০৯:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আল-হাকাম: চূড়ান্ত ন্যায়বিচারক আল্লাহর এক গুণবাচক নাম

আল্লাহর ৯৯ নামের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম আল-হাকাম, অর্থাৎ ‘পরম ন্যায়বিচারক’। ইসলামি ঐতিহ্য মতে, আল্লাহ তাআলাই চূড়ান্ত বিচারক; তাঁর ফয়সালায় পক্ষপাত, ভুল বা অবিচার নেই। ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্র—সবক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এই নামের চেতনা মুসলমানদের জন্য দিকনির্দেশনা দেয়।

ধর্ম বিশারদদের মতে, আল-হাকাম নামটি বিশ্বাসীদের মনে ন্যায়বোধকে জাগ্রত করে এবং অন্যায়-অবিচার থেকে বিরত থাকতে প্রেরণা দেয়। কুরআন-হাদীসের বর্ণনায় স্পষ্ট—দুনিয়ার আংশিক বিচারের ঊর্ধ্বে রয়েছে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত ফয়সালা।

কুরআনের আলোকে

  • “তিনিই আল্লাহ… তিনি অবশ্যই তোমাদের একদিন সমবেত করবেন—সে দিনের আগমনে কোনো সন্দেহ নেই; আল্লাহর বাণীর তুলনায় অধিক সত্য কার?” (আন-নিসা ৪:৮৭)
  • “তোমার প্রতিপালকই তাদের মধ্যকার মতভেদে ফয়সালা করে দেবেন।” (আন-নাহল ১৬:১২৪)
  • “তোমার প্রভুর বাণী সত্য ও ন্যায়ে পরিপূর্ণ।” (আল-আন‘আম ৬:১১৫)

সহিহ বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহকে সর্বোত্তম বিচারক হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বিচারকার্যে ন্যায়পরায়ণতাকে ঈমানি দায়িত্ব হিসেবে তুলে ধরেছেন।

সমাজ ব্যক্তিজীবনে প্রয়োগ

  1. ব্যক্তিগত আচরণ: পরিবার, ব্যবসা ও পারস্পরিক লেনদেনে পক্ষপাতহীন থাকা—ওজনদারিতে প্রতারণা, কথা ভাঙা, হক নষ্ট করা থেকে বিরত থাকা।
  2. সামাজিক ন্যায়: স্থানীয় সালিশ, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় প্রমাণ-নির্ভর ও নীতিনিষ্ঠ হওয়া।
  3. প্রশাসন ও বিচার: ক্ষমতার ন্যায্য ব্যবহার, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি—অন্যায় রায়ের ভয়াবহতা থেকে সাবধান থাকা।
  4. আত্ম-পরিশুদ্ধি: অন্তরের কুমন্ত্রণা, রাগ বা স্বার্থ যাতে ‘বিচারকে’ প্রভাবিত না করে—এ জন্য তাকওয়া বৃদ্ধি।

আলহাকামস্মরণে দৈনন্দিন আমল

  • যিকর ও দু’আ: “ইয়া হাকামু” বলে স্মরণ—হৃদয়ে ন্যায়ের দৃঢ়তা চাওয়া এবং নিজের ফয়সালায় হেদায়েত কামনা।
  • আত্ম-মুহাসাবা: দিনের শেষে নিজের সিদ্ধান্তগুলো ন্যায়সঙ্গত ছিল কি না—স্বল্প সময় চোখ বুজে পর্যালোচনা।
  • ফিতনা এড়ানো: গুজব, পক্ষপাতী শেয়ার/পোস্ট, যাচাইহীন খবর—সবকিছু থেকে বিরত থাকা; সত্য যাচাই করে মত দেওয়া।

ধর্মীয় গবেষকরা বলেন, আল-হাকাম—এই নামের তাৎপর্য হলো, মানুষ বিচার করতে পারে কিন্তু চূড়ান্ত বিচারক আল্লাহ। তাই দুনিয়ার যে কোনো রায় বা পরিস্থিতিতে বিশ্বাসী সর্বশেষ ভরসা রাখে আল্লাহর ন্যায়বিচারে, আর নিজে যতটুকু পারে ন্যায় পালন করে।

  • অর্থ: আল-হাকাম = ন্যায়বিচারক, যিনি চূড়ান্ত ফয়সালা দান করেন।
  • কোর বার্তা: আল্লাহর ফয়সালা পরিপূর্ণ সত্য ও হিকমতপূর্ণ; পক্ষপাতের স্থান নেই।
  • বিশ্বাসীর করণীয়: ব্যক্তিগত ও সামাজিক সিদ্ধান্তে ন্যায়পরায়ণতা, স্বচ্ছতা, প্রমাণনিষ্ঠা।
  • আখিরাত-দৃষ্টি: সব অবিচারের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি আল্লাহই করবেন—এ আস্থাই ধৈর্য ও ন্যায়চর্চার শক্তি।

‘আল-হাকাম’ নামের শিক্ষা কেবল ধর্মীয় আবেগ নয়—এটি একটি নৈতিক ফ্রেমওয়ার্ক, যা পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত ন্যায়ভিত্তিক সংস্কৃতি গড়তে পারে।

আপনি চাইলে একই ধারায় পরবর্তী নাম “আল-‘আদল (العدل) – পরম ন্যায়পরায়ণ” নিয়ে নিউজ-স্টাইল বিশ্লেষণ প্রস্তুত করছি।

 

