০৭:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১০০০ টাকা হওয়া উচিত ফওজুল কাবির

দেশে চলমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস)-এর দাম নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফওজুল কাবির খান। তিনি বলেন, বর্তমানে ১২ কেজির একটি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১,২০০ টাকার বেশি, যা শিল্প ও গৃহস্থালি ব্যবহারকারীদের জন্য ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। অথচ এই দাম ১,০০০ টাকার মধ্যে থাকা উচিত।

শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত “বাংলাদেশে এলপিজি : অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা” শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফওজুল কাবির খান বলেন, “এলপিজির প্রধান চ্যালেঞ্জ এখন দাম। বর্তমানে ১,২০০ টাকার সিলিন্ডার অনেক জায়গায় ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দামের নিয়ন্ত্রণ, লজিস্টিক উন্নয়ন এবং বেসরকারি খাতের কার্যকারিতা বৃদ্ধি না করলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, দেশের প্রাথমিক জ্বালানির ঘাটতি কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ফল নয়, বরং এটি একটি পরিকল্পিত সংকট। “ক্ষমতাসীন কিছু রাজনীতিক ও তাদের সহযোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাস পরিকল্পনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এতে শিল্প ও গৃহস্থালি খাতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে,” অভিযোগ করেন উপদেষ্টা।

তিনি জানান, দেশে স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন প্রতিবছর কমছে। “প্রতি বছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন কমছে, অথচ নতুন করে আহরণ হচ্ছে মাত্র ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। এজন্য এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে, যদিও এর উচ্চমূল্যের কারণে সমালোচনা রয়েছে,” বলেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, “এলএনজি আমদানি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, তাই স্বল্পমেয়াদে ঘাটতি মোকাবিলায় এলপিজি হতে পারে কার্যকর বিকল্প।” পাশাপাশি গৃহস্থালি পর্যায়ে পাইপলাইনের নতুন কোনো গ্যাস সংযোগ আর দেওয়া হবে না বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।
“গৃহস্থালি পর্যায়ে সবাইকে ধীরে ধীরে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। পাইপলাইন গ্যাস কেবল শিল্প-কারখানায় সরবরাহ করা হবে,” বলেন তিনি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, দেশে গ্যাস সংকটের মূল কারণ রাজনীতিবিদ ও তাদের সহযোগী ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি। “বিপুলসংখ্যক অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে, যার পেছনে প্রভাবশালী মহলের সম্পৃক্ততা রয়েছে,” বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ম. তামিম অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, দেশের প্রাথমিক জ্বালানির ৬৫ শতাংশ এখন আমদানি নির্ভর। তেল, কয়লা ও গ্যাস—সব ক্ষেত্রেই বিদেশ নির্ভরতা বাড়ছে, অথচ স্থানীয় উৎপাদন কমছে।

অধ্যাপক তামিম বলেন, “বর্তমানে দৈনিক গ্যাস চাহিদা প্রায় ৪,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২,৫০০ থেকে ২,৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রায় ১,৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। এই ঘাটতি মোকাবিলায় এলপিজি হতে পারে কার্যকর বিকল্প।”

তিনি আরও জানান, দেশে বর্তমানে বছরে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন এলপিজি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা সাত বছর আগের এক লাখ টনেরও কম থেকে বেড়ে এসেছে। বর্তমানে প্রায় ২২টি কোম্পানি এলপিজি সরবরাহ করছে, যার মধ্যে বসুন্ধরা, প্রিমিয়ার, যমুনা ও ফ্রেশসহ বড় ব্র্যান্ডগুলো প্রধান বাজার অংশীদার।

ড. তামিম বলেন, “এলপিজি হচ্ছে একমাত্র জ্বালানি খাত যা কখনোই সরকারিভাবে ভর্তুকি পায়নি। তারপরও বাজারচালিত এই খাত দ্রুত বেড়েছে। দ্রুত বিনিয়োগ ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া গেলে এক বছরের মধ্যেই সরবরাহ সক্ষমতা দ্বিগুণ করা সম্ভব।”

ট্যাগ

এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১০০০ টাকা হওয়া উচিত ফওজুল কাবির

প্রকাশিত হয়েছে: ১২:১৫:৩১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

দেশে চলমান জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় এলপিজি (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস)-এর দাম নিয়ন্ত্রণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফওজুল কাবির খান। তিনি বলেন, বর্তমানে ১২ কেজির একটি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ১,২০০ টাকার বেশি, যা শিল্প ও গৃহস্থালি ব্যবহারকারীদের জন্য ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। অথচ এই দাম ১,০০০ টাকার মধ্যে থাকা উচিত।

