
আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দম্ভ যতই থাকুক, এর শেকড় কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতে গড়া। ১৯৫০ সালে নির্মিত এ ঘাঁটির রানওয়ে তৈরি হয় ১৯৭৯ সালে, যা পরবর্তী এক দশক সোভিয়েতরা পূর্ণভাবে ব্যবহার করে। ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্র তা দখলে নিয়ে বিশাল অবকাঠামো তৈরি করে নেয়, অথচ ইতিহাস বলছে—এ ঘাঁটির ভিত আসলে শত্রু সোভিয়েতের হাতেই স্থাপিত হয়েছিল।
কাবুল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে, হিন্দুকুশ পর্বতের নিকটবর্তী অঞ্চলে বাগরাম বিমানঘাঁটির অবস্থান। প্রায় ৩০ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এ ঘাঁটি আফগানিস্তানের সামরিক ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত জায়গাগুলোর একটি। প্রথমে ১৯৫০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন এখানে বিমানঘাঁটির ভিত্তি স্থাপন করে। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপের সময় সোভিয়েতরা এখানে রানওয়ে নির্মাণ করে নেয়। দশ বছর ধরে তারা ঘাঁটির পূর্ণ ব্যবহার করে।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনেক সময়ই থাকে যে বাগরাম তাদের গড়া আধুনিক সামরিক ঘাঁটি, কিন্তু সত্য হলো—২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন আগ্রাসনের পর তারা এটি দখল করে নেয়। এরপর ঘাঁটির অবকাঠামো উন্নয়নে ৯৬ মিলিয়ন ডলার খরচ করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ভিত্তি আর প্রাথমিক কাঠামো কিন্তু ছিল পুরোপুরি সোভিয়েতের হাতে গড়া। যে শক্তিকে শত্রু মনে করত, সেই শত্রুর তৈরি ঘাঁটিই পরবর্তী দুই দশক ধরে মার্কিন বাহিনী নিজেদের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।
বাগরাম বিমানঘাঁটিকে যুক্তরাষ্ট্র শুধু একটি বিমানঘাঁটি হিসেবেই ব্যবহার করেনি, বরং এটিকে বানিয়ে তোলে ন্যাটো বাহিনীর কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার। ২০০১ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত এখান থেকেই তারা আফগানিস্তান জুড়ে সব ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। ভেতরে ছিল আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা—সুপার মার্কেট, হাসপাতাল, এমনকি পাঁচতারকা মানের রেস্টুরেন্ট পর্যন্ত। ঘাঁটির চারপাশ ছিল বুলেটপ্রুফ দেয়ালে সুরক্ষিত।
২০২১ সালে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান থেকে চূড়ান্তভাবে সরে যাওয়ার আগে বাগরাম বিমানঘাঁটিই ছিল তাদের শেষ ভরসাস্থল। এখানেই সমবেত হয়ে তারা আফগান মিশনের শেষ পর্যায় সম্পন্ন করে। ফলে এ ঘাঁটিটি শুধু সামরিক দিক থেকেই নয়, আফগানিস্তানে মার্কিন উপস্থিতির প্রতীক হিসেবেও ইতিহাসে জায়গা করে নিয়েছে।
বাগরাম বিমানঘাঁটি এক জটিল ইতিহাসের সাক্ষী। সোভিয়েতদের হাতে নির্মিত এই ঘাঁটি পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র দুই দশক ধরে ব্যবহার করেছে। আজ এটি পরিণত হয়েছে এক ঐতিহাসিক প্রতীক হিসেবে—যা মনে করিয়ে দেয়, পরাশক্তিগুলোর দখলদারি খেলায় আফগানিস্তান কতবারই না ব্যবহৃত হয়েছে।