ট্যাগ

আল-হাকাম: চূড়ান্ত ন্যায়বিচারক আল্লাহর এক গুণবাচক নাম

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:১৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আল্লাহর ৯৯ নামের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম আল-হাকাম, অর্থাৎ ‘পরম ন্যায়বিচারক’। ইসলামি ঐতিহ্য মতে, আল্লাহ তাআলাই চূড়ান্ত বিচারক; তাঁর ফয়সালায় পক্ষপাত, ভুল বা অবিচার নেই। ব্যক্তিজীবন থেকে রাষ্ট্র—সবক্ষেত্রে ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য এই নামের চেতনা মুসলমানদের জন্য দিকনির্দেশনা দেয়।

ধর্ম বিশারদদের মতে, আল-হাকাম নামটি বিশ্বাসীদের মনে ন্যায়বোধকে জাগ্রত করে এবং অন্যায়-অবিচার থেকে বিরত থাকতে প্রেরণা দেয়। কুরআন-হাদীসের বর্ণনায় স্পষ্ট—দুনিয়ার আংশিক বিচারের ঊর্ধ্বে রয়েছে আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ ও চূড়ান্ত ফয়সালা।

কুরআনের আলোকে

  • “তিনিই আল্লাহ… তিনি অবশ্যই তোমাদের একদিন সমবেত করবেন—সে দিনের আগমনে কোনো সন্দেহ নেই; আল্লাহর বাণীর তুলনায় অধিক সত্য কার?” (আন-নিসা ৪:৮৭)
  • “তোমার প্রতিপালকই তাদের মধ্যকার মতভেদে ফয়সালা করে দেবেন।” (আন-নাহল ১৬:১২৪)
  • “তোমার প্রভুর বাণী সত্য ও ন্যায়ে পরিপূর্ণ।” (আল-আন‘আম ৬:১১৫)

সহিহ বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহকে সর্বোত্তম বিচারক হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বিচারকার্যে ন্যায়পরায়ণতাকে ঈমানি দায়িত্ব হিসেবে তুলে ধরেছেন।

সমাজ ব্যক্তিজীবনে প্রয়োগ

  1. ব্যক্তিগত আচরণ: পরিবার, ব্যবসা ও পারস্পরিক লেনদেনে পক্ষপাতহীন থাকা—ওজনদারিতে প্রতারণা, কথা ভাঙা, হক নষ্ট করা থেকে বিরত থাকা।
  2. সামাজিক ন্যায়: স্থানীয় সালিশ, সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় প্রমাণ-নির্ভর ও নীতিনিষ্ঠ হওয়া।
  3. প্রশাসন ও বিচার: ক্ষমতার ন্যায্য ব্যবহার, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি—অন্যায় রায়ের ভয়াবহতা থেকে সাবধান থাকা।
  4. আত্ম-পরিশুদ্ধি: অন্তরের কুমন্ত্রণা, রাগ বা স্বার্থ যাতে ‘বিচারকে’ প্রভাবিত না করে—এ জন্য তাকওয়া বৃদ্ধি।

আলহাকামস্মরণে দৈনন্দিন আমল

  • যিকর ও দু’আ: “ইয়া হাকামু” বলে স্মরণ—হৃদয়ে ন্যায়ের দৃঢ়তা চাওয়া এবং নিজের ফয়সালায় হেদায়েত কামনা।
  • আত্ম-মুহাসাবা: দিনের শেষে নিজের সিদ্ধান্তগুলো ন্যায়সঙ্গত ছিল কি না—স্বল্প সময় চোখ বুজে পর্যালোচনা।
  • ফিতনা এড়ানো: গুজব, পক্ষপাতী শেয়ার/পোস্ট, যাচাইহীন খবর—সবকিছু থেকে বিরত থাকা; সত্য যাচাই করে মত দেওয়া।

ধর্মীয় গবেষকরা বলেন, আল-হাকাম—এই নামের তাৎপর্য হলো, মানুষ বিচার করতে পারে কিন্তু চূড়ান্ত বিচারক আল্লাহ। তাই দুনিয়ার যে কোনো রায় বা পরিস্থিতিতে বিশ্বাসী সর্বশেষ ভরসা রাখে আল্লাহর ন্যায়বিচারে, আর নিজে যতটুকু পারে ন্যায় পালন করে।

  • অর্থ: আল-হাকাম = ন্যায়বিচারক, যিনি চূড়ান্ত ফয়সালা দান করেন।
  • কোর বার্তা: আল্লাহর ফয়সালা পরিপূর্ণ সত্য ও হিকমতপূর্ণ; পক্ষপাতের স্থান নেই।
  • বিশ্বাসীর করণীয়: ব্যক্তিগত ও সামাজিক সিদ্ধান্তে ন্যায়পরায়ণতা, স্বচ্ছতা, প্রমাণনিষ্ঠা।
  • আখিরাত-দৃষ্টি: সব অবিচারের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি আল্লাহই করবেন—এ আস্থাই ধৈর্য ও ন্যায়চর্চার শক্তি।

‘আল-হাকাম’ নামের শিক্ষা কেবল ধর্মীয় আবেগ নয়—এটি একটি নৈতিক ফ্রেমওয়ার্ক, যা পরিবার থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত ন্যায়ভিত্তিক সংস্কৃতি গড়তে পারে।

আপনি চাইলে একই ধারায় পরবর্তী নাম “আল-‘আদল (العدل) – পরম ন্যায়পরায়ণ” নিয়ে নিউজ-স্টাইল বিশ্লেষণ প্রস্তুত করছি।