
গাজার পরিস্থিতি এক নতুন মোড়ে প্রবাহিত হয়েছে, যখন দখলদার ইসরায়েলি সেনারা ‘নেতাজারিম করিডর’ অঞ্চলে আবারও তাদের অবস্থান নিয়েছে। গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতির চুক্তির পর ইসরায়েলি সেনারা ধীরে ধীরে গাজা থেকে সরে গিয়েছিল এবং সীমান্তবর্তী অঞ্চলে অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু আজ, বুধবার (১৯ মার্চ), তারা ফের গাজার ভেতরে প্রবেশ করে দুই ভাগে বিভক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে হামলা শুরু করেছে।
এক্সে (পূর্বের টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার মধ্যাঞ্চলে তারা নির্দিষ্ট স্থল হামলা শুরু করেছে। এর মূল লক্ষ্য হলো, গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মধ্যে আংশিক বাফার জোন তৈরি করা। এই হামলা অংশ হিসেবে, তারা ‘নেতাজারিম করিডরের’ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার কাজ শুরু করেছে, যা গাজা নগরীর ভিতরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। গত ফেব্রুয়ারিতে এই অঞ্চলে ইসরায়েলি সেনারা ফিরে গিয়েছিল, তবে তা বেশ কিছুদিন স্থায়ী হয়নি।
বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, যুদ্ধবিরতির পর প্রায় ৫ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি দক্ষিণাঞ্চল থেকে উত্তরাঞ্চলে পাড়ি জমিয়েছিলেন, কিন্তু ইসরায়েলের বিমান হামলায় বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক বিবৃতিতে হুমকি দিয়েছেন, যে কোনো অঞ্চলে হামলা চালানো হলে সেখানে থাকা ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, ইসরায়েল গাজার নতুন হামলার তীব্রতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বর্তমানে গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চলমান যুদ্ধের মধ্যে ইতিমধ্যে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। এর মধ্যে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৯৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৮৩ জন শিশুও রয়েছে। এই হত্যাযজ্ঞের মধ্যে আরও একবার আন্তর্জাতিক সমাজের সমালোচনা বেড়েছে, তবে শান্তির সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে উঠছে।
এছাড়া, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর হামলার তীব্রতায় গাজার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে, এবং যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এখন অল্প সময়ের জন্য দূরে মনে হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ফিলিস্তিনিদের পক্ষে শান্তির আহ্বান জানালেও, একদিকে হামাসের হাতে অপহৃত ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির দাবি এবং অন্যদিকে ইসরায়েলের নির্দিষ্ট লক্ষ্যগুলি বাস্তবায়ন তাদের সামনে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যুদ্ধের এই বিপর্যস্ত সময়ে, মানবিক সংকটের মাত্রা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে, আর বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অপেক্ষা চলছে।