১০:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঢাবিতে ডাকসু নির্বাচন: উৎসবের আমেজে শেষ হলো প্রচারণা

আগামী কাল ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অনুষ্ঠিত হবে ডাকসু নির্বাচন।
দীর্ঘ ছয় বছর পর এই নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের হাওয়া।

গত ২৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হয়।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা পর্যন্ত ছিল প্রার্থীদের প্রচারণার শেষ সময়।

এই সময়ে মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি, কার্জন হল, বিভিন্ন অনুষদ ও আবাসিক হলজুড়ে চলেছে জমজমাট প্রচারণা।
প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরব ছিলেন রুম-টু-রুম প্রচারণায়।

প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে লিফলেট ও হ্যান্ডবিলের ছড়াছড়ি।
হাতে হাতে বিলি করা এসব কাগজ মুহূর্তেই রাস্তায় পড়ে গিয়ে তৈরি করেছে কাগজের স্তূপ।
টিএসসি, কার্জন হল ও বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির সামনে দেখা গেছে তার প্রমাণ।
এতে একদিকে প্রচারণার ব্যাপকতা বোঝা গেলেও, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উঠেছে পরিবেশ দূষণের সমালোচনা।

ভোটারদের আকর্ষণে প্রার্থীরা নিয়েছেন নানা সৃজনশীল কৌশল।
কার্যকরী সদস্য পদে এক প্রার্থী ছাপিয়েছেন এক হাজার টাকার নোটের আদলে লিফলেট।
অন্য এক প্রার্থী প্রচারপত্র বানিয়েছেন মার্কিন ডলারের আকারে।
এছাড়াও বিড়ালপ্রেমীদের জন্য বিড়ালের ছবি, খেলার ব্যাড-বল, হাতপাখা, এমনকি ইংরেজি পত্রিকার কাটিং— সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে প্রচারণায়।

তবে বড় কোনো সংঘর্ষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।
প্রচারণার আবহ ছিল তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ।

ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের পাশাপাশি হল সংসদ নির্বাচন নিয়েও তৎপর ছিলেন প্রার্থীরা।
হলভিত্তিক ডাইনিং, জিমনেসিয়াম, লাইব্রেরি ও পাঠকক্ষ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি এসেছে বারবার।

শেষ দিনে প্রার্থীরা সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডায় বসে শুনেছেন সমস্যা।
বলেছেন নিজেদের কর্মপরিকল্পনা।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এই সরাসরি যোগাযোগ ভোটের ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের ডাকসুতে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
বিশেষ করে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাশিত।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।
বুথের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।

প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক জসীম উদ্দীন বলেন,
“নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
ভোটে যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রশাসন শতভাগ প্রস্তুত।”

ভোটের দিন মাঠে থাকবেন কয়েকশ সাংবাদিক।
প্রশাসন জানিয়েছে, কারচুপি ঠেকাতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রথমবার ডাকসুতে ভোট দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জিলহজ্জ শেখ বলেন,
“আমরা চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
আসল প্রতিনিধি যেন উঠে আসে।”

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন,
“ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবের পরিবেশ দেখে ভালো লাগছে।
আমরা চাই সবাই নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে।”

বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা দিয়েছেন নানা অঙ্গীকার।

ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেন,
“ডাকসুকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আবাসন সংকট নিরসনে প্রশাসনকে বাধ্য করা হবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।”

ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন,
“নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, সবার সমান অধিকার এবং সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য।”

জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম বলেন,
“হল রুমে রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মপরিকল্পনা শেয়ার করেছি।
তাদের থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।”

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন,
“নারী ভোটকেন্দ্র দূরে স্থাপন করে তাদের ভোটে আগ্রহ কমানোর চেষ্টা হচ্ছে।
এখনো প্রশাসনের সময় আছে, শিক্ষার্থীরা যেন তাদের ডাকসুকে কার্যকর করতে পারে—
সেই সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি।”

প্রচারণার শেষ দিনে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছে।
শাহবাগ, পলাশী, দোয়েল চত্বর, শিববাড়ি, ফুলার রোড, উদয়ন স্কুল ও নীলক্ষেত—
এই সাত প্রবেশপথ সোমবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে।

শুধু বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করতে পারবেন।
শিক্ষক-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্রের কপি দেখাতে হবে।
ঢাবি স্টিকারযুক্ত বা জরুরি সেবার যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না।

ট্যাগ

সাইয়েদুল ইস্তেগফার : সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া

ঢাবিতে ডাকসু নির্বাচন: উৎসবের আমেজে শেষ হলো প্রচারণা

প্রকাশিত হয়েছে: ০৮:১০:৫৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আগামী কাল ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অনুষ্ঠিত হবে ডাকসু নির্বাচন।
দীর্ঘ ছয় বছর পর এই নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের হাওয়া।

