০১:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সাফল্যের মুহূর্তে আল্লাহর শুকরিয়া কীভাবে আদায় করবেন?

বিজয় ও সাফল্য মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত ও দান। তিনি যাকে ইচ্ছে এ মহান নিয়ামত দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছে করেই তা ছিনিয়ে নেন। পৃথিবীর সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কখনোই কোনো দল বা জাতি চিরস্থায়ীভাবে বিজয়ের মুকুট ধরে রাখতে পারে না। জয়-পরাজয় আসতেই থাকে। কোনো সময় একদল বিজয়ী হয় তো কোনো সময় অন্য দল। ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতাই পৃথিবীর স্বাভাবিক গতিধারা। তবে যারা বিজয়লাভের পর বিনয়ের পরিচয় দেয় এবং আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে, আল্লাহ তাদের বিজয়কে সম্মানজনক করে তোলেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর, কখনো আমার অকৃতজ্ঞতা করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫২)

কোরআন ও হাদিসে বিজয়ী ব্যক্তি বা দলের জন্য বিজয় উদযাপনের একটি সুস্পষ্ট পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। তা হলো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা, তাঁর কাছে নতজানু হয়ে সিজদাবনত হওয়া এবং যেকোনো ধরনের অহংকার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ থেকে দূরে থাকা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর দয়াপ্রাপ্ত বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আর রহমানের (আল্লাহর) বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদেরকে সম্বোধন করে, তখন তারা বলে ‘সালাম’।’ (সুরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৩)

এর অর্থ হলো, আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত ও বিজয়ী বান্দারা কখনোই অহংকারের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে না। তারা গর্বিত, স্বৈরাচারী ও অশান্তি সৃষ্টিকারীদের মতো নিজেদের ক্ষমতা জাহির করার চেষ্টা করে না। বরং তাদের আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চলাফেরা হয় ভদ্র, মার্জিত ও সুন্দর চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির মতো। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বিশেষ নিয়ামতপ্রাপ্ত ও বিজয়ী বান্দাদেরকে সরাসরি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি মানুষের সাথেও বিনয়ী ও নম্র আচরণ করার শিক্ষা দিয়েছেন।

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) একাধিক হাদিসে আল্লাহর নেয়ামত বা বিজয় লাভের সময় শুকরিয়া আদায়ের জন্য সিজদায় পতন হওয়ার কথা বলেছেন। তবে এখানে সিজদা বলতে দুটি জিনিস বোঝায়। একটি হলো ‘সালাতুশ শুকর’ বা শুকরিয়ার নামাজ আদায় করা। অন্যটি হলো শুধুমাত্র একটি সিজদা করার মাধ্যমে শুকরিয়া প্রকাশ করা, যাকে ‘সাজদায়ে শুকর’ বা শুকরিয়ার সিজদা বলা হয়। উভয় পদ্ধতিতেই আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা যায়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা আল্লাহর কোনো নিদর্শন (কোনো অসাধারণ নিয়ামত) দেখবে, তখন সিজদা করবে।’ (সুনান আবু দাউদ: ১১৯৯)

আরেকটি হাদিসে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নবীজি (সা.)-এর কাছে যখন কোনো এমন সুসংবাদ বা খুশির খবর পৌঁছাত, যাতে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হতেন, তখন তিনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সিজদায় পতন  হয়ে যেতেন।’ (সুনান আবু দাউদ: ২৭৭৬)

শুকরিয়ার নামাজ বা সালাতুশ শুকর আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাতের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কমপক্ষে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। যেকোনো নফল নামাজের মতোই এ নামাজ পড়তে হয়।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

সাফল্যের মুহূর্তে আল্লাহর শুকরিয়া কীভাবে আদায় করবেন?

প্রকাশিত হয়েছে: ০৬:২৫:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বিজয় ও সাফল্য মহান আল্লাহ তায়ালার এক বিশেষ নেয়ামত ও দান। তিনি যাকে ইচ্ছে এ মহান নিয়ামত দান করেন এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছে করেই তা ছিনিয়ে নেন। পৃথিবীর সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী কখনোই কোনো দল বা জাতি চিরস্থায়ীভাবে বিজয়ের মুকুট ধরে রাখতে পারে না। জয়-পরাজয় আসতেই থাকে। কোনো সময় একদল বিজয়ী হয় তো কোনো সময় অন্য দল। ইতিহাসের এই ধারাবাহিকতাই পৃথিবীর স্বাভাবিক গতিধারা। তবে যারা বিজয়লাভের পর বিনয়ের পরিচয় দেয় এবং আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে, আল্লাহ তাদের বিজয়কে সম্মানজনক করে তোলেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। আর তোমরা আমার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর, কখনো আমার অকৃতজ্ঞতা করো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫২)

কোরআন ও হাদিসে বিজয়ী ব্যক্তি বা দলের জন্য বিজয় উদযাপনের একটি সুস্পষ্ট পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে। তা হলো আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা, তাঁর কাছে নতজানু হয়ে সিজদাবনত হওয়া এবং যেকোনো ধরনের অহংকার ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ থেকে দূরে থাকা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর দয়াপ্রাপ্ত বান্দাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আর রহমানের (আল্লাহর) বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং অজ্ঞ লোকেরা যখন তাদেরকে সম্বোধন করে, তখন তারা বলে ‘সালাম’।’ (সুরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৩)

এর অর্থ হলো, আল্লাহর রহমতপ্রাপ্ত ও বিজয়ী বান্দারা কখনোই অহংকারের সঙ্গে বুক ফুলিয়ে চলাফেরা করে না। তারা গর্বিত, স্বৈরাচারী ও অশান্তি সৃষ্টিকারীদের মতো নিজেদের ক্ষমতা জাহির করার চেষ্টা করে না। বরং তাদের আচার-আচরণ, কথাবার্তা ও চলাফেরা হয় ভদ্র, মার্জিত ও সুন্দর চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির মতো। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বিশেষ নিয়ামতপ্রাপ্ত ও বিজয়ী বান্দাদেরকে সরাসরি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি মানুষের সাথেও বিনয়ী ও নম্র আচরণ করার শিক্ষা দিয়েছেন।

প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) একাধিক হাদিসে আল্লাহর নেয়ামত বা বিজয় লাভের সময় শুকরিয়া আদায়ের জন্য সিজদায় পতন হওয়ার কথা বলেছেন। তবে এখানে সিজদা বলতে দুটি জিনিস বোঝায়। একটি হলো ‘সালাতুশ শুকর’ বা শুকরিয়ার নামাজ আদায় করা। অন্যটি হলো শুধুমাত্র একটি সিজদা করার মাধ্যমে শুকরিয়া প্রকাশ করা, যাকে ‘সাজদায়ে শুকর’ বা শুকরিয়ার সিজদা বলা হয়। উভয় পদ্ধতিতেই আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা যায়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা আল্লাহর কোনো নিদর্শন (কোনো অসাধারণ নিয়ামত) দেখবে, তখন সিজদা করবে।’ (সুনান আবু দাউদ: ১১৯৯)

আরেকটি হাদিসে হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নবীজি (সা.)-এর কাছে যখন কোনো এমন সুসংবাদ বা খুশির খবর পৌঁছাত, যাতে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হতেন, তখন তিনি আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং সিজদায় পতন  হয়ে যেতেন।’ (সুনান আবু দাউদ: ২৭৭৬)

শুকরিয়ার নামাজ বা সালাতুশ শুকর আদায়ের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক রাকাতের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে কমপক্ষে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হয়। যেকোনো নফল নামাজের মতোই এ নামাজ পড়তে হয়।