
আসন্ন ২০২৬ সালের হজযাত্রীদের জন্য বিমান ভাড়া জনপ্রতি ১২ হাজার ৯৯০ টাকা কমিয়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ধর্ম উপদেষ্টা আ. ফ. ম খালিদ হোসেন সরকারি তিনটি প্যাকেজের ঘোষণা দেন। তিনি জানান, গত বছরের মতো এবারও সৌদি প্রান্তের চূড়ান্ত ব্যয়ের হিসাব না পাওয়ায় সম্ভাব্য খরচের ভিত্তিতে প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সৌদি সরকারের ঘোষণার ভিত্তিতে খরচ বৃদ্ধি বা হ্রাস হলে সেই অনুযায়ী টাকা সমন্বয় করা হবে।
ঘোষণা অনুযায়ী, গত বছর বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। এবার তা কমিয়ে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া হজ প্যাকেজে সৌদি ও বাংলাদেশ—উভয় প্রান্তের আবাসন, পরিবহন, জমজম পানি, মিনার সার্ভিস চার্জ, স্বাস্থ্যবীমা, ভিসা ফি, প্রশিক্ষণ ফি, লাগেজ পরিবহনসহ সব ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে ভ্যাট ও ট্যাক্সের বিষয়টি গত বছরের মতো এবারও বিমান ভাড়ার বাইরে রাখা হয়েছে।
এবারের হজ প্যাকেজে নতুন সংযোজন হলো ‘দমে শোকর’। নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ৭২০ সৌদি রিয়াল বা প্রায় ২৩ হাজার ৬৫২ টাকা জমাদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবীমা ব্যয় বেড়ে হয়েছে ১৩০ সৌদি রিয়াল, যা গত বছর ছিল মাত্র ২১ রিয়াল। মিনার তাঁবু ভাড়া বেড়েছে ৪.২ শতাংশ। পাশাপাশি সৌদি রিয়ালের বিনিময় হারও বেড়েছে, বর্তমানে প্রতি রিয়াল ৩২ টাকা ৮৫ পয়সা ধরা হয়েছে।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। হজ প্যাকেজ-১ (বিশেষ) এর খরচ ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা, যেখানে হারাম শরীফ থেকে সর্বোচ্চ ৭০০ মিটারের মধ্যে আবাসন দেওয়া হবে। হজ প্যাকেজ-২ এর খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা, যেখানে আবাসন হারাম থেকে ১.২-১.৮ কিলোমিটারের মধ্যে। সবচেয়ে সাশ্রয়ী হজ প্যাকেজ-৩ এর খরচ ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা, যেখানে মক্কার আজিজিয়া এলাকায় আবাসন দেওয়া হবে। তিনটি প্যাকেজেই মিনায় তাঁবু ও আরাফায় খাবারের ব্যবস্থা করা হবে মোয়াল্লেমের মাধ্যমে।
বেসরকারি মাধ্যমে নির্ধারিত সাধারণ হজ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৯ হাজার ১৮৫ টাকা। এর বাইরে এজেন্সিগুলো দুটি ভিন্ন প্যাকেজ দিতে পারবে, তবে কোনোটির মূল্যই ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকার কম হতে পারবে না।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০২৬ সালের ২৬ মে হজ অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ থেকে এবার সম্ভাব্য এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ করতে পারবেন। প্রাথমিক নিবন্ধন ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে, যা চলবে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রাথমিক নিবন্ধনের জন্য ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। ১২ বছর বা তার বেশি বয়সের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তিরাই হজে যেতে পারবেন। ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের সঙ্গে অবশ্যই ৫০ বছরের নিচে কাউকে নিতে হবে। এছাড়া গুরুতর অসুস্থদের হজে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সব টাকা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। আগামী ১৮ এপ্রিল থেকে হজ ফ্লাইট শুরু হবে।
বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ সর্বাধিক হজযাত্রী প্রেরণকারী দেশ। গত বছর বাংলাদেশ থেকে ৮৭ হাজার ১০০ জন হজ করেছেন। সরকার আশা করছে এবারও নির্ধারিত কোটা পূর্ণ হবে।