০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাঁকখালী নদী উদ্ধার অভিযানে উত্তেজনা

কক্সবাজার শহরে বাঁকখালী নদীর জায়গা উদ্ধারে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চলমান উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও আশ্বাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরো এলাকায় এখনো চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অভিযানের পঞ্চম দিনে সকাল ৯টার কিছু পর থেকেই শহরের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজারো মানুষ গুমগাছতলায় বিমানবন্দর সড়কের দিকে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১০টার দিকে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত একটি এস্কেভেটর ভাঙচুর করেন। এ সময় তারা উপস্থিত সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঘিরে ফেলেন।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নদী উদ্ধার অভিযানের নামে তাদের বৈধ ভিটেমাটি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। নুনিয়ার ছড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, “নদীর জন্য জায়গা ছাড়তে রাজি আছি, কিন্তু নিয়মকানুন না মেনে গণ উচ্ছেদ চলছে। আমাদের সব কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। জীবন দেব, তবু ঘর ছাড়ব না।”

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুর রহমান কাজল। তিনি বলেন, “হাইকোর্টের রায় আমরা মানি। তবে প্রথমে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। পুনর্বাসন ছাড়া এভাবে উচ্ছেদ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।”

ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক একে এম আরিফ উদ্দিন গণমাধ্যমকর্মীদের কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক ছোট-বড় কাঁচা-পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৫৮ একর জায়গা।

অভিযানের দ্বিতীয় দিন কস্তুরাঘাট এলাকায় পুলিশি অভিযানে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার চারজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

তৃতীয় দিন শহরের পেশকারপাড়ায় স্থানীয়দের বাধার মুখে উচ্ছেদ কার্যক্রম পণ্ড হয়ে যায়। ওই ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়, যেখানে ১১ জনের নামসহ ৪ শতাধিককে আসামি করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন কক্সবাজার নৌ বন্দরের পোর্ট কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াকিল।

গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট বাঁকখালী নদীর সীমানা থেকে সব দখলদারের তালিকা প্রণয়ন ও চার মাসের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ আগস্ট কক্সবাজার সফরে আসেন নৌপরিবহন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এক সমন্বয় সভায় হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশ দেন।

ট্যাগ

বাঁকখালী নদী উদ্ধার অভিযানে উত্তেজনা

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:২২:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

কক্সবাজার শহরে বাঁকখালী নদীর জায়গা উদ্ধারে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চলমান উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয়রা। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ ও আশ্বাসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলেও পুরো এলাকায় এখনো চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অভিযানের পঞ্চম দিনে সকাল ৯টার কিছু পর থেকেই শহরের ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের হাজারো মানুষ গুমগাছতলায় বিমানবন্দর সড়কের দিকে জড়ো হতে থাকেন। সকাল ১০টার দিকে ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত একটি এস্কেভেটর ভাঙচুর করেন। এ সময় তারা উপস্থিত সেনাবাহিনী, পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ঘিরে ফেলেন।

বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, নদী উদ্ধার অভিযানের নামে তাদের বৈধ ভিটেমাটি উচ্ছেদ করা হচ্ছে। নুনিয়ার ছড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, “নদীর জন্য জায়গা ছাড়তে রাজি আছি, কিন্তু নিয়মকানুন না মেনে গণ উচ্ছেদ চলছে। আমাদের সব কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। জীবন দেব, তবু ঘর ছাড়ব না।”

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা লুৎফুর রহমান কাজল। তিনি বলেন, “হাইকোর্টের রায় আমরা মানি। তবে প্রথমে সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। পুনর্বাসন ছাড়া এভাবে উচ্ছেদ মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনবে।”

ঘটনাস্থলে উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক একে এম আরিফ উদ্দিন গণমাধ্যমকর্মীদের কোনো প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করেন।

গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া উচ্ছেদ অভিযানে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক ছোট-বড় কাঁচা-পাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৫৮ একর জায়গা।

অভিযানের দ্বিতীয় দিন কস্তুরাঘাট এলাকায় পুলিশি অভিযানে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে মোট ২৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় গ্রেপ্তার চারজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

তৃতীয় দিন শহরের পেশকারপাড়ায় স্থানীয়দের বাধার মুখে উচ্ছেদ কার্যক্রম পণ্ড হয়ে যায়। ওই ঘটনায় আরও একটি মামলা হয়, যেখানে ১১ জনের নামসহ ৪ শতাধিককে আসামি করা হয়। মামলাটি দায়ের করেন কক্সবাজার নৌ বন্দরের পোর্ট কর্মকর্তা মো. আবদুল ওয়াকিল।

গত ২৪ আগস্ট হাইকোর্ট বাঁকখালী নদীর সীমানা থেকে সব দখলদারের তালিকা প্রণয়ন ও চার মাসের মধ্যে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ আগস্ট কক্সবাজার সফরে আসেন নৌপরিবহন ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি এক সমন্বয় সভায় হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর নির্দেশ দেন।