০১:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পেটের দায়ে পদ্মায় ইলিশ শিকার, নদীপাড়ে বসেছে অস্থায়ী হাট

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকলেও রাজবাড়ী ও পাবনার পদ্মা নদীতে চলছে অবাধে ইলিশ শিকার। রাজবাড়ীর পাংশা থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার নদীজুড়ে জেলেরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মাছ ধরছেন। নদীপাড়ে বসেছে অস্থায়ী ইলিশের হাট, যেখানে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মাছ।

শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের চর বরাট ও কাউলজানি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা নদী থেকে সদ্য ধরা ইলিশ বিক্রি করছেন নদীপাড়েই। এসব হাট ঘিরে বসেছে পান-সিগারেট, চা ও খাবারের দোকানও। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসছেন সস্তায় ইলিশ কিনতে।  স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসন রাজবাড়ী অংশে কিছু অভিযান চালালেও পাবনা অংশে কার্যত কোনো নজরদারি নেই। সেখানে নির্বিঘ্নে চলছে ইলিশ শিকার ও বিক্রি।

রাজবাড়ীর সোহাগ নামের এক ক্রেতা বলেন, “অভিযানের সময় ইলিশের দাম কম থাকে। তাই ট্রলারে করে পাবনা গেছি সস্তায় মাছ কিনতে।”  ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়, মাঝারি ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকায়, আর ছোট ইলিশ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায়।

⚓ “সহায়তা না পেয়ে বাধ্য হয়েই নদীতে”

জেলেদের দাবি, সরকারি ভিজিএফ সহায়তা প্রকৃত জেলেদের হাতে পৌঁছায় না। দেবগ্রাম ইউনিয়নের জেলে তাইজুল ইসলাম বলেন,  “যে লোক জেলে না, তার ঘরে সরকারি চাল যাচ্ছে। অথচ আমরা প্রকৃত জেলে হয়েও বঞ্চিত। পেটের দায়েই নদীতে নামছি।” আরেক জেলে রুহুল আমিন বলেন,“২৫ কেজি চাল পেয়ে কয়দিন সংসার চলে? আনুসঙ্গিক বাজার করতে হয়, কিস্তির টাকাও দিতে হয়—তাই মাছ ধরতে বাধ্য হচ্ছি।”

⚓ অভিযানে সীমিত সাফল্য

মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে রাজবাড়ীতে ৫২টি অভিযান চালানো হয়েছে। এতে ২ লাখ ৯৩ হাজার মিটার কারেন্ট জাল, ৬৬ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। জব্দ জাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস এবং মাছ এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে।  এছাড়া ২৭ জন জেলেকে কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।  রাজবাড়ীর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব উল হক বলেন,

“মা ইলিশ রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। জেলা প্রশাসন, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় কাজ চলছে। ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মাঠে থাকব।”

⚓ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলমান বেচাকেনা

এদিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, অভিযান যতই হোক, প্রকৃত জেলেদের বঞ্চনা ও প্রশাসনের নজরদারি দুর্বল থাকলে মা ইলিশ রক্ষা কঠিন হবে।

ট্যাগ

শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পেটের দায়ে পদ্মায় ইলিশ শিকার, নদীপাড়ে বসেছে অস্থায়ী হাট

প্রকাশিত হয়েছে: ০৯:০৭:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

মা ইলিশ রক্ষায় সরকারের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকলেও রাজবাড়ী ও পাবনার পদ্মা নদীতে চলছে অবাধে ইলিশ শিকার। রাজবাড়ীর পাংশা থেকে গোয়ালন্দ পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার নদীজুড়ে জেলেরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় মাছ ধরছেন। নদীপাড়ে বসেছে অস্থায়ী ইলিশের হাট, যেখানে প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে মাছ।

শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের চর বরাট ও কাউলজানি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা নদী থেকে সদ্য ধরা ইলিশ বিক্রি করছেন নদীপাড়েই। এসব হাট ঘিরে বসেছে পান-সিগারেট, চা ও খাবারের দোকানও। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতা-বিক্রেতারা আসছেন সস্তায় ইলিশ কিনতে।  স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, প্রশাসন রাজবাড়ী অংশে কিছু অভিযান চালালেও পাবনা অংশে কার্যত কোনো নজরদারি নেই। সেখানে নির্বিঘ্নে চলছে ইলিশ শিকার ও বিক্রি।

রাজবাড়ীর সোহাগ নামের এক ক্রেতা বলেন, “অভিযানের সময় ইলিশের দাম কম থাকে। তাই ট্রলারে করে পাবনা গেছি সস্তায় মাছ কিনতে।”  ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়, মাঝারি ১,০০০ থেকে ১,২০০ টাকায়, আর ছোট ইলিশ ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকায়।

⚓ “সহায়তা না পেয়ে বাধ্য হয়েই নদীতে”

জেলেদের দাবি, সরকারি ভিজিএফ সহায়তা প্রকৃত জেলেদের হাতে পৌঁছায় না। দেবগ্রাম ইউনিয়নের জেলে তাইজুল ইসলাম বলেন,  “যে লোক জেলে না, তার ঘরে সরকারি চাল যাচ্ছে। অথচ আমরা প্রকৃত জেলে হয়েও বঞ্চিত। পেটের দায়েই নদীতে নামছি।” আরেক জেলে রুহুল আমিন বলেন,“২৫ কেজি চাল পেয়ে কয়দিন সংসার চলে? আনুসঙ্গিক বাজার করতে হয়, কিস্তির টাকাও দিতে হয়—তাই মাছ ধরতে বাধ্য হচ্ছি।”

⚓ অভিযানে সীমিত সাফল্য

মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে রাজবাড়ীতে ৫২টি অভিযান চালানো হয়েছে। এতে ২ লাখ ৯৩ হাজার মিটার কারেন্ট জাল, ৬৬ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়েছে। জব্দ জাল আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস এবং মাছ এতিমখানায় বিতরণ করা হয়েছে।  এছাড়া ২৭ জন জেলেকে কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।  রাজবাড়ীর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব উল হক বলেন,

“মা ইলিশ রক্ষায় আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। জেলা প্রশাসন, নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় কাজ চলছে। ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত মাঠে থাকব।”

⚓ প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলমান বেচাকেনা

এদিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাটে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিজ্ঞাপন দিয়ে বিক্রি চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, অভিযান যতই হোক, প্রকৃত জেলেদের বঞ্চনা ও প্রশাসনের নজরদারি দুর্বল থাকলে মা ইলিশ রক্ষা কঠিন হবে।