০৯:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পারমাণবিক কর্মসূচি কখনো ত্যাগ করা হবে না’ কিম সন জিয়ং:

 উত্তর কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন জিয়ং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সরাসরি ঘোষণা করেছেন যে, দেশটি কখনই তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করবে না। সোমবার দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করার যে দাবি তা তাদের সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়ার সমতুল্য এবং এই ধরনের চাপকে পিয়ংইয়ং কোনভাবে মেনে নেবে না। এর মধ্য দিয়ে উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে আবারও কড়া অবস্থান তুলে ধরল।

কিম সন জিয়ং আরও বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র অধিকার তাদের দেশের সংবিধানে সুরক্ষিত আছে এবং এটি কোনো আলোচনার বিষয় নয়। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের যৌথ সামরিক মহড়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে এসব মহড়া কোরীয় উপদ্বীপে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে — যা পিয়ংইয়ংকে তার প্রতিরক্ষামূলক সক্ষমতা আরও জোরদার করার পথে ধাক্কা দিচ্ছে।

এটি ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে উত্তর কোরিয়ার পাঠানো প্রতিনিধি জাতিসংঘের সাধারণ আসরে কথা বলছেন। ২০১৮ সালে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্ক সফরে গিয়েছিলেন; এরপর অনেক বছর ধরেই উচ্চস্তরের সরকারি প্রতিনিধির সরাসরি বক্তব্য মাটিতে দেখা যায়নি — এটিই ছিল সেই ধারাবাহিকতাকে ভাঙার বিশেষ এক মুহূর্ত।

অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তেজনা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং তা শুধুমাত্র কূটনীতি, বিশ্বাসঘটিত পুনর্গঠন ও ধীরপ্রক্রিয়ায় অর্জনযোগ্য। লি জে-মিয়ং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন — তবে তিনি স্বীকারও করেছেন যে বাস্তবে এগুলো বাস্তবায়িত করতে সময় ও ব্যাপক কূটনৈতিক প্রয়াস লাগবে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ ক্রমবর্ধমান। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি সূত্র উল্লেখ করেছে যে, উত্তর কোরিয়া বর্তমানে চারটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে, যেগুলো বছরে অন্তত প্রাথমিকভাবে প্রতি কেন্দ্র থেকে মোটামুটি ২০টি করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা থাকতে পারে — এমনই মূল্যায়ন করা হচ্ছে। একই সময়, উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন মাত্র কয়েকদিন আগে তাঁর সামরিক ও পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছেন; তিনি বলেছেন, তাদের পারমাণবিক “ঢাল ও তলোয়ার” আরও ধারালো করতে হবে — যা স্পষ্ট করে দেয় পিয়ংইয়ং প্রতিরক্ষামূলক ও আঘাত হানার সক্ষমতা দুটোকেই বাড়াতে অনড়।

বিশ্লেষণ: কান্ডারি রাজনীতিতে একটি স্থিতিশীল সমাধান আবশ্যক হতে পারে — তবে কিভাবে তা অর্জন করা যাবে তা জটিল। পিয়ংইয়ংয়ের বর্তমান আত্মবিশ্বাসী আচরণ এবং পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত কৌশলগত ভারসাম্যকে ঝুঁকিতে ফেলছে; এতে উত্তর-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও কঠোর ও অনিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান অবশ্যই তাদের প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক নীতিতে সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে পারে; অন্যদিকে চীনা ও রুশ প্রতিক্রিয়া ও ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: এতক্ষণে পিয়ংইয়ংয়ের কড়া অবস্থানের ফলে কূটনৈতিক চ্যানেলে উত্তেজনা ও চাপ বাড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আরোপিত নিষেধাজ্ঞা, কূটনৈতিক একতরফা চাপ ও সামরিক মহড়া চালিয়ে যেতে পারে; অপরদিকে আছে কূটনৈতিক পথ খোলা রাখার প্রচেষ্টা—বিশেষ করে এমন সময় যখন উত্তেজনা কমাতে ব্যালান্সড স্টেপ নেওয়া জরুরি। লি জে-মিয়ংয়ের বক্তব্যে স্পষ্ট যে দক্ষিণ কোরিয়া পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায়, কিন্তু তার জন্য সময়, আস্থা এবং বাস্তবিক কর্মসূচি প্রয়োজন।

উপসংহার: কিম সন জিয়ংয়ের স্পষ্ট ঘোষণার পর উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কিংবা আস্থাভিত্তিক কোনো সমাধান প্রয়োজন হলে তা কেবল কথায় নয় — ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ, আঞ্চলিক অংশীদারের সমন্বয় ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্ভব। এখনকার সময়ের চ্যালেঞ্জ হলো—সীমান্ত উত্তেজনা কমিয়ে কোরীয় উপদ্বীপে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও নতুন করে বড় কোনো সামরিক সংঘাত ঠেকানো।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পারমাণবিক কর্মসূচি কখনো ত্যাগ করা হবে না’ কিম সন জিয়ং:

