
নেপালের সাম্প্রতিক বিদ্রোহের অন্যতম মূল দাবি হলো দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অবসান। রাজধানী কাঠমান্ডুসহ বিভিন্ন শহরে তরুণরা রাস্তায় নেমে রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রভাবশালী পরিবারগুলোর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে। তাদের অভিযোগ— রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুযোগ কেবল নির্দিষ্ট পরিবার ও তাদের উত্তরসূরিদের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে।
এই ক্ষোভকে আরও উসকে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একাধিক ভিডিও। সেখানে এক সোনালী চুলের বিত্তশালী তরুণের বিলাসী জীবনযাত্রা আক্রমণের মুখে পড়ে। সাধারণ মানুষ তাকে “নেপো-কিড” আখ্যা দিয়ে প্রশ্ন তুলছে— “কেন কেবল পরিবার-পরিচয়ের কারণে সে এত সুবিধা ভোগ করবে, অথচ মেধাবী তরুণরা পিছিয়ে থাকবে?”
নেপালের এই “নেপো-কিডস” বিতর্ক কেবল দেশটির ভেতরেই সীমাবদ্ধ নয়। এশিয়ার আরও বহু দেশে স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভ দ্রুত বিস্তার লাভ করছে।
-
ভারতে বলিউডে “স্টার কিডস” ইস্যু নিয়ে বহুদিন ধরেই বিতর্ক চলছে। সাধারণ পরিবার থেকে আসা শিল্পীরা অভিযোগ তুলেছেন, প্রযোজক ও পরিচালকরা তারকাদের সন্তানদের প্রাধান্য দেন, ফলে প্রতিভা নয় বরং পারিবারিক পরিচয়ই সাফল্যের মূল শর্ত হয়ে দাঁড়ায়।
-
বাংলাদেশে রাজনীতি ও ব্যবসায় পরিবারতন্ত্র নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা রয়েছে। তরুণরা প্রশ্ন তুলছে— নেতৃত্ব কিংবা চাকরির সুযোগ কেন যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং বংশপরিচয়ের মাধ্যমে বণ্টিত হবে?
-
দক্ষিণ কোরিয়ায় বড় কর্পোরেট গোষ্ঠী বা চেবোল পরিবারের উত্তরসূরিদের প্রাধান্য নিয়েও ব্যাপক ক্ষোভ আছে। শ্রমজীবী মানুষরা মনে করেন, পারিবারিক উত্তরাধিকার সেখানে প্রতিযোগিতার সুযোগ সংকুচিত করে দিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রবণতা মূলত অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারণে আরও প্রকট হয়ে উঠছে। এশিয়ার বহু দেশে মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব তরুণদের জীবনে অনিশ্চয়তা বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা দেখছে— মেধা ও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ কেবল নির্দিষ্ট পরিবার বা গোষ্ঠীর হাতে যাচ্ছে। ফলে স্বজনপ্রীতি এখন শুধুই নৈতিক প্রশ্ন নয়, বরং এটি সামাজিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নেপালের তরুণ প্রজন্ম তাই শুধু দুর্নীতি নয়, বরং বৈষম্যমূলক পারিবারিক আধিপত্যেরও বিরোধিতা করছে। তাদের আন্দোলন স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে— যোগ্যতা ও পরিশ্রমের ভিত্তিতেই ভবিষ্যৎ গড়ে উঠতে হবে, বংশপরিচয় দিয়ে নয়।