০১:১০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাণিজ্যে বাংলাদেশ-চীন অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী হবে

চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবোর সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

গভর্নর ইউবোর প্রথম বাংলাদেশ সফরকে স্বাগত জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এটা কেবল শুরু। আমরা এত কাছাকাছি, তবুও এত দূরে। আসুন, এ পরিস্থিতি বদলে ফেলি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ভালো প্রতিবেশী হতে চাই, তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, খুব ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হতে চাই।”

প্রধান উপদেষ্টা তার সাম্প্রতিক চীন সফরের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বলেন, সেটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। এ সময় তিনি চীনের উষ্ণ আতিথেয়তার প্রশংসা করেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

গভর্নর ওয়াং ইউবো বলেন, “আমার এই সফরের উদ্দেশ্য হলো আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা। ইউনান দক্ষিণ এশিয়ার জন্য চীনের উন্মুক্ত কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত।”

বৈঠকে উভয় পক্ষ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বাণিজ্য ও যুব বিনিময়সহ নানা যৌথ উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন। গভর্নর ইউবো জানান, ইউনানে একটি চীনা ব্যাংক ইতোমধ্যে অধ্যাপক ইউনূস প্রবর্তিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা স্থানীয়দের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

তিনি পেশাগত প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল ও ভাষা শিক্ষা, সামুদ্রিক খাবার, আম এবং কৃষিপণ্যের বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেন। মানুষে মানুষে সংযোগ বাড়ানোর গুরুত্বও তিনি তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা এসব প্রস্তাবকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য বা প্রশিক্ষণ—সবক্ষেত্রেই আমরা একমত। আমরা এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে আগ্রহী এবং চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ অংশীদার ও প্রকৃত বন্ধু হতে চাই।”

বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবাকে মূল অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা ও চিকিৎসা পর্যটন চালুর সুযোগ সৃষ্টি করায় চীনকে ধন্যবাদ জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, “এই সহযোগিতা আমাদের অংশীদারিত্বের একটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে।”

এছাড়া, শিক্ষাবিনিময় বাড়ানোর বিষয়েও উভয় পক্ষ একমত হন। বর্তমানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে অধ্যয়ন করছে এবং এ সংখ্যা আরও বাড়াতে কাজ করার আশ্বাস দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের তরুণদের চীনে পড়াশোনা ও ভাষা শেখায় উৎসাহিত করব।”

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে অধ্যাপক ইউনূস পারস্পরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও নতুন সুযোগ উন্মোচনে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন।

ট্যাগ
পোস্টকারীর সকল তথ্য

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও বাণিজ্যে বাংলাদেশ-চীন অংশীদারিত্ব আরও শক্তিশালী হবে

প্রকাশিত হয়েছে: ০৭:০৪:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

চীনের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (২১ এপ্রিল) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চীনের ইউনান প্রদেশের গভর্নর ওয়াং ইউবোর সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।

গভর্নর ইউবোর প্রথম বাংলাদেশ সফরকে স্বাগত জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এটা কেবল শুরু। আমরা এত কাছাকাছি, তবুও এত দূরে। আসুন, এ পরিস্থিতি বদলে ফেলি।” তিনি আরও বলেন, “আমরা ভালো প্রতিবেশী হতে চাই, তবে তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, খুব ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হতে চাই।”

প্রধান উপদেষ্টা তার সাম্প্রতিক চীন সফরের অভিজ্ঞতা স্মরণ করে বলেন, সেটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। এ সময় তিনি চীনের উষ্ণ আতিথেয়তার প্রশংসা করেন এবং চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উৎসাহব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।

গভর্নর ওয়াং ইউবো বলেন, “আমার এই সফরের উদ্দেশ্য হলো আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করা। ইউনান দক্ষিণ এশিয়ার জন্য চীনের উন্মুক্ত কেন্দ্র হিসেবে কাজ করতে প্রস্তুত।”

বৈঠকে উভয় পক্ষ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বাণিজ্য ও যুব বিনিময়সহ নানা যৌথ উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন। গভর্নর ইউবো জানান, ইউনানে একটি চীনা ব্যাংক ইতোমধ্যে অধ্যাপক ইউনূস প্রবর্তিত ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, যা স্থানীয়দের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

তিনি পেশাগত প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল ও ভাষা শিক্ষা, সামুদ্রিক খাবার, আম এবং কৃষিপণ্যের বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রস্তাব দেন। মানুষে মানুষে সংযোগ বাড়ানোর গুরুত্বও তিনি তুলে ধরেন।

প্রধান উপদেষ্টা এসব প্রস্তাবকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য বা প্রশিক্ষণ—সবক্ষেত্রেই আমরা একমত। আমরা এসব প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে আগ্রহী এবং চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ অংশীদার ও প্রকৃত বন্ধু হতে চাই।”

বৈঠকে স্বাস্থ্যসেবাকে মূল অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। কুনমিংয়ের চারটি হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা ও চিকিৎসা পর্যটন চালুর সুযোগ সৃষ্টি করায় চীনকে ধন্যবাদ জানান অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, “এই সহযোগিতা আমাদের অংশীদারিত্বের একটি নতুন অধ্যায় রচনা করবে।”

এছাড়া, শিক্ষাবিনিময় বাড়ানোর বিষয়েও উভয় পক্ষ একমত হন। বর্তমানে প্রায় ৪০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে অধ্যয়ন করছে এবং এ সংখ্যা আরও বাড়াতে কাজ করার আশ্বাস দেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের তরুণদের চীনে পড়াশোনা ও ভাষা শেখায় উৎসাহিত করব।”

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখে অধ্যাপক ইউনূস পারস্পরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও নতুন সুযোগ উন্মোচনে চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদও উপস্থিত ছিলেন।