শনিবার (১১ অক্টোবর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে দৈনিক বণিক বার্তা আয়োজিত “বাংলাদেশে এলপিজি : অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা” শীর্ষক পলিসি কনক্লেভে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফওজুল কাবির খান বলেন, “এলপিজির প্রধান চ্যালেঞ্জ এখন দাম। বর্তমানে ১,২০০ টাকার সিলিন্ডার অনেক জায়গায় ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দামের নিয়ন্ত্রণ, লজিস্টিক উন্নয়ন এবং বেসরকারি খাতের কার্যকারিতা বৃদ্ধি না করলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”

তিনি আরও বলেন, দেশের প্রাথমিক জ্বালানির ঘাটতি কোনো স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ফল নয়, বরং এটি একটি পরিকল্পিত সংকট। “ক্ষমতাসীন কিছু রাজনীতিক ও তাদের সহযোগী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর কারণে বিদ্যুৎ ও গ্যাস পরিকল্পনায় বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এতে শিল্প ও গৃহস্থালি খাতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সংযোগ দেওয়া হয়েছে,” অভিযোগ করেন উপদেষ্টা।

তিনি জানান, দেশে স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন প্রতিবছর কমছে। “প্রতি বছর প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন কমছে, অথচ নতুন করে আহরণ হচ্ছে মাত্র ৭০ মিলিয়ন ঘনফুট। এজন্য এলএনজি আমদানি করতে হচ্ছে, যদিও এর উচ্চমূল্যের কারণে সমালোচনা রয়েছে,” বলেন তিনি।

উপদেষ্টা বলেন, “এলএনজি আমদানি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, তাই স্বল্পমেয়াদে ঘাটতি মোকাবিলায় এলপিজি হতে পারে কার্যকর বিকল্প।” পাশাপাশি গৃহস্থালি পর্যায়ে পাইপলাইনের নতুন কোনো গ্যাস সংযোগ আর দেওয়া হবে না বলেও তিনি স্পষ্ট করেন।
“গৃহস্থালি পর্যায়ে সবাইকে ধীরে ধীরে সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারে অভ্যস্ত হতে হবে। পাইপলাইন গ্যাস কেবল শিল্প-কারখানায় সরবরাহ করা হবে,” বলেন তিনি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, দেশে গ্যাস সংকটের মূল কারণ রাজনীতিবিদ ও তাদের সহযোগী ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি। “বিপুলসংখ্যক অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে, যার পেছনে প্রভাবশালী মহলের সম্পৃক্ততা রয়েছে,” বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ।

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ম. তামিম অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, দেশের প্রাথমিক জ্বালানির ৬৫ শতাংশ এখন আমদানি নির্ভর। তেল, কয়লা ও গ্যাস—সব ক্ষেত্রেই বিদেশ নির্ভরতা বাড়ছে, অথচ স্থানীয় উৎপাদন কমছে।

অধ্যাপক তামিম বলেন, “বর্তমানে দৈনিক গ্যাস চাহিদা প্রায় ৪,০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, সরবরাহ হচ্ছে মাত্র ২,৫০০ থেকে ২,৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট। ফলে প্রায় ১,৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি রয়ে যাচ্ছে। এই ঘাটতি মোকাবিলায় এলপিজি হতে পারে কার্যকর বিকল্প।”

তিনি আরও জানান, দেশে বর্তমানে বছরে ১৫ থেকে ১৬ লাখ টন এলপিজি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা সাত বছর আগের এক লাখ টনেরও কম থেকে বেড়ে এসেছে। বর্তমানে প্রায় ২২টি কোম্পানি এলপিজি সরবরাহ করছে, যার মধ্যে বসুন্ধরা, প্রিমিয়ার, যমুনা ও ফ্রেশসহ বড় ব্র্যান্ডগুলো প্রধান বাজার অংশীদার।

ড. তামিম বলেন, “এলপিজি হচ্ছে একমাত্র জ্বালানি খাত যা কখনোই সরকারিভাবে ভর্তুকি পায়নি। তারপরও বাজারচালিত এই খাত দ্রুত বেড়েছে। দ্রুত বিনিয়োগ ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া গেলে এক বছরের মধ্যেই সরবরাহ সক্ষমতা দ্বিগুণ করা সম্ভব।”