০৭:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকের সততায় ফেরত মিলল কোটি টাকার অচল আমানত

যশোর সোনালী ব্যাংক পিএলসি কর্পোরেট শাখার এক বিরল মানবিক উদ্যোগে ১৮ জন গ্রাহক দীর্ঘদিনের অচল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের টাকা ফেরত পেয়েছেন। এসব অ্যাকাউন্টে দীর্ঘদিন লেনদেন না হওয়ায় তা ‘অচল’ হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল। সম্প্রতি শাখাটির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মনিরুজ্জামানের উদ্যোগে এসব অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে টাকা হস্তান্তর করা হয়।

২০০৬ সালে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেন আব্দুল কাদের বেগ। বদলির পর লেনদেন বন্ধ হয়ে গেলে সেই অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। সেখানে ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা—যার কথা তিনি নিজেই ভুলে গিয়েছিলেন। ব্যাংক থেকে যোগাযোগের পর তিনি গিয়ে টাকা বুঝে নেন। তিনি বলেন, এত বছর পর হারানো টাকা ফিরে পেয়ে আমি সত্যিই বিস্মিত ও কৃতজ্ঞ।

চিকিৎসক দেবালা মল্লিক, যিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত যশোর সদর হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন, ব্যাংকের একটি পুরনো অ্যাকাউন্ট থেকে ফেরত পেয়েছেন ৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। তিনি বলেন, আমাকে খুঁজে বের করতে ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনেক পরিশ্রম করেছেন। সবাই এমন সততা দেখায় না।

জিএম নাসিরুজ্জামানের পরিবারও পেয়েছে ৮৩ হাজার ৫৪৯ টাকা। তার ছেলে নাইম হাসান শুভ জানান, আমরা ভেবেছিলাম অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যাংক থেকে ফোন পেয়ে জানতে পারি টাকা এখনও আছে, যা আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ।

সবচেয়ে বড় অঙ্কের টাকা—৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯৫—ফেরত পেয়েছেন গ্রাহক রবিউল আলম। তিনি জানান, এই টাকা ব্যাংকে রেখেই অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ব্যাংকের এমন সততা ও দায়িত্বশীলতা দেখে আমরা মুগ্ধ। আমরা ব্যাংকে যে টাকা রাখি সেটি তাদের কাছে আমানত, আর সোনালী ব্যাংক সত্যিকারের অর্থে সেই আমানত রক্ষা করেছে।

যশোর সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মনিরুজ্জামান জানান, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অচল থাকা অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে সেই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। আমরা ২,৫০০টি এমন অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করি, যার মধ্যে ১৮টিতে ছিল মোটা অঙ্কের টাকা। এরপর তাদের খুঁজে বের করে টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন আগে খোলা এসব অ্যাকাউন্টের মালিকদের খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল না। তখন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যও ছিল না। তবু দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এই গ্রাহকদের সন্ধান করেছি।

যশোর সোনালী ব্যাংকের এই উদাহরণ এখন দেশের ব্যাংকিং খাতে সততা ও দায়িত্ববোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ব্যাংকের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করেছে—আমানত শুধু অর্থ নয়, এটি একটি বিশ্বাস; আর সোনালী ব্যাংক সেই বিশ্বাসটিকে অক্ষুণ্ণ রেখেছে।

ট্যাগ

ব্যাংকের সততায় ফেরত মিলল কোটি টাকার অচল আমানত

প্রকাশিত হয়েছে: ০৬:৩১:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

যশোর সোনালী ব্যাংক পিএলসি কর্পোরেট শাখার এক বিরল মানবিক উদ্যোগে ১৮ জন গ্রাহক দীর্ঘদিনের অচল ব্যাংক অ্যাকাউন্টের টাকা ফেরত পেয়েছেন। এসব অ্যাকাউন্টে দীর্ঘদিন লেনদেন না হওয়ায় তা ‘অচল’ হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিল। সম্প্রতি শাখাটির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মনিরুজ্জামানের উদ্যোগে এসব অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের খুঁজে বের করে তাদের কাছে টাকা হস্তান্তর করা হয়।

২০০৬ সালে যশোর কোতোয়ালি থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেন আব্দুল কাদের বেগ। বদলির পর লেনদেন বন্ধ হয়ে গেলে সেই অ্যাকাউন্টটি নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। সেখানে ছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা—যার কথা তিনি নিজেই ভুলে গিয়েছিলেন। ব্যাংক থেকে যোগাযোগের পর তিনি গিয়ে টাকা বুঝে নেন। তিনি বলেন, এত বছর পর হারানো টাকা ফিরে পেয়ে আমি সত্যিই বিস্মিত ও কৃতজ্ঞ।

চিকিৎসক দেবালা মল্লিক, যিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত যশোর সদর হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন, ব্যাংকের একটি পুরনো অ্যাকাউন্ট থেকে ফেরত পেয়েছেন ৩ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। তিনি বলেন, আমাকে খুঁজে বের করতে ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনেক পরিশ্রম করেছেন। সবাই এমন সততা দেখায় না।

জিএম নাসিরুজ্জামানের পরিবারও পেয়েছে ৮৩ হাজার ৫৪৯ টাকা। তার ছেলে নাইম হাসান শুভ জানান, আমরা ভেবেছিলাম অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু ব্যাংক থেকে ফোন পেয়ে জানতে পারি টাকা এখনও আছে, যা আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ।

সবচেয়ে বড় অঙ্কের টাকা—৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯৫—ফেরত পেয়েছেন গ্রাহক রবিউল আলম। তিনি জানান, এই টাকা ব্যাংকে রেখেই অ্যাকাউন্ট পুনরায় চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন বলেন, ব্যাংকের এমন সততা ও দায়িত্বশীলতা দেখে আমরা মুগ্ধ। আমরা ব্যাংকে যে টাকা রাখি সেটি তাদের কাছে আমানত, আর সোনালী ব্যাংক সত্যিকারের অর্থে সেই আমানত রক্ষা করেছে।

যশোর সোনালী ব্যাংক কর্পোরেট শাখার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মনিরুজ্জামান জানান, ১০ বছরের বেশি সময় ধরে অচল থাকা অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করে সেই টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুকূলে জমা দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। আমরা ২,৫০০টি এমন অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করি, যার মধ্যে ১৮টিতে ছিল মোটা অঙ্কের টাকা। এরপর তাদের খুঁজে বের করে টাকা ফেরত দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন আগে খোলা এসব অ্যাকাউন্টের মালিকদের খুঁজে পাওয়া সহজ ছিল না। তখন জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যও ছিল না। তবু দায়িত্ববোধ থেকেই আমরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এই গ্রাহকদের সন্ধান করেছি।

যশোর সোনালী ব্যাংকের এই উদাহরণ এখন দেশের ব্যাংকিং খাতে সততা ও দায়িত্ববোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ব্যাংকের এই পদক্ষেপ প্রমাণ করেছে—আমানত শুধু অর্থ নয়, এটি একটি বিশ্বাস; আর সোনালী ব্যাংক সেই বিশ্বাসটিকে অক্ষুণ্ণ রেখেছে।