প্রকাশিত হয়েছে: ১১:৫৪:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 উত্তর কোরিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম সন জিয়ং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সরাসরি ঘোষণা করেছেন যে, দেশটি কখনই তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করবে না। সোমবার দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করার যে দাবি তা তাদের সার্বভৌমত্ব ও অস্তিত্বের অধিকার কেড়ে নেওয়ার সমতুল্য এবং এই ধরনের চাপকে পিয়ংইয়ং কোনভাবে মেনে নেবে না। এর মধ্য দিয়ে উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে আবারও কড়া অবস্থান তুলে ধরল।

কিম সন জিয়ং আরও বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র অধিকার তাদের দেশের সংবিধানে সুরক্ষিত আছে এবং এটি কোনো আলোচনার বিষয় নয়। তিনি সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের যৌথ সামরিক মহড়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং দাবি করেছেন যে এসব মহড়া কোরীয় উপদ্বীপে নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলছে — যা পিয়ংইয়ংকে তার প্রতিরক্ষামূলক সক্ষমতা আরও জোরদার করার পথে ধাক্কা দিচ্ছে।

এটি ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো যে কোনো সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে উত্তর কোরিয়ার পাঠানো প্রতিনিধি জাতিসংঘের সাধারণ আসরে কথা বলছেন। ২০১৮ সালে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্ক সফরে গিয়েছিলেন; এরপর অনেক বছর ধরেই উচ্চস্তরের সরকারি প্রতিনিধির সরাসরি বক্তব্য মাটিতে দেখা যায়নি — এটিই ছিল সেই ধারাবাহিকতাকে ভাঙার বিশেষ এক মুহূর্ত।

অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে-মিয়ং জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে উত্তেজনা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং তা শুধুমাত্র কূটনীতি, বিশ্বাসঘটিত পুনর্গঠন ও ধীরপ্রক্রিয়ায় অর্জনযোগ্য। লি জে-মিয়ং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও পারস্পরিক উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন — তবে তিনি স্বীকারও করেছেন যে বাস্তবে এগুলো বাস্তবায়িত করতে সময় ও ব্যাপক কূটনৈতিক প্রয়াস লাগবে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উদ্বেগ ক্রমবর্ধমান। দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারি সূত্র উল্লেখ করেছে যে, উত্তর কোরিয়া বর্তমানে চারটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র পরিচালনা করছে, যেগুলো বছরে অন্তত প্রাথমিকভাবে প্রতি কেন্দ্র থেকে মোটামুটি ২০টি করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা থাকতে পারে — এমনই মূল্যায়ন করা হচ্ছে। একই সময়, উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন মাত্র কয়েকদিন আগে তাঁর সামরিক ও পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধি করার নির্দেশ দিয়েছেন; তিনি বলেছেন, তাদের পারমাণবিক “ঢাল ও তলোয়ার” আরও ধারালো করতে হবে — যা স্পষ্ট করে দেয় পিয়ংইয়ং প্রতিরক্ষামূলক ও আঘাত হানার সক্ষমতা দুটোকেই বাড়াতে অনড়।

বিশ্লেষণ: কান্ডারি রাজনীতিতে একটি স্থিতিশীল সমাধান আবশ্যক হতে পারে — তবে কিভাবে তা অর্জন করা যাবে তা জটিল। পিয়ংইয়ংয়ের বর্তমান আত্মবিশ্বাসী আচরণ এবং পারমাণবিক সক্ষমতা বৃদ্ধির ইঙ্গিত কৌশলগত ভারসাম্যকে ঝুঁকিতে ফেলছে; এতে উত্তর-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও কঠোর ও অনিশ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান অবশ্যই তাদের প্রতিরক্ষা ও কূটনৈতিক নীতিতে সংশ্লিষ্টতা বাড়াতে পারে; অন্যদিকে চীনা ও রুশ প্রতিক্রিয়া ও ভূমিকা এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: এতক্ষণে পিয়ংইয়ংয়ের কড়া অবস্থানের ফলে কূটনৈতিক চ্যানেলে উত্তেজনা ও চাপ বাড়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা আরোপিত নিষেধাজ্ঞা, কূটনৈতিক একতরফা চাপ ও সামরিক মহড়া চালিয়ে যেতে পারে; অপরদিকে আছে কূটনৈতিক পথ খোলা রাখার প্রচেষ্টা—বিশেষ করে এমন সময় যখন উত্তেজনা কমাতে ব্যালান্সড স্টেপ নেওয়া জরুরি। লি জে-মিয়ংয়ের বক্তব্যে স্পষ্ট যে দক্ষিণ কোরিয়া পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে চায়, কিন্তু তার জন্য সময়, আস্থা এবং বাস্তবিক কর্মসূচি প্রয়োজন।

উপসংহার: কিম সন জিয়ংয়ের স্পষ্ট ঘোষণার পর উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ আরও তীব্র হয়েছে। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কিংবা আস্থাভিত্তিক কোনো সমাধান প্রয়োজন হলে তা কেবল কথায় নয় — ব্যাপক কূটনৈতিক উদ্যোগ, আঞ্চলিক অংশীদারের সমন্বয় ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্ভব। এখনকার সময়ের চ্যালেঞ্জ হলো—সীমান্ত উত্তেজনা কমিয়ে কোরীয় উপদ্বীপে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও নতুন করে বড় কোনো সামরিক সংঘাত ঠেকানো।