০৪:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৭ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েল থেকে ফিরে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন- শহীদুল আলম

ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা, আবারও ফিলিস্তিনে যাওয়ার ঘোষণা বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মীর

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। শনিবার (১১ অক্টোবর) ভোরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। বিকেলে রাজধানীর দৃক পাঠ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বন্দিদশার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন এবং আবারও ফিলিস্তিনে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল আলম বলেন,

“আমরা আবারও ফিলিস্তিনে যাবো, এবং এবার হাজারটা জাহাজ নিয়ে যাবো। যেহেতু গ্লোবাল লিডাররা যাবেন না, আমরা অ্যাকটিভিস্টরা আন্তর্জাতিকভাবে একটা নেটওয়ার্ক দাঁড় করাবো এবং আবারও ফিলিস্তিনে যাবো।”

দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম জানান, ইসরায়েলের হাতে আটক হওয়ার পর তাদের ওপর শারীরিকের চেয়ে মানসিক নির্যাতন বেশি করা হয়েছে।
তিনি বলেন,

“আমাদের হাত পেছনে বেঁধে হাঁটুমুড়ে বসানো হয়েছিল যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী আগে থেকেই মূত্রত্যাগ করেছিল। সেই নোংরা জায়গায় আমাদের বসিয়ে রাখা হয়।”

তিনি আরও জানান,

“আমার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইসরায়েলি বাহিনী ফেলে দেয়। আমি যতবার সেটি তুলেছি, ততবার তারা আমার ওপর চড়াও হয়েছে। নিজেদের মধ্যে কথা বলায় আমাদের দুই সঙ্গীকে মেশিনগানের ব্যারেল দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।”

শহিদুল আলম বলেন, বন্দিদের ইসরায়েলের “সবচেয়ে গোপন কারাগারে” রাখা হয়েছিল।

“আমরা কারাগারে অনশন করেছিলাম। কোনো খাবার খাইনি। তবে শারীরিক দুর্বলতার কারণে কয়েকজন পরে খাবার গ্রহণ করেছেন,” বলেন তিনি।

তিনি জানান, গভীর রাতে হঠাৎ করেই ইসরায়েলি বাহিনী মেশিনগান নিয়ে তাদের সেলে ঢুকে পড়ত।

“তারা জোরে আওয়াজ করত, চিৎকার করে আদেশ দিত এবং আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করত,” বলেন শহিদুল আলম।

শহিদুল আলম জানান, সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে গঠিত কনশিয়েন্স ফ্লোটিলা নামের জাহাজটি ছিল এ ধরনের সবচেয়ে বড় যাত্রা।

“গাজায় চিকিৎসাকর্মী ও সাংবাদিক ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই এই যাত্রা শুরু হয়েছিল,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন,

“ইসরায়েল নিয়মিত আন্তর্জাতিক আইন ভাঙছে, কিন্তু তাদের কোনো শাস্তি পেতে হচ্ছে না। এজন্য আমাদের মতো মানুষদেরই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হচ্ছে।”

বাংলাদেশের জনগণের সমর্থনের প্রশংসা করে শহিদুল আলম বলেন,

“গাজায় সমুদ্রপথে যাত্রায় বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে সাড়া দিয়েছে, পৃথিবীর আর কোনো দেশ এতটা দেয়নি।”

তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকাকেও শ্রদ্ধাভরে উল্লেখ করেন।

“ফ্লোটিলা অভিযানে এবং আমার মুক্তিতে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা ছিল দৃষ্টান্তমূলক। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।”

ইসরায়েলের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেও শহিদুল আলমের সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে ফিলিস্তিনে সহায়তা নিয়ে যাবেন আন্তর্জাতিক কর্মীরা, যেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ থাকবে নেতৃত্বের আসনে।

ট্যাগ

ইসরায়েল থেকে ফিরে নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন- শহীদুল আলম

