বেইজিংয়ের সঙ্গে চলমান অচলাবস্থার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী মাস থেকে চীনের পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করা হবে। একই সঙ্গে সংবেদনশীল সফটওয়্যারের রপ্তানিতেও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে বলে জানান তিনি। শুক্রবার (১০ অক্টোবর) নিজের ট্রুথ সোশ্যাল অ্যাকাউন্টে ট্রাম্প বলেন, চীনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো “অত্যন্ত শত্রুভাবাপন্ন”, এবং এর জবাব দিতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তিনি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক বাতিলেরও ইঙ্গিত দেন, যদিও পরে জানান—“এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।”
ট্রাম্পের ঘোষণার পর মার্কিন শেয়ারবাজারে বড় ধস নামে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২ শতাংশের বেশি পড়ে যায়—এপ্রিলের পর যা সবচেয়ে বড় পতন। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনা ও ট্রেজারি বন্ডের দিকে ঝুঁকেছেন।
চীন সম্প্রতি পাঁচটি নতুন বিরল ধাতু ও সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তির রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে—যা বৈদ্যুতিক গাড়ি, স্মার্টফোন, বিমান ইঞ্জিন ও সামরিক প্রযুক্তির জন্য অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, বেইজিং এই কৌশলের মাধ্যমে বৈশ্বিক প্রযুক্তি সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প প্রশাসন জানায়, “যেসব উপাদানে চীন একচেটিয়াত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়, আমাদের কাছে তার দ্বিগুণ বিকল্প আছে।”
এদিকে বেইজিং মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কোয়ালকমের বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে, যা কোম্পানিটির নতুন চিপ নির্মাতা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিতে পারে। ওয়াশিংটন এই তদন্তকে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।
বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের এই ঘোষণা কার্যত ওয়াশিংটন–বেইজিং “বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি”-এর অবসান ঘটাচ্ছে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের গবেষক জনাথন চিন বলেন, “চীনের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলো আসন্ন আলোচনায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করার কৌশল।”
ওয়াশিংটনভিত্তিক বিশ্লেষক গ্রেসলিন বাসকারান বলেন, “চীনের নতুন রপ্তানিনীতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা শিল্পকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলবে।” তবে অনেক বিশ্লেষকই মনে করছেন, ডিসেম্বরের আগে চীনের এই নীতি কার্যকর না হওয়ায় আলোচনার জন্য এখনও সময় আছে।
আসন্ন দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়া–প্যাসিফিক ইকোনমিক কো–অপারেশন (অ্যাপেক) সম্মেলনে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বাজার বিশ্লেষকদের মতে, দুই পরাশক্তির এই উত্তেজনা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে, যার প্রভাব বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে।
প্রকাশক ও সম্পাদক
© কপিরাইট সমাচার বিশ্ব ২০২৫ | আমাদের ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।