গত ২৬ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু হয়।
রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টা পর্যন্ত ছিল প্রার্থীদের প্রচারণার শেষ সময়।

এই সময়ে মধুর ক্যান্টিন, টিএসসি, কার্জন হল, বিভিন্ন অনুষদ ও আবাসিক হলজুড়ে চলেছে জমজমাট প্রচারণা।
প্রার্থীরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সরব ছিলেন রুম-টু-রুম প্রচারণায়।

প্রচারণায় সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে লিফলেট ও হ্যান্ডবিলের ছড়াছড়ি।
হাতে হাতে বিলি করা এসব কাগজ মুহূর্তেই রাস্তায় পড়ে গিয়ে তৈরি করেছে কাগজের স্তূপ।
টিএসসি, কার্জন হল ও বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির সামনে দেখা গেছে তার প্রমাণ।
এতে একদিকে প্রচারণার ব্যাপকতা বোঝা গেলেও, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উঠেছে পরিবেশ দূষণের সমালোচনা।

ভোটারদের আকর্ষণে প্রার্থীরা নিয়েছেন নানা সৃজনশীল কৌশল।
কার্যকরী সদস্য পদে এক প্রার্থী ছাপিয়েছেন এক হাজার টাকার নোটের আদলে লিফলেট।
অন্য এক প্রার্থী প্রচারপত্র বানিয়েছেন মার্কিন ডলারের আকারে।
এছাড়াও বিড়ালপ্রেমীদের জন্য বিড়ালের ছবি, খেলার ব্যাড-বল, হাতপাখা, এমনকি ইংরেজি পত্রিকার কাটিং— সবকিছুই ব্যবহার করা হয়েছে প্রচারণায়।

তবে বড় কোনো সংঘর্ষ বা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।
প্রচারণার আবহ ছিল তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ।

ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের পাশাপাশি হল সংসদ নির্বাচন নিয়েও তৎপর ছিলেন প্রার্থীরা।
হলভিত্তিক ডাইনিং, জিমনেসিয়াম, লাইব্রেরি ও পাঠকক্ষ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি এসেছে বারবার।

শেষ দিনে প্রার্থীরা সরাসরি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আড্ডায় বসে শুনেছেন সমস্যা।
বলেছেন নিজেদের কর্মপরিকল্পনা।
শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এই সরাসরি যোগাযোগ ভোটের ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারের ডাকসুতে হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
বিশেষ করে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রত্যাশিত।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবাধ ও সুষ্ঠু ভোটগ্রহণে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।
বুথের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।
আচরণবিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।

প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক জসীম উদ্দীন বলেন,
“নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
বহিরাগত প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
ভোটে যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সে ব্যাপারে প্রশাসন শতভাগ প্রস্তুত।”

ভোটের দিন মাঠে থাকবেন কয়েকশ সাংবাদিক।
প্রশাসন জানিয়েছে, কারচুপি ঠেকাতে সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

প্রথমবার ডাকসুতে ভোট দিতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জিলহজ্জ শেখ বলেন,
“আমরা চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।
আসল প্রতিনিধি যেন উঠে আসে।”

মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন,
“ক্যাম্পাসজুড়ে উৎসবের পরিবেশ দেখে ভালো লাগছে।
আমরা চাই সবাই নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে।”

বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থীরা দিয়েছেন নানা অঙ্গীকার।

ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম বলেন,
“ডাকসুকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
আবাসন সংকট নিরসনে প্রশাসনকে বাধ্য করা হবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।”

ছাত্রদল মনোনীত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন,
“নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, সবার সমান অধিকার এবং সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠাই আমাদের লক্ষ্য।”

জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম বলেন,
“হল রুমে রুমে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কর্মপরিকল্পনা শেয়ার করেছি।
তাদের থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি।”

বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের বলেন,
“নারী ভোটকেন্দ্র দূরে স্থাপন করে তাদের ভোটে আগ্রহ কমানোর চেষ্টা হচ্ছে।
এখনো প্রশাসনের সময় আছে, শিক্ষার্থীরা যেন তাদের ডাকসুকে কার্যকর করতে পারে—
সেই সুযোগ নিশ্চিত করা জরুরি।”

প্রচারণার শেষ দিনে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছে।
শাহবাগ, পলাশী, দোয়েল চত্বর, শিববাড়ি, ফুলার রোড, উদয়ন স্কুল ও নীলক্ষেত—
এই সাত প্রবেশপথ সোমবার রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত সাধারণের জন্য বন্ধ থাকবে।

শুধু বৈধ আইডি কার্ডধারী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রবেশ করতে পারবেন।
শিক্ষক-কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের পরিচয়পত্রের কপি দেখাতে হবে।
ঢাবি স্টিকারযুক্ত বা জরুরি সেবার যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না।