১০:০৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর বক্তব্যে কয়েকশ কূটনীতিকের ওয়াকআউট

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বক্তব্য শুরু করতেই নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এ অধিবেশনের পোডিয়ামে নেতানিয়াহু বক্তৃতা দিতে দাঁড়াতেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান বিশ্বের কয়েকশ কূটনীতিক।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ওয়াকআউটের সারিতে শুধু আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রতিনিধিরাই ছিলেন না। আফ্রিকা ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকও নেতানিয়াহুর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে কক্ষ ত্যাগ করেন। তাদের এই প্রতিবাদমূলক অবস্থান বিশ্ব সম্প্রদায়ের চোখে নেতানিয়াহুর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।

কূটনীতিকদের বেরিয়ে যাওয়ার পর নেতানিয়াহুর সমর্থকরা জোরে জোরে তালি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। উপস্থিত সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন নেতানিয়াহুর স্ত্রী সারা নেতানিয়াহু এবং নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস। এ সময় সমর্থকদের তালি দিয়ে ওয়াকআউটের প্রভাব আড়াল করতে চেষ্টা করা হয়।

ভাষণে নেতানিয়াহু ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধের প্রসঙ্গ তোলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি কোর্টে বিশেষ একটি পিন সাঁটিয়ে আনেন, যাতে একটি কিউআর কোড ছিল। কক্ষে উপস্থিত সবাইকে তিনি সেই কোড স্ক্যান করে হামাসের ভিডিও দেখার আহ্বান জানান। তার দাবি, হামাস ইসরায়েলের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাই তারা প্রতিরক্ষামূলকভাবে গাজায় অভিযান চালাচ্ছে।

নেতানিয়াহু গর্বভরে দাবি করেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ইতিহাসের অন্যতম বড় সামরিক সফলতা অর্জন করেছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, গাজায় এখনো হামাসের যোদ্ধারা সক্রিয় রয়েছে, যাদের নির্মূল করতে আরও কিছু সময় লাগবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, হামাসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস না করা পর্যন্ত ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, বিশ্ববাসী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার কথা ভুলে গেছে। কিন্তু ইসরায়েলি জনগণ এই হামলা কখনো ভুলবে না। তিনি বলেন, হামাস আবারও নতুন করে ইসরায়েলে হামলার হুমকি দিচ্ছে, যা তাদের নির্মূল করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

নেতানিয়াহুর বক্তব্য শোনানোর জন্য গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনারা লাউডস্পিকার বসায়। তিনি দাবি করেন, গাজার মানুষের মোবাইল ফোনেও তার বক্তব্য সম্প্রচার করা হচ্ছে। তার ভাষণে তিনি জিম্মিদের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের সবাইকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত তিনি থামবেন না।

হামাসের উদ্দেশে নেতানিয়াহু হুমকি দেন, যদি তারা অস্ত্র ফেলে দেয় এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়, তাহলে যুদ্ধ তাৎক্ষণিকভাবে শেষ হয়ে যাবে। তবে যুদ্ধ শেষে গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে এবং এর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে ইসরায়েল। পরবর্তীতে গাজায় এমন একটি বেসামরিক সরকার গঠন করা হবে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করবে।

ট্যাগ

জাতিসংঘে নেতানিয়াহুর বক্তব্যে কয়েকশ কূটনীতিকের ওয়াকআউট

প্রকাশিত হয়েছে: ০৯:২৭:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বক্তব্য শুরু করতেই নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত এ অধিবেশনের পোডিয়ামে নেতানিয়াহু বক্তৃতা দিতে দাঁড়াতেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান বিশ্বের কয়েকশ কূটনীতিক।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ওয়াকআউটের সারিতে শুধু আরব ও মুসলিম দেশগুলোর প্রতিনিধিরাই ছিলেন না। আফ্রিকা ও ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকও নেতানিয়াহুর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে কক্ষ ত্যাগ করেন। তাদের এই প্রতিবাদমূলক অবস্থান বিশ্ব সম্প্রদায়ের চোখে নেতানিয়াহুর গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।

কূটনীতিকদের বেরিয়ে যাওয়ার পর নেতানিয়াহুর সমর্থকরা জোরে জোরে তালি দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। উপস্থিত সমর্থকদের মধ্যে ছিলেন নেতানিয়াহুর স্ত্রী সারা নেতানিয়াহু এবং নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস। এ সময় সমর্থকদের তালি দিয়ে ওয়াকআউটের প্রভাব আড়াল করতে চেষ্টা করা হয়।

ভাষণে নেতানিয়াহু ইরানের সঙ্গে সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধের প্রসঙ্গ তোলেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানান। একই সঙ্গে তিনি কোর্টে বিশেষ একটি পিন সাঁটিয়ে আনেন, যাতে একটি কিউআর কোড ছিল। কক্ষে উপস্থিত সবাইকে তিনি সেই কোড স্ক্যান করে হামাসের ভিডিও দেখার আহ্বান জানান। তার দাবি, হামাস ইসরায়েলের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাই তারা প্রতিরক্ষামূলকভাবে গাজায় অভিযান চালাচ্ছে।

নেতানিয়াহু গর্বভরে দাবি করেন, ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ইতিহাসের অন্যতম বড় সামরিক সফলতা অর্জন করেছে। তবে তিনি স্বীকার করেন, গাজায় এখনো হামাসের যোদ্ধারা সক্রিয় রয়েছে, যাদের নির্মূল করতে আরও কিছু সময় লাগবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, হামাসকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস না করা পর্যন্ত ইসরায়েলের সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত নেতানিয়াহু অভিযোগ করেন, বিশ্ববাসী ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার কথা ভুলে গেছে। কিন্তু ইসরায়েলি জনগণ এই হামলা কখনো ভুলবে না। তিনি বলেন, হামাস আবারও নতুন করে ইসরায়েলে হামলার হুমকি দিচ্ছে, যা তাদের নির্মূল করার প্রয়োজনীয়তাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

নেতানিয়াহুর বক্তব্য শোনানোর জন্য গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি সেনারা লাউডস্পিকার বসায়। তিনি দাবি করেন, গাজার মানুষের মোবাইল ফোনেও তার বক্তব্য সম্প্রচার করা হচ্ছে। তার ভাষণে তিনি জিম্মিদের উদ্দেশ্যে বলেন, তাদের সবাইকে উদ্ধার না করা পর্যন্ত তিনি থামবেন না।

হামাসের উদ্দেশে নেতানিয়াহু হুমকি দেন, যদি তারা অস্ত্র ফেলে দেয় এবং জিম্মিদের মুক্তি দেয়, তাহলে যুদ্ধ তাৎক্ষণিকভাবে শেষ হয়ে যাবে। তবে যুদ্ধ শেষে গাজাকে নিরস্ত্রীকরণ করা হবে এবং এর নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ করবে ইসরায়েল। পরবর্তীতে গাজায় এমন একটি বেসামরিক সরকার গঠন করা হবে, যা ইসরায়েলের সঙ্গে কাজ করবে।