
ইসলাম মুসলমানদের জন্য জীবনবিধান। আর যিকির হচ্ছে এমন একটি সহজ ইবাদত, যা দিয়ে একজন মুসলমান আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারে। যিকিরের মাঝে সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত অথচ তাৎপর্যপূর্ণ শব্দ হলো “সুবহানাল্লাহ” (سُبْحَانَ اللَّهِ)। এ শব্দ দ্বারা আল্লাহর মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করা হয়। কোরআন ও হাদীসে এই যিকিরের গুরুত্ব ও ফজীলত সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরাআনের বিভিন্ন স্থানে বান্দাদের তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
সূরা ক্বাফ এর ৩৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন: “অতএব তুমি সূর্যোদয়ের পূর্বে ও সূর্যাস্তের পূর্বে তোমার রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা কর।”
সূরা জুমুআ এর ১ নং আয়াতে বলেন: “আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে, সবই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে।”
এই আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করা কেবল মানুষের দায়িত্ব নয়; বরং পুরো সৃষ্টিজগতই আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ “সুবহানাল্লাহ” বলার ফজীলত সম্পর্কে একাধিক হাদীসে আলোকপাত করেছেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত:
“যে ব্যক্তি একবার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলল, তার জন্য একটি সওয়াব লেখা হয়, একটি গুনাহ মুছে দেওয়া হয় এবং তার মর্যাদা একটি ধাপ বৃদ্ধি করা হয়।”
(তিরমিযি, হাদীস: ৩৪৬৪)
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “দুটি শব্দ আছে, যা জিহ্বায় হালকা, ওজনের পাল্লায় ভারী এবং দয়াময়ের কাছে অতি প্রিয়: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজীম।”
অন্য এক হাদীসে এসেছে: “যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’ একশ’বার বলবে, তার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে, যদিও তা সাগরের ফেনার সমান হয়।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৬৯১)
- “সুবহানাল্লাহ” বললে বান্দার নামাজ, দোআ ও যিকিরের গুণ বৃদ্ধি পায়।
- এটি গুনাহ মোচন করে, আমলনামায় নেকি বৃদ্ধি করে।
- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের অন্যতম সহজ মাধ্যম হলো এই যিকির।
- প্রতিদিনের জীবনে, বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় এ যিকিরকে অভ্যাসে পরিণত করার নির্দেশ রয়েছে।
আজকের ব্যস্ত জীবনে যখন মানুষ মানসিক অশান্তি ও দুশ্চিন্তায় ভোগে, তখন সহজ এই যিকির—“সুবহানাল্লাহ”—আত্মার প্রশান্তি এনে দিতে পারে। এটি শুধু আখিরাতের সঞ্চয়ই নয়, বরং দুনিয়ার জীবনেও শান্তি ও সান্ত্বনার উৎস। তাই মুসলিম উম্মাহর জন্য নিয়মিত “সুবহানাল্লাহ” বলার অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।