০৮:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ৩ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুলাই সনদে স্বাক্ষর:“নতুন বাংলাদেশের সূচনা” ড. মুহাম্মদ ইউনূস

জুলাই সনদে স্বাক্ষর:“নতুন বাংলাদেশের সূচনা” ড. মুহাম্মদ ইউনূস

ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এর স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের জন্য আজ নবজন্মের দিন। এই সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।”

প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এই সনদের ভিত্তিতে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই সনদ দিয়ে দেশ পরিবর্তন হবে এবং এটি বিশ্বজুড়ে আলোচিত হবে।” তিনি আরও বলেন, “দেশ গঠনের দায়িত্ব আগামী সরকার নেবে, আর এই সনদই সেই প্রস্তুতির অংশ।”

তরুণদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, “তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়বে, তারাই দেশকে নেতৃত্ব দেবে। ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকই ২৭ বছরের নিচে— এদের হাতেই দেশের ভবিষ্যৎ। সারা পৃথিবীতে তরুণদের অভাব, অথচ আমাদের দেশে তারা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এখন তাদের শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা পৃথিবী পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, জুলাই সনদ দেশের ঐক্যের নতুন ভিত্তি হবে এবং রাজনৈতিক বিভাজন দূর করে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে নিয়ে যাবে।

দীর্ঘ আট মাসের সংলাপ ও মতৈক্য প্রক্রিয়ার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে চূড়ান্ত হওয়া এই সনদে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।

এছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সদস্যরাও সনদে স্বাক্ষর করেন। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ সনদে স্বাক্ষর করেনি।

অনুষ্ঠানটি বিকেল চারটা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও অন্যান্য উপদেষ্টারা।

অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং গণমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “এটি একটি ভালো সনদ। কিছু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে, তবে ভবিষ্যতে সেগুলো মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করা সম্ভব।”

অনুষ্ঠানের আগে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে একদল যুবক অবস্থান নিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।

বৃষ্টির কারণে অনুষ্ঠান কিছুটা বিলম্বিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিকেল ৩টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে জানান, “সবকিছু ঠিকঠাক চলছে, কিছু অতিথি ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছেন। আমাদের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূচনা দেখার অপেক্ষায় আছি।”

ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিকেল ২টার দিকে জুলাই সনদের পঞ্চম দফায় সংশোধন আনে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তবে এনসিপি জানায়, আইনি নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না। অন্যদিকে বাম ধারার চার দলও সংশোধিত খসড়া না পেয়ে সই থেকে বিরত থাকে।

সবশেষে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই জাতীয় সনদ উন্মোচন করে বলেন, “আজ আমরা যে পথরেখা এঁকেছি, তা বাংলাদেশকে একটি নতুন যুগে প্রবেশের দ্বার উন্মোচন করবে।”

ট্যাগ

জুলাই সনদে স্বাক্ষর:“নতুন বাংলাদেশের সূচনা” ড. মুহাম্মদ ইউনূস

প্রকাশিত হয়েছে: ০৬:২৬:৫৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫

ঐতিহাসিক জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫–এর স্বাক্ষরের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হলো বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমাদের জন্য আজ নবজন্মের দিন। এই সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম।”

প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দলগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এই সনদের ভিত্তিতে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এই সনদ দিয়ে দেশ পরিবর্তন হবে এবং এটি বিশ্বজুড়ে আলোচিত হবে।” তিনি আরও বলেন, “দেশ গঠনের দায়িত্ব আগামী সরকার নেবে, আর এই সনদই সেই প্রস্তুতির অংশ।”

তরুণদের ভূমিকার কথা স্মরণ করে ড. ইউনূস বলেন, “তরুণরাই নতুন বাংলাদেশ গড়বে, তারাই দেশকে নেতৃত্ব দেবে। ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে অর্ধেকই ২৭ বছরের নিচে— এদের হাতেই দেশের ভবিষ্যৎ। সারা পৃথিবীতে তরুণদের অভাব, অথচ আমাদের দেশে তারা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। এখন তাদের শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা পৃথিবী পরিবর্তনের সুযোগ এসেছে।”

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, জুলাই সনদ দেশের ঐক্যের নতুন ভিত্তি হবে এবং রাজনৈতিক বিভাজন দূর করে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে নিয়ে যাবে।

দীর্ঘ আট মাসের সংলাপ ও মতৈক্য প্রক্রিয়ার পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে চূড়ান্ত হওয়া এই সনদে স্বাক্ষর করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা।

এছাড়া জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সদস্যরাও সনদে স্বাক্ষর করেন। তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাসদ, বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ সনদে স্বাক্ষর করেনি।

অনুষ্ঠানটি বিকেল চারটা ৩৭ মিনিটে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও অন্যান্য উপদেষ্টারা।

অনুষ্ঠানে কূটনীতিক, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং গণমাধ্যমকর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের বলেন, “এটি একটি ভালো সনদ। কিছু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে, তবে ভবিষ্যতে সেগুলো মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করা সম্ভব।”

অনুষ্ঠানের আগে ‘জুলাই যোদ্ধা’ পরিচয়ে একদল যুবক অবস্থান নিলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের সরিয়ে দেয়। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, ইটপাটকেল ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে।

বৃষ্টির কারণে অনুষ্ঠান কিছুটা বিলম্বিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বিকেল ৩টার দিকে এক ফেসবুক পোস্টে জানান, “সবকিছু ঠিকঠাক চলছে, কিছু অতিথি ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছেন। আমাদের ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ের সূচনা দেখার অপেক্ষায় আছি।”

ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিকেল ২টার দিকে জুলাই সনদের পঞ্চম দফায় সংশোধন আনে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তবে এনসিপি জানায়, আইনি নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত তারা সনদে স্বাক্ষর করবে না। অন্যদিকে বাম ধারার চার দলও সংশোধিত খসড়া না পেয়ে সই থেকে বিরত থাকে।

সবশেষে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই জাতীয় সনদ উন্মোচন করে বলেন, “আজ আমরা যে পথরেখা এঁকেছি, তা বাংলাদেশকে একটি নতুন যুগে প্রবেশের দ্বার উন্মোচন করবে।”