১০:১১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপে একমত হামাস ও ইসরায়েল: মুক্তির অপেক্ষায় জিম্মিরা

গাজার দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অবসানের পথে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস অবশেষে শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপে একমত হয়েছে। এই ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে, এবং ইসরায়েল গাজার কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে।

ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানিয়েছেন, “ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে। এর মানে, খুব শিগগিরই সব জিম্মি মুক্তি পাবে এবং ইসরায়েল নিজেদের বাহিনী নির্ধারিত লাইনে সরিয়ে আনবে।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চুক্তিটিকে “ইসরায়েলের জন্য মহান দিন” বলে অভিহিত করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে তার মন্ত্রিসভা এই চুক্তি অনুমোদন করে। ইসরায়েলি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

হামাসের আলোচক দলের প্রধান খালিল আল-হাইয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে তারা স্পষ্ট নিশ্চয়তা পেয়েছেন যে “যুদ্ধ শেষ হয়েছে।” তিনি আরও জানান, চুক্তির বাস্তবায়নই হবে গাজার যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি।

শান্তি চুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই গাজায় উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে এবং গাজার বিভিন্ন এলাকায় মানুষ আনন্দে নেচে গেয়ে উদযাপন করছে, শোনা যাচ্ছে “আল্লাহু আকবর” ধ্বনি।

অন্যদিকে ইসরায়েলেও ‘হোস্টেজ স্কয়ার’-এ জিম্মিদের পরিবার ও সাধারণ মানুষ জড়ো হয়ে চুক্তির কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় উল্লাস প্রকাশ করেছেন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, “পুরো জাতি জিম্মিদের প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে এবং আনন্দিত।” ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “জিম্মিদের ফিরে আসার জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরকে আমরা স্বাগত জানাই।”

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজসহ বিশ্বনেতারা এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং সব পক্ষকে শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আসন্ন রবিবার মিশরে অনুষ্ঠিতব্য চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন। ইসরায়েলি কনেসেটও তাকে সংসদে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। দুই বছরের এই যুদ্ধে অন্তত ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার শিশু।

চুক্তি বাস্তবায়িত হলে, এটি হবে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার পথে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ—যার মাধ্যমে গাজার যুদ্ধের সমাপ্তি এবং পুনর্গঠনের নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে।

ট্যাগ

শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপে একমত হামাস ও ইসরায়েল: মুক্তির অপেক্ষায় জিম্মিরা

প্রকাশিত হয়েছে: ১০:৩৪:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫

গাজার দীর্ঘ দুই বছরের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ অবসানের পথে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাস অবশেষে শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপে একমত হয়েছে। এই ধাপে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে, জিম্মি ও বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে, এবং ইসরায়েল গাজার কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে।

ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানিয়েছেন, “ইসরায়েল ও হামাস উভয়ই আমাদের শান্তি পরিকল্পনার প্রথম ধাপে স্বাক্ষর করেছে। এর মানে, খুব শিগগিরই সব জিম্মি মুক্তি পাবে এবং ইসরায়েল নিজেদের বাহিনী নির্ধারিত লাইনে সরিয়ে আনবে।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু চুক্তিটিকে “ইসরায়েলের জন্য মহান দিন” বলে অভিহিত করেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে তার মন্ত্রিসভা এই চুক্তি অনুমোদন করে। ইসরায়েলি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে।

হামাসের আলোচক দলের প্রধান খালিল আল-হাইয়া বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে তারা স্পষ্ট নিশ্চয়তা পেয়েছেন যে “যুদ্ধ শেষ হয়েছে।” তিনি আরও জানান, চুক্তির বাস্তবায়নই হবে গাজার যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি।

শান্তি চুক্তির খবর ছড়িয়ে পড়তেই গাজায় উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, আল-আকসা হাসপাতালের বাইরে এবং গাজার বিভিন্ন এলাকায় মানুষ আনন্দে নেচে গেয়ে উদযাপন করছে, শোনা যাচ্ছে “আল্লাহু আকবর” ধ্বনি।

অন্যদিকে ইসরায়েলেও ‘হোস্টেজ স্কয়ার’-এ জিম্মিদের পরিবার ও সাধারণ মানুষ জড়ো হয়ে চুক্তির কার্যকর হওয়ার অপেক্ষায় উল্লাস প্রকাশ করেছেন।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, “পুরো জাতি জিম্মিদের প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করছে এবং আনন্দিত।” ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “জিম্মিদের ফিরে আসার জন্য এই চুক্তি স্বাক্ষরকে আমরা স্বাগত জানাই।”

জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেস, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি অ্যালবানিজসহ বিশ্বনেতারা এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং সব পক্ষকে শর্ত মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন।

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি আসন্ন রবিবার মিশরে অনুষ্ঠিতব্য চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে মধ্যপ্রাচ্যে যাচ্ছেন। ইসরায়েলি কনেসেটও তাকে সংসদে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। দুই বছরের এই যুদ্ধে অন্তত ৬৭ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে প্রায় ২০ হাজার শিশু।

চুক্তি বাস্তবায়িত হলে, এটি হবে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনার পথে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ—যার মাধ্যমে গাজার যুদ্ধের সমাপ্তি এবং পুনর্গঠনের নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে।