০১:২১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের ২০২৫ সালের ২০-দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনা কি কি

১. গাজা হবে এক ডি-র‌্যাডিকালাইজড (উগ্রপন্থামুক্ত) ও সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল, যা আর প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করবে না।

২. গাজা পুনর্গঠিত হবে গাজার মানুষের কল্যাণে। যারা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট কষ্ট ভোগ করেছে, তাদের জন্য উন্নয়ন হবে মূল লক্ষ্য।

৩. উভয় পক্ষ যদি এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, যুদ্ধ অবিলম্বে শেষ হবে। ইসরায়েলি বাহিনী সম্মত সীমারেখায় পিছু হটবে এবং জিম্মিদের মুক্তির প্রস্তুতি নেবে। এই সময়ে আকাশ ও আর্টিলারি হামলাসহ সব ধরনের সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে। যুদ্ধের লাইন অপরিবর্তিত থাকবে যতক্ষণ না পূর্ণ পর্যায়ে ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ হয়।

৪. ইসরায়েল প্রকাশ্যে এই চুক্তি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মি—জীবিত বা মৃত—ফেরত দেওয়া হবে।

৫. সব জিম্মি ফেরত আসার পর ইসরায়েল মুক্তি দেবে: ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিকে,  – এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আটক ১৭০০ জন গাজাবাসীকে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও অন্তর্ভুক্ত। – প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে, ইসরায়েল ১৫ জন মৃত গাজাবাসীর মরদেহ ফেরত দেবে।

৬. সব জিম্মি ফেরত আসার পর, যে সব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সম্মত হবে এবং তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে, তারা ক্ষমা পাবে। আর যারা গাজা ছাড়তে চাইবে, তাদের নিরাপদে গ্রহণকারী দেশে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

৭. চুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই গাজায় পূর্ণ সহায়তা পাঠানো হবে। অন্তত সেই পরিমাণ সাহায্য যা ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখের মানবিক সহায়তা চুক্তিতে নির্ধারিত হয়েছিল। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত: – পানি, বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন অবকাঠামোর পুনর্নির্মাণ – হাসপাতাল ও বেকারিগুলোর পুনর্বাসন, – ধ্বংসস্তুপ সরাতে ও রাস্তা খুলতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রবেশের অনুমতি।

৮. গাজায় সাহায্যের প্রবেশ ও বিতরণ চলবে বাধাহীনভাবে জাতিসংঘ ও তার সংস্থাগুলো, রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। রাফাহ সীমান্ত দুই দিকেই খোলা থাকবে, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫-এর চুক্তিতে নির্ধারিত একই ব্যবস্থার অধীনে।

৯. গাজা অস্থায়ীভাবে পরিচালিত হবে একটি টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির মাধ্যমে। এই কমিটি গাজার মানুষের দৈনন্দিন জনসেবা ও পৌরসেবা চালাবে। এতে যোগ দেবেন যোগ্য ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। এর তত্ত্বাবধানে থাকবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক অস্থায়ী সংস্থা—“বোর্ড অব পিস”। – এর প্রধান ও চেয়ারম্যান হবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প। – অন্য সদস্য ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে, যার মধ্যে থাকবেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। – এই সংস্থা গাজার পুনর্গঠনের জন্য কাঠামো নির্ধারণ করবে ও অর্থায়ন পরিচালনা করবে।

এই ব্যবস্থা চলবে যতদিন না পর্যন্ত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কার প্রোগ্রাম সম্পন্ন করে গাজা পুনর্দখল ও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় (যেমন ট্রাম্পের ২০২০ সালের শান্তি পরিকল্পনা ও সৌদি-ফরাসি প্রস্তাবে বর্ণিত)।

সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক মান অনুসারে আধুনিক ও দক্ষ শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যাতে জনগণ উপকৃত হয় এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়।

