
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় দুই দশক পর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সরাসরি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি দেশে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, “আমি দ্রুতই দেশে ফিরে আসব। জনগণের রায়ের ভিত্তিতেই পরবর্তী সরকার গঠিত হবে।”
জুলাইআন্দোলনও অভ্যুত্থানপ্রসঙ্গ
ঢাকায় জুলাই মাসে সংঘটিত অভ্যুত্থান প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, “এটি ছিল জনগণের নেতৃত্বাধীন একটি আন্দোলন, কোনো ব্যক্তিকেন্দ্রিক উদ্যোগ নয়।” তিনি দাবি করেন, জুলাই আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং জনগণের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষারই বহিঃপ্রকাশ।
তারেক রহমান বলেন, “বাংলাদেশের জনগণই এই পরিবর্তনের সূচনা করেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে, গণতন্ত্রের শক্তি সব সময়ই জনগণের হাতে থাকে।”
নির্বাচনের সময়সূচি ও অংশগ্রহণ
বিএনপি নেতা জানান, দল দ্রুত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে নির্ধারিত জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। জনগণের রায়ই হবে সরকারের বৈধতার একমাত্র ভিত্তি।”
প্রার্থী মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা প্রার্থীদের বাছাই করব স্থানীয় পর্যায়ের জনসমর্থন, সততা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে। দলীয় পরিচয়ের বাইরে জনগণের আস্থা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।”
খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক ভূমিকা
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নে তারেক রহমান বলেন, “সবকিছু নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর। তবে দলীয় কর্মকাণ্ডে তাঁর অবদান ও নেতৃত্ব অপরিসীম। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এখনও আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা।”
নিজের ভূমিকা ও রাজনৈতিক অবস্থান
নিজের অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, “আমি মূলত একজন কার্যকর রাজনৈতিক কর্মী। আমি ব্যক্তিকেন্দ্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই, বরং জনগণের ইচ্ছা ও দলের সিদ্ধান্তই আমার পথনির্দেশ।”
তিনি জানান, তিনি নিজেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, তবে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত ও জনগণের রায়ের ওপর নির্ভর করবেন।
অতীতের সমালোচনা ও নতুন প্রতিশ্রুতি
বিএনপি সরকারের আমলে দুর্নীতি ও দখলবাজির অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারেক রহমান বলেন, “অতীতে সমালোচনা ছিল—আমরা তা অস্বীকার করি না। কিন্তু আজকের বিএনপি আগের বিএনপি নয়। আমরা দলীয় শুদ্ধি অভিযান চালিয়েছি, অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি। আমরা জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জনগণনির্ভর সরকার প্রতিষ্ঠা করা।”