
মদিনার প্রথম এবং প্রাচীনতম কবরস্থান জান্নাতুল বাকি ইসলামের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ স্থান। মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত এই কবরস্থানটিকে আরবি ভাষায় বাকি আল-গারকদ বলা হয়। প্রায় ১,৪০০ বছরের প্রাচীন এ কবরস্থানে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকটাত্মীয়, সাহাবি এবং ইসলামের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও শহীদরা সমাহিত আছেন। ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় হিজরতের পর এই স্থানটি মরুভূমি থেকে কবরস্থানে রূপান্তরিত হয়।
সবচেয়ে প্রথমে এখানে দাফন করা হয় নবী করীম (সা.)-এর কন্যা রুকাইয়া (রা.)-কে। বদর যুদ্ধের সময় তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁকে জান্নাতুল বাকিতে সমাহিত করা হয়। এরপর থেকে একে একে সাহাবি, নবী পরিবারের সদস্য ও প্রখ্যাত আলেমদের কবরস্থান হিসেবে এ স্থান মুসলিম উম্মাহর কাছে মর্যাদাপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এ কবরস্থানে মহানবী (সা.)-এর ফুফু সাফিয়া বিনতে আব্দুল মুত্তালিব (রা.) ও তাঁর বোন আতিকা (রা.), আত্মীয় আব্দুল্লাহ বিন জাফর (রা.), আকিল বিন আবি তালিব (রা.), এবং নবী (সা.)-এর স্ত্রীদের মধ্যে খাদিজা (রা.) ও মায়মুনা (রা.) ছাড়া বাকিদের কবর রয়েছে।
নবী করীম (সা.)-এর কন্যারা—ফাতিমা জাহরা (রা.), রুকাইয়া (রা.), জয়নাব (রা.) ও উম্মে কুলসুম (রা.) এখানে শায়িত আছেন। এছাড়া নবীর চাচা আব্বাস (রা.), নাতি হাসান ইবনে আলী (রা.), জয়নুল আবিদিন (রা.), মুহাম্মদ আল-বাকির (রা.), এবং জাফর বিন মুহাম্মদ (রা.)-র কবরও এখানে অবস্থিত। নবী (সা.)-এর শিশুপুত্র ইব্রাহিম (রা.)-এর কবরও জান্নাতুল বাকির অংশ।
শুধু নবী পরিবার নয়, ইসলামের ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক সাহাবি ও আলেমও এখানে শায়িত আছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন—উসমান ইবনে আফফান (রা.), সাদ বিন মুআয (রা.), আবু সাঈদ খুদরী (রা.), নবীর দুধমা হালিমা (রা.), প্রখ্যাত ফকিহ ইমাম মালিক (রহ.) এবং তাঁর শিক্ষক ইমাম নাফি বিন আবি নুয়াইম (রহ.)। এছাড়াও নবীর চাচি ফাতেমা বিনতে আসাদ (রা.) এর কবরও এখানেই রয়েছে।
হাররা যুদ্ধের শহীদরাও জান্নাতুল বাকিতে সমাহিত। তাই এ কবরস্থান কেবল মদিনার নয়, বরং সমগ্র ইসলামী ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অমূল্য অংশ। প্রতি বছর লাখো মুসলমান এ স্থান পরিদর্শন করে তাঁদের জন্য দোয়া করে থাকেন।