১০. ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় গাজা পুনর্গঠন ও অর্থনীতিকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর জন্য মধ্যপ্রাচ্যের কিছু আধুনিক সমৃদ্ধশালী শহর নির্মাণে যেসব বিশেষজ্ঞ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের দিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে আসা বহু বিনিয়োগ প্রস্তাব ও উন্নয়ন পরিকল্পনা এতে অন্তর্ভুক্ত হবে। এর লক্ষ্য হবে নিরাপত্তা ও শাসন কাঠামোর সঙ্গে মিলিয়ে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, যাতে কর্মসংস্থান, সুযোগ ও আশার সৃষ্টি হয় ভবিষ্যৎ গাজার জন্য।

১১. একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (Special Economic Zone) গঠন করা হবে, যেখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিশেষ শুল্ক ও প্রবেশাধিকারের হার নির্ধারণ করা হবে।

১২. কাউকে জোর করে গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না। যারা যেতে চাইবে তারা স্বাধীনভাবে যেতে পারবে এবং চাইলে আবার ফিরতেও পারবে। তবে মানুষকে থেকে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হবে এবং তাদের একটি উন্নত গাজা গড়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

১৩. হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী গাজার শাসনব্যবস্থায় কোনো ভূমিকা রাখবে না—সরাসরি, পরোক্ষভাবে বা অন্য কোনো আকারে। সব ধরনের সামরিক, সন্ত্রাসী ও আক্রমণাত্মক অবকাঠামো—যেমন টানেল ও অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র—ধ্বংস করা হবে এবং পুনর্নির্মাণ করা যাবে না। – গাজা নিরস্ত্রীকরণের একটি প্রক্রিয়া চলবে স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে।

– এতে অস্ত্রসমূহ স্থায়ীভাবে ব্যবহার অযোগ্য করা হবে একটি সমঝোতাপূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। – আন্তর্জাতিকভাবে অর্থায়িত একটি অস্ত্র-বাইব্যাক ও পুনঃসংহতকরণ কর্মসূচি চালু করা হবে, যার সবকিছু স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা যাচাই করবেন। – “নতুন গাজা” প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য।

১৪. আঞ্চলিক অংশীদাররা গ্যারান্টি দেবে যে হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী তাদের অঙ্গীকার মেনে চলবে, এবং নতুন গাজা প্রতিবেশী বা নিজ জনগণের জন্য কোনো হুমকি হয়ে উঠবে না।

১৫. যুক্তরাষ্ট্র আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে একটি অস্থায়ী “ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স” (ISF) গঠন করবে, যা অবিলম্বে গাজায় মোতায়েন হবে।

– এই বাহিনী গাজায় যাচাইকৃত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে। – জর্ডান ও মিসরের সঙ্গে পরামর্শ করবে, যাদের এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে।  – এ বাহিনী দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমাধান হিসেবে কাজ করবে।  – ISF ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে মিলে সীমান্ত এলাকাগুলো নিরাপদ রাখতে কাজ করবে, নতুনভাবে প্রশিক্ষিত ফিলিস্তিনি পুলিশের সহযোগিতায়। – সবচেয়ে জরুরি হবে গাজায় অস্ত্রশস্ত্র প্রবেশ ঠেকানো এবং দ্রুত ও নিরাপদভাবে পণ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা যাতে গাজা পুনর্গঠন ও উন্নয়ন সম্ভব হয়। – এজন্য পক্ষগুলো একটি “ডিকনফ্লিকশন মেকানিজম” (সংঘাত-নিবারণ ব্যবস্থা) গ্রহণ করবে।

১৬. ইসরায়েল গাজা দখল করবে না বা গাজা অন্তর্ভুক্ত করবে না।  ISF নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করলে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ধাপে ধাপে গাজা থেকে প্রত্যাহার হবে।

প্রত্যাহার হবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড, মাইলফলক ও সময়সীমার ভিত্তিতে, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, ISF, গ্যারান্টর রাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতায় নির্ধারিত হবে।

এর লক্ষ্য হবে এমন এক নিরাপদ গাজা, যা আর কখনো ইসরায়েল, মিসর বা তাদের নাগরিকদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে না।

বাস্তবে, ইসরায়েলি বাহিনী ধাপে ধাপে গাজার দখলকৃত এলাকা ISF-এর কাছে হস্তান্তর করবে, যা চলবে যতক্ষণ না তারা পুরোপুরি গাজা থেকে সরে দাঁড়ায়।

তবে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী উপস্থিতি বজায় থাকবে যতদিন না গাজা নতুন করে কোনো সন্ত্রাসী হুমকি থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়।

১৭. যদি হামাস এ প্রস্তাব বিলম্বিত করে বা প্রত্যাখ্যান করে, তবে উপরের পরিকল্পনা— সহায়তা কার্যক্রমের বিস্তার—শুরু হবে গাজার সেই অঞ্চলগুলোতে, যেগুলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনী থেকে ISF-এর হাতে হস্তান্তরিত হবে এবং সন্ত্রাসমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

১৮. একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু হবে, যা সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তি তৈরী করবে। এর লক্ষ্য হবে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মানসিকতা ও বর্ণনা পরিবর্তন করা, শান্তি থেকে যে সুফল পাওয়া যায় তা তুলে ধরে।

১৯. গাজার পুনর্গঠন অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার প্রোগ্রাম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে, তখনই হয়তো ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হবে—যা ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা।

২০. যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপ শুরু করবে, যাতে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের জন্য একটি রাজনৈতিক দিগন্তে পৌঁছানো যায়।

 

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

ট্রাম্পের ২০২৫ সালের ২০-দফা গাজা শান্তি পরিকল্পনা কি কি

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:৩৬:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

১. গাজা হবে এক ডি-র‌্যাডিকালাইজড (উগ্রপন্থামুক্ত) ও সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল, যা আর প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি তৈরি করবে না।

২. গাজা পুনর্গঠিত হবে গাজার মানুষের কল্যাণে। যারা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট কষ্ট ভোগ করেছে, তাদের জন্য উন্নয়ন হবে মূল লক্ষ্য।

৩. উভয় পক্ষ যদি এই প্রস্তাবে সম্মত হয়, যুদ্ধ অবিলম্বে শেষ হবে। ইসরায়েলি বাহিনী সম্মত সীমারেখায় পিছু হটবে এবং জিম্মিদের মুক্তির প্রস্তুতি নেবে। এই সময়ে আকাশ ও আর্টিলারি হামলাসহ সব ধরনের সামরিক অভিযান স্থগিত থাকবে। যুদ্ধের লাইন অপরিবর্তিত থাকবে যতক্ষণ না পূর্ণ পর্যায়ে ধাপে ধাপে প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ হয়।

৪. ইসরায়েল প্রকাশ্যে এই চুক্তি গ্রহণের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সব জিম্মি—জীবিত বা মৃত—ফেরত দেওয়া হবে।

৫. সব জিম্মি ফেরত আসার পর ইসরায়েল মুক্তি দেবে: ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিকে,  – এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আটক ১৭০০ জন গাজাবাসীকে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুরাও অন্তর্ভুক্ত। – প্রতিটি ইসরায়েলি জিম্মির মৃতদেহ ফেরত দেওয়ার বিনিময়ে, ইসরায়েল ১৫ জন মৃত গাজাবাসীর মরদেহ ফেরত দেবে।

৬. সব জিম্মি ফেরত আসার পর, যে সব হামাস সদস্য শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে সম্মত হবে এবং তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে, তারা ক্ষমা পাবে। আর যারা গাজা ছাড়তে চাইবে, তাদের নিরাপদে গ্রহণকারী দেশে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।

৭. চুক্তি গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই গাজায় পূর্ণ সহায়তা পাঠানো হবে। অন্তত সেই পরিমাণ সাহায্য যা ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ তারিখের মানবিক সহায়তা চুক্তিতে নির্ধারিত হয়েছিল। এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত: – পানি, বিদ্যুৎ, পয়োনিষ্কাশন অবকাঠামোর পুনর্নির্মাণ – হাসপাতাল ও বেকারিগুলোর পুনর্বাসন, – ধ্বংসস্তুপ সরাতে ও রাস্তা খুলতে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি প্রবেশের অনুমতি।