প্রকাশিত হয়েছে: ০১:০২:৩৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫

ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা, আবারও ফিলিস্তিনে যাওয়ার ঘোষণা বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মীর

ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলম। শনিবার (১১ অক্টোবর) ভোরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। বিকেলে রাজধানীর দৃক পাঠ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বন্দিদশার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেন এবং আবারও ফিলিস্তিনে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে শহিদুল আলম বলেন,

“আমরা আবারও ফিলিস্তিনে যাবো, এবং এবার হাজারটা জাহাজ নিয়ে যাবো। যেহেতু গ্লোবাল লিডাররা যাবেন না, আমরা অ্যাকটিভিস্টরা আন্তর্জাতিকভাবে একটা নেটওয়ার্ক দাঁড় করাবো এবং আবারও ফিলিস্তিনে যাবো।”

দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম জানান, ইসরায়েলের হাতে আটক হওয়ার পর তাদের ওপর শারীরিকের চেয়ে মানসিক নির্যাতন বেশি করা হয়েছে।
তিনি বলেন,

“আমাদের হাত পেছনে বেঁধে হাঁটুমুড়ে বসানো হয়েছিল যেখানে ইসরায়েলি বাহিনী আগে থেকেই মূত্রত্যাগ করেছিল। সেই নোংরা জায়গায় আমাদের বসিয়ে রাখা হয়।”

তিনি আরও জানান,

“আমার বাংলাদেশি পাসপোর্ট ইসরায়েলি বাহিনী ফেলে দেয়। আমি যতবার সেটি তুলেছি, ততবার তারা আমার ওপর চড়াও হয়েছে। নিজেদের মধ্যে কথা বলায় আমাদের দুই সঙ্গীকে মেশিনগানের ব্যারেল দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।”

শহিদুল আলম বলেন, বন্দিদের ইসরায়েলের “সবচেয়ে গোপন কারাগারে” রাখা হয়েছিল।

“আমরা কারাগারে অনশন করেছিলাম। কোনো খাবার খাইনি। তবে শারীরিক দুর্বলতার কারণে কয়েকজন পরে খাবার গ্রহণ করেছেন,” বলেন তিনি।

তিনি জানান, গভীর রাতে হঠাৎ করেই ইসরায়েলি বাহিনী মেশিনগান নিয়ে তাদের সেলে ঢুকে পড়ত।

“তারা জোরে আওয়াজ করত, চিৎকার করে আদেশ দিত এবং আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করত,” বলেন শহিদুল আলম।

শহিদুল আলম জানান, সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে গঠিত কনশিয়েন্স ফ্লোটিলা নামের জাহাজটি ছিল এ ধরনের সবচেয়ে বড় যাত্রা।

“গাজায় চিকিৎসাকর্মী ও সাংবাদিক ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদে এবং তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্যই এই যাত্রা শুরু হয়েছিল,” বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন,

“ইসরায়েল নিয়মিত আন্তর্জাতিক আইন ভাঙছে, কিন্তু তাদের কোনো শাস্তি পেতে হচ্ছে না। এজন্য আমাদের মতো মানুষদেরই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হচ্ছে।”

বাংলাদেশের জনগণের সমর্থনের প্রশংসা করে শহিদুল আলম বলেন,

“গাজায় সমুদ্রপথে যাত্রায় বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে সাড়া দিয়েছে, পৃথিবীর আর কোনো দেশ এতটা দেয়নি।”

তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকাকেও শ্রদ্ধাভরে উল্লেখ করেন।

“ফ্লোটিলা অভিযানে এবং আমার মুক্তিতে প্রধান উপদেষ্টার ভূমিকা ছিল দৃষ্টান্তমূলক। এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।”

ইসরায়েলের বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেলেও শহিদুল আলমের সংকল্প আরও দৃঢ় হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আরও বৃহৎ পরিসরে ফিলিস্তিনে সহায়তা নিয়ে যাবেন আন্তর্জাতিক কর্মীরা, যেখানে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ থাকবে নেতৃত্বের আসনে।