আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়ে জানান, শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানাতে বিভিন্ন সহযোগীর ভূমিকা ছিল। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ৪৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১-এ তার জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত রাখতে জঙ্গি দমন ও মেকি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করেছেন শেখ হাসিনা। সহযোগীদের মধ্যে বিচার বিভাগ, পুলিশ, নির্বাচন কমিশন, সেনাবাহিনী ও মিডিয়া উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। বিশেষত ডিজিএফআই-কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন সাবেক প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক।
বিচার বিভাগের সহযোগীদের মধ্যে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক, বিচারপতি এসকে সিনহা, বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দীকি, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এনায়েতুর রহিম, বিচারপতি নিজামুল হক ও বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক উল্লেখযোগ্য। আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক আইন সচিব দুলাল, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চিফ প্রসিকিউর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউর রানা দাস গুপ্ত, প্রসিকিউর জেয়াদ আল-মালুম, দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ও মোশাররফ হোসেন কাজল।
পুলিশ বাহিনীতে সহযোগী হিসেবে ছিলেন সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, বেনজীর আহমেদ, আবদুল্লাহ আল-মামুন, জাবেদ পাটোয়ারী, নুর মোহাম্মদ। সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে সাবেক এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, ডিবির প্রধান হারুনুর রশীদ, বিপ্লব সরকার, মেহেদী হাসান ও প্রলয় কুমার জোয়াদ্দার। নির্বাচন কমিশনের মধ্যে ২০১৪ সালের রকিব উদ্দিন কমিশন, ২০১৮ সালের নুরুল হুদা কমিশন এবং ২০২৪ সালের হাবিবুল আউয়াল কমিশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে জাতীয় পার্টির হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, রওশন এরশাদ, জিএম কাদের, ১৪ দলীয় নেতাদের মধ্যে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, দিলীপ বড়ুয়া, নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারি, ফজলে হোসেন বাদশা, শিরিন আক্তার এবং তাদের সহযোগীরা, ১৪ দলের বাইরে মেজর জেনারেল ইব্রাহিম, শমশের মুবিন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মিজবাউর রহমান চৌধুরী, কাদের সিদ্দীকি ও মাহি বি চৌধূরী ফ্যাসিবাদ দীর্ঘায়িত করেছেন।
সেনাবাহিনীর ক্ষেত্রে ২০০৮ সালে জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ, জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ডিজিএফআই-এর কর্মকর্তা জেনারেল আমিন, ব্রিগেডিয়ার বারী ও ব্রিগেডিয়ার মামুন খালেদ ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া তিন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, জেনারেল আজিজ আহমেদ ও জেনারেল শফিউদ্দিন আহমেদ ভুয়া নির্বাচনকালে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় নৈতিক দায় এড়াতে পারবেন না। ডিজিএফআই-এর অধিকাংশ ডিজি সরকারের জুলুমের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। র্যাবের সেনা সদস্যদের মধ্যে মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছেন।
মাহমুদুর রহমানের জবানবন্দি সকাল ১১টা ২০ মিনিট থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় তা মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি রাখা হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউর গাজী এমএইচ তামিম, এবং উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউর সহিদুল ইসলাম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্যরা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ এই পর্যায়ে শেষ হবে বলে চিফ প্রসিকিউটর জানান।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।