৮. গাজায় সাহায্যের প্রবেশ ও বিতরণ চলবে বাধাহীনভাবে জাতিসংঘ ও তার সংস্থাগুলো, রেড ক্রিসেন্ট এবং অন্যান্য নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। রাফাহ সীমান্ত দুই দিকেই খোলা থাকবে, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫-এর চুক্তিতে নির্ধারিত একই ব্যবস্থার অধীনে।

৯. গাজা অস্থায়ীভাবে পরিচালিত হবে একটি টেকনোক্র্যাটিক, অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির মাধ্যমে। এই কমিটি গাজার মানুষের দৈনন্দিন জনসেবা ও পৌরসেবা চালাবে। এতে যোগ দেবেন যোগ্য ফিলিস্তিনি ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা। এর তত্ত্বাবধানে থাকবে একটি নতুন আন্তর্জাতিক অস্থায়ী সংস্থা—“বোর্ড অব পিস”। – এর প্রধান ও চেয়ারম্যান হবেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প। – অন্য সদস্য ও রাষ্ট্রপ্রধানদের নাম পরে ঘোষণা করা হবে, যার মধ্যে থাকবেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। – এই সংস্থা গাজার পুনর্গঠনের জন্য কাঠামো নির্ধারণ করবে ও অর্থায়ন পরিচালনা করবে।

এই ব্যবস্থা চলবে যতদিন না পর্যন্ত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সংস্কার প্রোগ্রাম সম্পন্ন করে গাজা পুনর্দখল ও কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয় (যেমন ট্রাম্পের ২০২০ সালের শান্তি পরিকল্পনা ও সৌদি-ফরাসি প্রস্তাবে বর্ণিত)।

সর্বোত্তম আন্তর্জাতিক মান অনুসারে আধুনিক ও দক্ষ শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, যাতে জনগণ উপকৃত হয় এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট হয়।

১০. ট্রাম্পের অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় গাজা পুনর্গঠন ও অর্থনীতিকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর জন্য মধ্যপ্রাচ্যের কিছু আধুনিক সমৃদ্ধশালী শহর নির্মাণে যেসব বিশেষজ্ঞ ভূমিকা রেখেছেন, তাদের দিয়ে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে আসা বহু বিনিয়োগ প্রস্তাব ও উন্নয়ন পরিকল্পনা এতে অন্তর্ভুক্ত হবে। এর লক্ষ্য হবে নিরাপত্তা ও শাসন কাঠামোর সঙ্গে মিলিয়ে বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা, যাতে কর্মসংস্থান, সুযোগ ও আশার সৃষ্টি হয় ভবিষ্যৎ গাজার জন্য।

১১. একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (Special Economic Zone) গঠন করা হবে, যেখানে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিশেষ শুল্ক ও প্রবেশাধিকারের হার নির্ধারণ করা হবে।

১২. কাউকে জোর করে গাজা ছাড়তে বাধ্য করা হবে না। যারা যেতে চাইবে তারা স্বাধীনভাবে যেতে পারবে এবং চাইলে আবার ফিরতেও পারবে। তবে মানুষকে থেকে যাওয়ার জন্য উৎসাহিত করা হবে এবং তাদের একটি উন্নত গাজা গড়ার সুযোগ দেওয়া হবে।

১৩. হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী গাজার শাসনব্যবস্থায় কোনো ভূমিকা রাখবে না—সরাসরি, পরোক্ষভাবে বা অন্য কোনো আকারে। সব ধরনের সামরিক, সন্ত্রাসী ও আক্রমণাত্মক অবকাঠামো—যেমন টানেল ও অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র—ধ্বংস করা হবে এবং পুনর্নির্মাণ করা যাবে না। – গাজা নিরস্ত্রীকরণের একটি প্রক্রিয়া চলবে স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে।

– এতে অস্ত্রসমূহ স্থায়ীভাবে ব্যবহার অযোগ্য করা হবে একটি সমঝোতাপূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। – আন্তর্জাতিকভাবে অর্থায়িত একটি অস্ত্র-বাইব্যাক ও পুনঃসংহতকরণ কর্মসূচি চালু করা হবে, যার সবকিছু স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা যাচাই করবেন। – “নতুন গাজা” প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য।

১৪. আঞ্চলিক অংশীদাররা গ্যারান্টি দেবে যে হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী তাদের অঙ্গীকার মেনে চলবে, এবং নতুন গাজা প্রতিবেশী বা নিজ জনগণের জন্য কোনো হুমকি হয়ে উঠবে না।

১৫. যুক্তরাষ্ট্র আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করে একটি অস্থায়ী “ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাবিলাইজেশন ফোর্স” (ISF) গঠন করবে, যা অবিলম্বে গাজায় মোতায়েন হবে।

– এই বাহিনী গাজায় যাচাইকৃত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে। – জর্ডান ও মিসরের সঙ্গে পরামর্শ করবে, যাদের এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে।  – এ বাহিনী দীর্ঘমেয়াদি অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমাধান হিসেবে কাজ করবে।  – ISF ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে মিলে সীমান্ত এলাকাগুলো নিরাপদ রাখতে কাজ করবে, নতুনভাবে প্রশিক্ষিত ফিলিস্তিনি পুলিশের সহযোগিতায়। – সবচেয়ে জরুরি হবে গাজায় অস্ত্রশস্ত্র প্রবেশ ঠেকানো এবং দ্রুত ও নিরাপদভাবে পণ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা যাতে গাজা পুনর্গঠন ও উন্নয়ন সম্ভব হয়। – এজন্য পক্ষগুলো একটি “ডিকনফ্লিকশন মেকানিজম” (সংঘাত-নিবারণ ব্যবস্থা) গ্রহণ করবে।

১৬. ইসরায়েল গাজা দখল করবে না বা গাজা অন্তর্ভুক্ত করবে না।  ISF নিয়ন্ত্রণ ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করলে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ধাপে ধাপে গাজা থেকে প্রত্যাহার হবে।

প্রত্যাহার হবে নির্দিষ্ট মানদণ্ড, মাইলফলক ও সময়সীমার ভিত্তিতে, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনী, ISF, গ্যারান্টর রাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সমঝোতায় নির্ধারিত হবে।

এর লক্ষ্য হবে এমন এক নিরাপদ গাজা, যা আর কখনো ইসরায়েল, মিসর বা তাদের নাগরিকদের জন্য হুমকি সৃষ্টি করবে না।

বাস্তবে, ইসরায়েলি বাহিনী ধাপে ধাপে গাজার দখলকৃত এলাকা ISF-এর কাছে হস্তান্তর করবে, যা চলবে যতক্ষণ না তারা পুরোপুরি গাজা থেকে সরে দাঁড়ায়।

তবে একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী উপস্থিতি বজায় থাকবে যতদিন না গাজা নতুন করে কোনো সন্ত্রাসী হুমকি থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ হয়।

১৭. যদি হামাস এ প্রস্তাব বিলম্বিত করে বা প্রত্যাখ্যান করে, তবে উপরের পরিকল্পনা— সহায়তা কার্যক্রমের বিস্তার—শুরু হবে গাজার সেই অঞ্চলগুলোতে, যেগুলো ইসরায়েলি সেনাবাহিনী থেকে ISF-এর হাতে হস্তান্তরিত হবে এবং সন্ত্রাসমুক্ত ঘোষণা করা হবে।

১৮. একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ প্রক্রিয়া শুরু হবে, যা সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তি তৈরী করবে। এর লক্ষ্য হবে ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের মানসিকতা ও বর্ণনা পরিবর্তন করা, শান্তি থেকে যে সুফল পাওয়া যায় তা তুলে ধরে।

১৯. গাজার পুনর্গঠন অগ্রসর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার প্রোগ্রাম সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে, তখনই হয়তো ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র গঠনের জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পথ তৈরি হবে—যা ফিলিস্তিনি জনগণের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা।

২০. যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সংলাপ শুরু করবে, যাতে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের জন্য একটি রাজনৈতিক দিগন্তে পৌঁছানো যায়।