০৪:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার তাগিদ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চান ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান মৌনির সাতৌরি। তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফল সবাইকে মেনে নিতে হবে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

সম্প্রতি ঢাকায় সফরকালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

মৌনির সাতৌরি বলেন, ক্ষমতার পৃথকীকরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, জনপরিসর ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্য মৌলিক শর্ত। তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নির্বাচনের ফল যাই হোক না কেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের সঙ্গে কাজ করবে।

ইইউ মানবাধিকার কমিটির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের আগে অংশীদার দেশগুলোতে এ ধরনের তথ্য-অনুসন্ধান মিশন পাঠানো হয়ে থাকে।

বাংলাদেশকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে সাতৌরি বলেন, দেশটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে এবং একই সঙ্গে ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা গভীর করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এর মধ্যে পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (পিসিএ) আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ইইউ যখন কোনো তৃতীয় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন মানবাধিকার পরিস্থিতি, আইনের শাসন ও মৌলিক স্বাধীনতার বিষয়গুলোও পর্যালোচনা করা হয়।

২০২৪ সালের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তরণ প্রসঙ্গে সাতৌরি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে প্রক্রিয়াটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তাঁর মতে, গৃহীত সংস্কারগুলো যদি ব্যাপক সমর্থন পায় এবং নির্বাচিত সংসদ সেগুলো বাস্তবায়ন করে, তবে সেরা পরিবেশে উত্তরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

সফরকালে প্রতিনিধিদল নাগরিক সমাজ, ট্রেড ইউনিয়ন, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে আলোচনা হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাতৌরি কক্সবাজার শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, গত আট বছর ধরে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের অসাধারণ প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। তবে এ বোঝা বাংলাদেশ একা বহন করতে পারে না। তিনি আন্তর্জাতিক সহায়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি মিয়ানমারে রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্ব দেন।

সাতৌরি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈশ্বিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

সফরকালে প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।

ট্যাগ

নির্বাচনের ফল মেনে নেওয়ার তাগিদ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের

প্রকাশিত হয়েছে: ১০:৫৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চান ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান মৌনির সাতৌরি। তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফল সবাইকে মেনে নিতে হবে, যা দেশের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য।

সম্প্রতি ঢাকায় সফরকালে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

মৌনির সাতৌরি বলেন, ক্ষমতার পৃথকীকরণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, জনপরিসর ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও স্থিতিশীলতার জন্য মৌলিক শর্ত। তিনি আরও বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নির্বাচনের ফল যাই হোক না কেন, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের সঙ্গে কাজ করবে।

ইইউ মানবাধিকার কমিটির চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বর্তমানে বাংলাদেশ সফরে রয়েছে। বড় ধরনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের আগে অংশীদার দেশগুলোতে এ ধরনের তথ্য-অনুসন্ধান মিশন পাঠানো হয়ে থাকে।

বাংলাদেশকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে সাতৌরি বলেন, দেশটি গণতান্ত্রিক উত্তরণের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে রয়েছে এবং একই সঙ্গে ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা গভীর করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এর মধ্যে পার্টনারশিপ অ্যান্ড কো-অপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট (পিসিএ) আলোচনাও অন্তর্ভুক্ত। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ইইউ যখন কোনো তৃতীয় দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন মানবাধিকার পরিস্থিতি, আইনের শাসন ও মৌলিক স্বাধীনতার বিষয়গুলোও পর্যালোচনা করা হয়।

২০২৪ সালের জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক উত্তরণ প্রসঙ্গে সাতৌরি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে প্রক্রিয়াটি এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। তাঁর মতে, গৃহীত সংস্কারগুলো যদি ব্যাপক সমর্থন পায় এবং নির্বাচিত সংসদ সেগুলো বাস্তবায়ন করে, তবে সেরা পরিবেশে উত্তরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।

সফরকালে প্রতিনিধিদল নাগরিক সমাজ, ট্রেড ইউনিয়ন, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। শিগগিরই অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে আলোচনা হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সাতৌরি কক্সবাজার শিবির পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, গত আট বছর ধরে এক মিলিয়নেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের অসাধারণ প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। তবে এ বোঝা বাংলাদেশ একা বহন করতে পারে না। তিনি আন্তর্জাতিক সহায়তা বৃদ্ধির পাশাপাশি মিয়ানমারে রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের ওপর গুরুত্ব দেন।

সাতৌরি আশা প্রকাশ করেন, আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈশ্বিক ঐকমত্য গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।

সফরকালে প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেন।