
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর ভোট গণনা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে গণনা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে গণনা করা হচ্ছে মন্নুজান হলের ব্যালট। এর আগে পৌনে ৮টার দিকে সংশ্লিষ্ট পোলিং কর্মকর্তা ও এজেন্টদের উপস্থিতিতে ব্যালট বাক্স খোলা হয়। নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ বলেন, তাঁরা ধাপে ধাপে প্রতিটি হলের ভোট গণনা করবেন এবং সবকিছু স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হবে। মিলনায়তনের মঞ্চে ছয়টি ব্যালটের জন্য ছয়টি ওএমআর মেশিন বসানো হয়েছে। মঞ্চের সামনে সাজানো রয়েছে বিভিন্ন হলের ভোট বাক্স। ভোট গণনার প্রতিটি ধাপ বড় পর্দায় সরাসরি প্রদর্শন করা হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীরা, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা পর্যবেক্ষণ করছেন।
এর আগে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৯টি ভবনের ১৭টি কেন্দ্রে ৯৯০টি বুথে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, রাকসু নির্বাচনে মোট ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। ছাত্রী হলে ভোট পড়েছে গড়ে ৬৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, আর ছাত্র হলে ৭৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন উৎসবমুখর ও স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, “পর্যবেক্ষকদের মতে, এত স্বচ্ছ নির্বাচন আগে কখনও হয়নি।”
ছাত্রদের ১১টি হলে ভোট পড়েছে গড়ে প্রায় ৭৯ শতাংশ। এর মধ্যে শাহমখদুম হলে ৭৭ দশমিক ৭১, শামসুজ্জোহা হলে ৭৬ দশমিক ৫৩, সৈয়দ আমীর আলী হলে ৭৭ দশমিক ৭৮ এবং সোহরাওয়ার্দী হলে ৭৭ দশমিক ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। অন্যদিকে ছাত্রীদের ছয়টি হলে গড়ে ভোট পড়েছে ৬৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। মন্নুজান হলে সর্বোচ্চ ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশ এবং রোকেয়া হলে সর্বনিম্ন ৫৯ দশমিক ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ভোটগ্রহণে কোনো অসংগতি চোখে পড়েনি বলে জানিয়েছেন রাকসু নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কমিটি। উপাচার্য সালেহ হাসান নকীবের গঠিত ৯ সদস্যের এ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক এম রফিকুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে কর্মকর্তাদের ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে—ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। তবে ব্যবস্থাপনায় কিছু ত্রুটি ছিল, যেগুলো ভবিষ্যতে সংশোধনের পরামর্শ দেওয়া হবে।
অন্যদিকে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোর প্যানেল ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’ জানিয়েছে, রাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসবমুখর হলেও কিছু অনিয়ম হয়েছে। আমতলা চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে পর্ষদের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছিল না। কিছু প্যানেল উপহার বিতরণ ও ভোজ আয়োজন করলেও প্রশাসন তা ঠেকাতে তৎপর হয়নি। তিনি অভিযোগ করেন, সকালেই ছাত্রশিবিরের প্যানেল প্রচারপত্র বিলি করেছে, কিন্তু গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বাধা দেওয়া হয়েছে।
তবে সামগ্রিকভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা আশা করছেন, স্বচ্ছ গণনার মাধ্যমে রাকসুতে গণতান্ত্রিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে, যা দীর্ঘ ৩৫ বছর পর পুনরায় ছাত্র রাজনীতিকে ইতিবাচক পথে ফিরিয়ে আনবে।