
ঢাকা — রাজধানীর মানুষ যখন নির্বিঘ্নভাবে চলাচল করার চেষ্টা করেন, তখন কিছু নির্ধারিত এলাকায় বেআইনি চক্র ও প্রতারণার কৌশল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। ফার্মগেট, শাহবাগ, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, গাবতলি, সায়েদাবাদ, সদরঘাট—এসব বিখ্যাত জায়গায় সতর্কতামূলক বেশ কয়েকটি ঘটনা ও কৌশল সবার নজরে এসেছে; প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে সচেতন রাখার উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা জারি করা জরুরি বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
ঘটনার সারমর্ম:
-
ফার্মগেট এলাকা ও অন্যান্য মোহরায় দেখা যায়—এক বা দু’জনকে আঘাত করে চিৎকার করতে বসে থাকে, বাই-স্ট্যান্ডাররা এগিয়ে এসে সাহায্য করতে গেলে দুর্বৃত্তরা সহায়তাকারীর কাছে থাকা টাকা, মোবাইল বা মূল্যবান জিনিস ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। এই ঘটনা গঠনমূলকভাবে সংঘবদ্ধ একটি প্রতারণা চক্রের কাজ বলে অভিযোগ।
-
ওভারব্রিজে বা রাস্তায় কাঁদতে থাকা বা সাহায্য চাইতে দেখা কোনো মানুষ যদি আপনার মোবাইল ব্যবহার করে কারো উপর মিসকল দেয়—তার মানে হতে পারে নম্বর সংগ্রহের ফাঁদ; পরে ওই নম্বরে কড়া টোন বা লোভনীয় প্রস্তাব পাঠিয়ে নামে ব্ল্যাকমেইল করা হতে পারে।
-
শাহবাগ–মহাখালী–যাত্রাবাড়ীর যানজটে আটকে থাকা অবস্থায় লিফলেট, ফাঁদী প্রস্তাব, বা ‘রুম ডেট’–ধাঁচের অফার দেখে সহজেই প্রলুব্ধ হলে ভুক্তভোগী বানানো হচ্ছে।
-
অনেকে ‘বোরকা-চোখের’ সৌন্দর্য দিয়ে বা হালকাভাবে ইশারা করে পথচারীদের ফাঁদে ফেলছে—চেনা-অচেনা সম্পর্ক গড়ে তুলে পরে ব্ল্যাকমেইল বা অর্থ দাবি।
-
গাবতলি, সায়েদাবাদ, সদরঘাট, মাওয়া, আরিচা, দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে তাস বা লুডু খেলিয়ে লোকবল যখন কাছে গেলে, অনেক সময় ছিনতাই বা জোরপূর্বক ঝুঁকি তৈরি হয়।
-
রেলগাড়ির ছাদে চলাচল করার সময় কিছু দল ছাদের উপর নেমে আসা যাত্রীদের লক্ষ্য করে ছিনতাই করে; ফলে ছাদে ওঠা থেকে বিরত থাকতে বলা হচ্ছে।
-
লঞ্চ বা স্পিডবোটে কম যাত্রী থাকলে উঠলে অনিশ্চিত ও ঝুঁকির সম্মুখীন হওয়ার খবর রয়েছে—নির্জন স্থানে নৌকাটি ভিড়িয়ে ছিনতাই বা ছিনিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।
-
সাধারণভাবে, সড়কে অপরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে দীর্ঘ আড্ডা বা ব্যক্তিগত তথ্য ভাগ করে নেওয়া এ সময় অনুচিত; যাত্রাপথে যাওয়ার স্থান যেন পরিচিত ও নির্ভরযোগ্য হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা করেছেন।
নাগরিকদের জন্য নিরাপত্তা পরামর্শ (সংক্ষেপে):
-
অচেনা গোষ্ঠী বা ভিড়ের মধ্যে জরুরি সঙ্কেত ছাড়া দৌড়ে ঢুকবেন না—পাশাপাশি ফোন ও মূল্যবান জিনিস সবসময় নিরাপদ স্থানে রাখুন।
-
কেউ সাহায্য চাইলে, প্রথমে নিরাপদ দূরত্ব থেকে পরিস্থিতি নজর করুন; সরাসরি হাতাহাতি বা ব্যস্ত রাস্তায় সশরীরে জড়াবেন না — প্রয়োজনে পুলিশ/নিয়ন্ত্রিত কর্তৃপক্ষকে খবর দিন।
-
অচেনা লোকের মোবাইল দিতে থেকে বিরত থাকুন; যদি ফোন দিয়ে কল করার অনুরোধ আসে, নিজে কল দেবেন না বা পরিচিত কারো মাধ্যমে যাচাই করে নেবেন।
-
ভিড়–জ্যামে লিফলেট বা প্রস্তাব গ্রহণ করবেন না; কোনাে লোভনীয় প্রস্তাব পেলে ফোন নম্বর কিংবা ব্যক্তিগত তথ্য দেবেন না।
-
রেল-ছাদে ওঠা, নির্জন স্পিডবোট-ভ্রমণ, কিংবা কম যাত্রী থাকা লঞ্চে ওঠা—এসব এড়িয়ে চলুন।
-
হেঁটে যাওয়ার সময় বাসের মাঝখান দিয়ে দ্রুত উত্তরণের পরিবর্তে নিরাপদ সাইড ব্যবহার করুন; রাতের একক চলাচলে পরিচিতদের সঙ্গে থাকুন বা নিরাপদ রুট বেছে নিন।
-
সড়কে কোন ঘটনার শিকার হলে দ্রুত ৯৯৯ / স্থানীয় পুলিশ স্টেশনকে জানান এবং সম্ভব হলে আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ বা সাক্ষীর ব্যবস্থা করুন।
নোট: সচেতনতা তৈরি করা জরুরি — পরিবারের সদস্য, সহকর্মী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সতর্কতাগুলো শেয়ার করে অধিক সংখ্যক মানুষকে বিপদ এড়াতে সাহায্য করুন। পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় বাড়িয়ে বিস্তৃত ক্যাম্পেইন করলে এসব চক্র চিহ্নিত ও দমন করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্পর্কিত কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া: স্থানীয় পুলিশ ও ট্রাফিক বিভাগকে অবহিত করে দ্রুত টহল বাড়ানোর এবং উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় কার্যকরী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন এসেছে—সরকারি পক্ষের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি এলে জনসাধারণকে জানানো হবে।
(সচেতন নাগরিকই সুরক্ষিত নগর গড়ে তুলতে পারে। সতর্ক থাকুন, সচেতন করুন।)