
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলায় অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ৩৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে করে গত ১৫ মাস ধরে চলমান আগ্রাসনে গাজায় মোট প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫১ হাজার ২৫০ জনে। সোমবার (২১ এপ্রিল) তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদোলুর বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টার ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬২ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় আহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৩১ জনে পৌঁছেছে।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো বহু মানুষ আটকে আছেন এবং রাস্তায় পড়ে থাকা আহতদের অনেকের কাছে এখনো উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে পারেননি।
গত ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। প্রায় দুই মাস গাজায় তুলনামূলক শান্তি বিরাজ করলেও মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ফের বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। গাজার ওপর নতুন করে চালানো এই হামলার পেছনে হামাসের সঙ্গে মতানৈক্যকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১৮ মার্চ থেকে নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় ১ হাজার ৮৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৪ হাজার ৯০০ জন আহত হয়েছেন। চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ইসরায়েলের এই আগ্রাসনে ভেঙে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, চলমান হামলায় গাজার ৮৫ শতাংশ জনগণ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে। ফলে স্থানীয় জনগণের জন্য খাদ্য, পানি, চিকিৎসা এবং আশ্রয়ের সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
এর আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
এছাড়াও, গাজার ওপর চালানো আগ্রাসনের জন্য ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (ICJ) গণহত্যার মামলাও চলমান রয়েছে।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতা ও ব্যর্থতা এ সংকটকে আরও গভীরতর করছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।