১০:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রংপুর-গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক: জরুরি টিকাদান শুরু, মাঠপর্যায়ে অনিয়ম

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশু ও মানুষের শরীরে রোগটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে খামারি ও স্থানীয়দের মধ্যে। ইতোমধ্যে দুজনের মৃত্যু ও একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোগটির বিস্তার রোধে জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় গবাদিপশুর গণটিকাদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ‘ওয়ান হেলথ’ কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে সচেতনতা কার্যক্রমও চলছে।

বিশেষ করে রংপুর ও গাইবান্ধাকে অ্যানথ্রাক্সপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই) রংপুর বিভাগে ৩০ লাখ অ্যানথ্রাক্স টিকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে ২০ লাখ টিকা শুধু রংপুর ও গাইবান্ধায় সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে রংপুরে ১ লাখ ৬৭ হাজার ও গাইবান্ধায় ২৬ হাজারের বেশি গবাদিপশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

তবে মাঠপর্যায়ে অনিয়ম ও ভ্যাকসিন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার খামারিদের দাবি, সরকারের নির্ধারিত ৮০ পয়সার টিকা দিতে ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। ছোট খামারি রহিম উদ্দিন বলেন, “গরু বাঁচাতে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েই টিকা নিচ্ছি। কিন্তু এটা অন্যায়।”

এ বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “পরিবহন ও অন্যান্য খরচ হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ টাকা নেওয়ার অনুমতি আছে। কেউ এর বেশি নিলে তা অনিয়ম। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হকও বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।

অন্যদিকে মাংস ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স ও পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ঘাটতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। রংপুর বিভাগের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হাই বলেন, “জনবল সংকটের কারণে প্রতিটি হাটে চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তবু স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার চেষ্টা চলছে।”

এদিকে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. বয়জার রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান দল রংপুর ও গাইবান্ধায় মাঠে নেমেছে। তারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত এলাকার ঘাস, মাটি ও মাংসের নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধা থেকে সংগৃহীত ১১টি মাংসের নমুনার মধ্যে ১০টিতে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. বয়জার রহমান বলেন, “আমরা দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশ জমা দেব। আক্রান্ত সব এলাকাকে টিকাদানের আওতায় আনা হবে।”

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অসুস্থ গবাদিপশু জবাই না করা, মৃত পশুকে খোলা স্থানে না ফেলা এবং দ্রুত ভেটেরিনারি দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করাই অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের প্রধান উপায়।

সতর্কতা বার্তা:
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জনগণকে অনুরোধ করেছে—অসুস্থ গরু বা ছাগল জবাই না করা, মৃত পশুকে গভীরভাবে মাটিচাপা দেওয়া এবং মাংস ক্রয়ের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ যাচাই করার জন্য।
রংপুর ও গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

ট্যাগ

সাইয়েদুল ইস্তেগফার : সর্বশ্রেষ্ঠ ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া

রংপুর-গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্স আতঙ্ক: জরুরি টিকাদান শুরু, মাঠপর্যায়ে অনিয়ম

প্রকাশিত হয়েছে: ০১:১১:৩৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ৮ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অ্যানথ্রাক্স (তড়কা) রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন এলাকায় গবাদিপশু ও মানুষের শরীরে রোগটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে খামারি ও স্থানীয়দের মধ্যে। ইতোমধ্যে দুজনের মৃত্যু ও একাধিক ব্যক্তি আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোগটির বিস্তার রোধে জরুরি ও সমন্বিত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় গবাদিপশুর গণটিকাদান, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ‘ওয়ান হেলথ’ কর্মসূচির আওতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যৌথভাবে সচেতনতা কার্যক্রমও চলছে।

বিশেষ করে রংপুর ও গাইবান্ধাকে অ্যানথ্রাক্সপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে ব্যাপক টিকাদান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (এলআরআই) রংপুর বিভাগে ৩০ লাখ অ্যানথ্রাক্স টিকা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যার মধ্যে ২০ লাখ টিকা শুধু রংপুর ও গাইবান্ধায় সরবরাহ করা হবে। ইতোমধ্যে রংপুরে ১ লাখ ৬৭ হাজার ও গাইবান্ধায় ২৬ হাজারের বেশি গবাদিপশুকে টিকা দেওয়া হয়েছে।

তবে মাঠপর্যায়ে অনিয়ম ও ভ্যাকসিন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার খামারিদের দাবি, সরকারের নির্ধারিত ৮০ পয়সার টিকা দিতে ৩০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। ছোট খামারি রহিম উদ্দিন বলেন, “গরু বাঁচাতে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়েই টিকা নিচ্ছি। কিন্তু এটা অন্যায়।”

এ বিষয়ে কাউনিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “পরিবহন ও অন্যান্য খরচ হিসেবে সর্বোচ্চ ১০ টাকা নেওয়ার অনুমতি আছে। কেউ এর বেশি নিলে তা অনিয়ম। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিদুল হকও বিষয়টি তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন।

অন্যদিকে মাংস ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স ও পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষার ঘাটতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। রংপুর বিভাগের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল হাই বলেন, “জনবল সংকটের কারণে প্রতিটি হাটে চিকিৎসক পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। তবু স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার চেষ্টা চলছে।”

এদিকে অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণের উৎস ও বর্তমান পরিস্থিতি মূল্যায়নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. বয়জার রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুসন্ধান দল রংপুর ও গাইবান্ধায় মাঠে নেমেছে। তারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত এলাকার ঘাস, মাটি ও মাংসের নমুনা সংগ্রহ করেছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধা থেকে সংগৃহীত ১১টি মাংসের নমুনার মধ্যে ১০টিতে অ্যানথ্রাক্সের জীবাণু পাওয়া গেছে। অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. বয়জার রহমান বলেন, “আমরা দ্রুত একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন ও সুপারিশ জমা দেব। আক্রান্ত সব এলাকাকে টিকাদানের আওতায় আনা হবে।”

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অসুস্থ গবাদিপশু জবাই না করা, মৃত পশুকে খোলা স্থানে না ফেলা এবং দ্রুত ভেটেরিনারি দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করাই অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধের প্রধান উপায়।

সতর্কতা বার্তা:
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জনগণকে অনুরোধ করেছে—অসুস্থ গরু বা ছাগল জবাই না করা, মৃত পশুকে গভীরভাবে মাটিচাপা দেওয়া এবং মাংস ক্রয়ের সময় স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ যাচাই করার জন্য।
রংপুর ও গাইবান্ধায় অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে প্রশাসন, প্রাণিসম্পদ ও স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।