বাংলাদেশের তরুণ কৃষি-উদ্যোক্তা, নারী, কৃষক এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারীদের সহায়তার লক্ষ্যে একটি ‘সামাজিক ব্যবসা তহবিল’ গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। স্থানীয় সময় রোববার ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামের পার্শ্ববৈঠকে আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ)-এর প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিওর সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এই প্রস্তাব দেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “আমি আপনাদের একটি সামাজিক ব্যবসা তহবিল গঠনের আহ্বান জানাচ্ছি। এই তহবিল দরিদ্র মানুষের স্বাস্থ্যসেবা, তরুণ উদ্যোক্তা, কৃষক, নারী ও মৎস্য খাতের কর্মীদের জন্য নতুন উদ্যোগ সৃষ্টি এবং সামাজিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখতে পারবে।”

বৈঠকে দুই নেতা বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্য খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কৌশলগত দিক নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনার মূল বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ শিল্প শুরু করা, আম ও কাঁঠালের রপ্তানি বৃদ্ধি, জলবায়ু-সহনশীল কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি, এবং মহিষের দুধ থেকে মোজারেলা চিজসহ অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনে খামারিদের সহায়তা করা।

প্রধান উপদেষ্টা ইফাদ প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান এবং কৃষি, সামাজিক ব্যবসা ও প্রযুক্তিতে সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্রগুলো খতিয়ে দেখতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর প্রস্তাব দেন। প্রেসিডেন্ট আলভারো লারিও জানান, আইএফএডি বাংলাদেশের সঙ্গে সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগে অংশীদার হতে আগ্রহী এবং বেসরকারি খাতের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চায়। তিনি আরও জানান, বর্তমানে আইএফএডি বাংলাদেশে অর্ধডজনেরও বেশি কৃষি প্রকল্পে অর্থায়ন করছে।

অধ্যাপক ইউনূস ফল প্রক্রিয়াকরণ, হিমাগার, গুদামজাতকরণ এবং আম ও কাঁঠালের মতো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ফলের বৃহৎ আকারে রপ্তানিতে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, “আমরা আম রপ্তানি শুরু করেছি, তবে পরিমাণ এখনও কম। চীন বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে আম ও কাঁঠাল উভয় আমদানিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।”

বৈঠকে উপস্থিত মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানান, কীভাবে বাংলাদেশের নারী দুগ্ধ খামারিরা মহিষের দুধ থেকে মোজারেলা চিজ তৈরি করছেন এবং দেশে পনির ও অন্যান্য দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বাড়াতে ইফাদের সহায়তা প্রয়োজন।

গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের অপ্রচলিত সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলে এখনো অগভীর পানিতেই মাছ ধরেন। তিনি বলেন, “আমরা এখনো গভীর সমুদ্র মৎস্য আহরণে যেতে সাহস পাই না। আইএফএডি অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সহায়তার মাধ্যমে এই খাতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।”

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে ইফাদ এখন পর্যন্ত ৩৭টি প্রকল্পে অংশীদার হয়েছে, যার সম্মিলিত মূল্য ৪.২৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ১.১৩ বিলিয়ন ডলার সরাসরি ইফাদের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ৪১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ছয়টি প্রকল্প চলছে এবং আরও একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন।

বৈঠকে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার, এসডিজি সমন্বয়কারী ও সিনিয়র সচিব লামিয়া মোর্শেদ, পররাষ্ট্র সচিব আসাদ আলম সিয়াম এবং ইফাদের সহযোগী সহ-সভাপতি ডোনাল ব্রাউন উপস্থিত ছিলেন।