০৫:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা এনসিপি ও বাম চার দলের

এনসিপি ও বাম চার দলের জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা

আইনি ভিত্তি ও সংবিধান সংশোধনী নিয়ে জটিলতায় অনিশ্চিত সনদ স্বাক্ষর

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাম ধারার চারটি দল জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে, আইনিভিত্তি ছাড়া এই সনদ স্বাক্ষর মূল্যহীন হবে এবং এতে স্বাধীনতার মূল চেতনা ও নাগরিক অধিকারের পরিপন্থি ধারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এনসিপির অবস্থানঃ ” আইনি ভিত্তি ছাড়া স্বাক্ষর অর্থহীন ”

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে এনসিপি মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীনের পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, জুলাই সনদে আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এনসিপি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না।

শুক্রবার সকালে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন–“আমরা আইনিভিত্তি ছাড়া যদি সনদে স্বাক্ষর করি, সেটা মূল্যহীন হবে। সেই বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনুষ্ঠানে অংশীদার হবো না।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ আগে প্রকাশ করতে হবে। সেই খসড়ায় আমাদের ঐক্যমত গঠিত না হলে আমরা স্বাক্ষর করবো না। ড. ইউনূস যেহেতু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে সরকার গঠন করেছেন, তাই তিনি প্রেসিডেন্ট নয় বরং গভর্নমেন্ট হিসেবে এই আদেশ জারি করবেন।”

নাহিদ ইসলাম আরও জানান, জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত ৮৪টি সংস্কার গণভোটে যাবে এবং সেখানে ভিন্নমতের আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না—যা নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে পল্টনের মুক্তি ভবনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল–বাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জাসদ সাতটি কারণে সনদে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করে।

তাদের বক্তব্য অনুযায়ী—
১ জুলাই সনদের আলোচনায় দেওয়া সংশোধনী প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
২ সনদের পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
৩ সনদে বলা হয়েছে, “জুলাই সনদ নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যাবে না”—যা নাগরিকের  মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।
৪  সংবিধানের তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ও প্রোক্লেমেশন বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ভিত্তি নষ্ট করবে।
৫  সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা সংক্রান্ত অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।

বাম নেতাদের বক্তব্য

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন,“এই সাতটি বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমাদের পক্ষে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হচ্ছে না।”সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন,“ঐকমত্য কমিশন ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’-এর নামে জাতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে। ১৯৭১ সালের ইতিহাস মুছে ফেলার মতোই এখন এই সনদ তৈরি করা হচ্ছে।”সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন এবং জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন।

শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। তবে সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা থেকেই গেছে।

ট্যাগ

জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা এনসিপি ও বাম চার দলের

প্রকাশিত হয়েছে: ১০:২৯:৩৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

আইনি ভিত্তি ও সংবিধান সংশোধনী নিয়ে জটিলতায় অনিশ্চিত সনদ স্বাক্ষর

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও বাম ধারার চারটি দল জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তারা বলছে, আইনিভিত্তি ছাড়া এই সনদ স্বাক্ষর মূল্যহীন হবে এবং এতে স্বাধীনতার মূল চেতনা ও নাগরিক অধিকারের পরিপন্থি ধারা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

এনসিপির অবস্থানঃ ” আইনি ভিত্তি ছাড়া স্বাক্ষর অর্থহীন ”

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে এনসিপি মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীনের পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়, জুলাই সনদে আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত এনসিপি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নেবে না।

শুক্রবার সকালে দলের অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন–“আমরা আইনিভিত্তি ছাড়া যদি সনদে স্বাক্ষর করি, সেটা মূল্যহীন হবে। সেই বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা অনুষ্ঠানে অংশীদার হবো না।”

তিনি আরও বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ আগে প্রকাশ করতে হবে। সেই খসড়ায় আমাদের ঐক্যমত গঠিত না হলে আমরা স্বাক্ষর করবো না। ড. ইউনূস যেহেতু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে সরকার গঠন করেছেন, তাই তিনি প্রেসিডেন্ট নয় বরং গভর্নমেন্ট হিসেবে এই আদেশ জারি করবেন।”

নাহিদ ইসলাম আরও জানান, জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত ৮৪টি সংস্কার গণভোটে যাবে এবং সেখানে ভিন্নমতের আলাদা কোনো কার্যকারিতা থাকবে না—যা নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা এখনো পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে পল্টনের মুক্তি ভবনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল–বাসদ, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) ও বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল–জাসদ সাতটি কারণে সনদে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত পুনর্ব্যক্ত করে।

তাদের বক্তব্য অনুযায়ী—
১ জুলাই সনদের আলোচনায় দেওয়া সংশোধনী প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
২ সনদের পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
৩ সনদে বলা হয়েছে, “জুলাই সনদ নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া যাবে না”—যা নাগরিকের  মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।
৪  সংবিধানের তফসিলে থাকা স্বাধীনতার ঘোষণা ও প্রোক্লেমেশন বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে, যা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ভিত্তি নষ্ট করবে।
৫  সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বৈধতা সংক্রান্ত অংশ বাদ দেওয়া হয়েছে।

বাম নেতাদের বক্তব্য

বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন,“এই সাতটি বিষয় নিষ্পত্তি না হওয়ায় আমাদের পক্ষে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা সম্ভব হচ্ছে না।”সিপিবির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন,“ঐকমত্য কমিশন ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’-এর নামে জাতি ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে। ১৯৭১ সালের ইতিহাস মুছে ফেলার মতোই এখন এই সনদ তৈরি করা হচ্ছে।”সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সভাপতি সাজ্জাদ জহির চন্দন, সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন এবং জাসদের স্থায়ী কমিটির সদস্য মুশতাক হোসেন।

শুক্রবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।
এর আগে বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন। তবে সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের সময়সূচি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা থেকেই গেছে।