এরপর ২০১৯ সালে হ্যানয়ে তাদের আরেকটি বৈঠক হয়। এছাড়া দুইবার দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তের যৌথ নিরাপত্তা অঞ্চলেও গেছেন তিনি।

বিশ্লেষকদের মতে, কিম সাধারণত বহুপাক্ষিক আয়োজনে অংশগ্রহণ করেন না, কারণ সেখানে রাজনৈতিক বার্তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই এই সফরকে একটি অস্বাভাবিক ঝুঁকি হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ক্রিস্টোফার গ্রিন বলেন, ক্ষেপণাস্ত্র, ট্যাঙ্ক আর যুদ্ধবিমানে ঠাসা কুচকাওয়াজে কিম, শি ও পুতিনের একসঙ্গে উপস্থিতি মার্কিন নেতৃত্বাধীন যুদ্ধ-পরবর্তী বৈশ্বিক ব্যবস্থার বিকল্প এক চিত্র তুলে ধরবে।

সিঙ্গাপুরের নানইয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির জেমস চার মনে করেন, বেইজিংয়ের এই কুচকাওয়াজ মূলত জাপান ও পশ্চিমা ব্লকের উদ্দেশে শক্তিশালী বার্তা বহন করছে। কিমের উপস্থিতি এই প্রচারণাকে একটি ‘ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট’-এর রূপ দিচ্ছে। একইসঙ্গে দেশীয় রাজনীতিতেও এটি কিমের জন্য একটি সাফল্য, কারণ এর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার জনগণের কাছে তিনি দেখাতে চাইছেন—আন্তর্জাতিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকলেও চীন ও রাশিয়ার কাছে তাদের গুরুত্ব রয়েছে।

তবে চীন ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক সবসময় অস্বস্তিকর। ক্রিস্টোফার গ্রিনের মতে, চীন আসলে উত্তর কোরিয়াকে একটি বাফার রাষ্ট্র ও কূটনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে দেখে, পাশাপাশি সস্তা শ্রমের উৎস হিসেবেও ব্যবহার করে। চীনের প্রত্যাশা হলো, উত্তর কোরিয়া যেন খুব বেশি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না করে। কিন্তু বাস্তবে এ প্রত্যাশা সবসময় পূরণ হয়নি।

অন্যদিকে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাস্টিন হেস্টিংস বলেন, কিমের স্থায়ী নীতি হলো চীনের প্রভাব কমিয়ে অন্য উৎস থেকে সমর্থন ও নিরাপত্তা খোঁজা। গত বছর রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে একটি পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যার আওতায় উত্তর কোরিয়ার সেনারা ইউক্রেন যুদ্ধে লড়াই করছে। তার মতে, কুচকাওয়াজে কিমকে আমন্ত্রণ জানানো প্রমাণ করে শি জিনপিং চাইছেন পিয়ংইয়ংকে বেইজিংয়ের কক্ষপথে ধরে রাখতে—যখন মস্কোর সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে।