১২:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আট মাসে ২৬টি নতুন রাজনৈতিক দল ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠার পেছনে কী রহস্য?

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর মাত্র আট মাসে দেশে আত্মপ্রকাশ করেছে ২৬টি নতুন রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্ম। এই সময়ে গড়ে প্রতি মাসে তিনটির বেশি দল গঠনের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নজিরবিহীন। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতার পেছনে রয়েছে নির্বাচনকেন্দ্রিক কৌশল, রাজনৈতিক লেবেল অর্জনের প্রয়াস এবং ক্ষমতার বলয়ে প্রবেশের আকাঙ্ক্ষা।


🧾 যেসব নতুন রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করেছে

এ পর্যন্ত গণমাধ্যমে যেসব দলের নাম এসেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  1. নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি)

  2. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি

  3. ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি

  4. সমতা পার্টি

  5. বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি)

  6. সার্বভৌমত্ব আন্দোলন

  7. বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি)

  8. বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১

  9. বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি

  10. বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি)

  11. জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ

  12. দেশ জনতা পার্টি

  13. আমজনতার দল

  14. বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি

  15. বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি)

  16. বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি

  17. জাতীয় নাগরিক পার্টি

  18. জনতার বাংলাদেশ পার্টি

  19. জনতার দল

  20. গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি

  21. ভাসানী জনশক্তি পার্টি

  22. বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি)

  23. জাতীয় নাগরিক কমিটি (প্ল্যাটফর্ম)

  24. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (প্ল্যাটফর্ম)

  25. বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (ছাত্র সংগঠন)

  26. ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (ঘোষণার অপেক্ষায়)


🧠 রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখে নতুন দলের হিড়িক

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের এই প্রবণতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় পুরনো একটি দৃশ্যপটের পুনরাবৃত্তি মাত্র।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন:

“নির্বাচনের গন্ধ এলেই দেশে হঠাৎ করেই ব্যাঙের ছাতার মতো ছোট ছোট দল গজিয়ে ওঠে। এরশাদের আমলেও এমনটা দেখা গিয়েছিল। সেই সময় একপর্যায়ে দেশে ১২০টির মতো দল তৈরি হয়, যার মধ্যে ৯০টি দল নিয়ে একটি জোট গঠন করা হয়েছিল।”

তিনি মনে করেন, আজকের এই প্রবণতার পেছনেও তেমন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই কাজ করছে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন:

“রাজনীতি এখন অনেকের কাছে দ্রুত অর্থ ও প্রভাব অর্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদর্শের জায়গা সরে গিয়ে এখানে ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’র বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই অনেকেই ব্যক্তিগত সুবিধা কিংবা প্রশাসনিক সুবিধা পাওয়ার আশায় দল গঠন করছে।”

তাঁদের মতে, এসব দলের বড় অংশ আদর্শনির্ভর রাজনীতির ধারক নয়, বরং তা অনেকটাই সাময়িক রাজনৈতিক কৌশল বা ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার প্রয়াসমাত্র।

 


🧓 ‘রাজনৈতিক লেবেল’ না থাকায় জেলেই আটকে থাকা!

ডেসটিনির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন গঠন করেছেন বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি
তিনি বলেন,

“যেদিন শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লেন, তার পরের কয়েকদিনে বহু মানুষ জেল থেকে ছাড়া পেল। আমি যখন চাই, তখন বলা হলো—‘আপনার তো কোনো রাজনৈতিক দল নেই।’ অর্থাৎ রাজনৈতিক লেবেল থাকলে ছাড় মিলত!”

এই অভিজ্ঞতা থেকেই নিজের ‘জুলুমের কথা’ জানানোর জন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন বলেও জানান তিনি।


🎓 এনসিপি ও ছাত্র নেতৃত্বের উত্থান

সব দল সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও ন্যাশনাল চেঞ্জ পার্টি (এনসিপি) এক প্রকার আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে।
এটি মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে গড়ে ওঠা একটি সংগঠন। এই প্ল্যাটফর্ম থেকেই গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ

শিবিরের সাবেক নেতাদের একটি অংশ এর মধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন নতুন দল ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।


🧑‍🤝‍🧑 জনগণ কী বলছে?

রাজধানীর এক CNG চালক  মো. আক্কেল আলি  বলেন  “বাংলাদেশে মনে হয়  ১০ জনেও দল করন যায়। যার যার মতো খালি দল বানাইতাছে। এগুলা আমরাও ১টা দল  বানাইতে হারি।” কেউ কি কইতে পারবো বাংলাদেশে কত দল।

শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের কাছেও  জিজ্ঞান  বেশিরভাগ দলের নামই অজানা।


📉 ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: কয়টি দল টিকে থাকবে?

রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, অনেক দল এলেও টিকে থাকে খুব কম। কেউ কেউ বড় দলে মিশে যায়, কেউ আবার একবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই অদৃশ্য হয়ে যায়।


📌 উপসংহার
নতুন দল গঠন গণতান্ত্রিক চর্চার একটি বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো ব্যক্তিগত বা কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার জন্য গঠিত হয়।
আগামী নির্বাচন ঘিরে এই দলগুলোর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং কয়টি দল সত্যিকার অর্থে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে—তা সময়ই বলে দেবে।


🗨️ আপনার মতে, এই নতুন দলগুলো কি গণতন্ত্রের শক্তি বাড়াবে, না কি রাজনৈতিক বিভ্রান্তির নতুন অধ্যায় শুরু করবে? 

আমাদের কমেন্ট করে জানান।

ট্যাগ
পোস্টকারীর সকল তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চীনের সঙ্গে যৌথভাবে আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় প্রতিশ্রুতি দিল পাকিস্তান

আট মাসে ২৬টি নতুন রাজনৈতিক দল ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠার পেছনে কী রহস্য?

প্রকাশিত হয়েছে: ০৮:০৮:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৫

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর মাত্র আট মাসে দেশে আত্মপ্রকাশ করেছে ২৬টি নতুন রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্ম। এই সময়ে গড়ে প্রতি মাসে তিনটির বেশি দল গঠনের ঘটনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নজিরবিহীন। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রবণতার পেছনে রয়েছে নির্বাচনকেন্দ্রিক কৌশল, রাজনৈতিক লেবেল অর্জনের প্রয়াস এবং ক্ষমতার বলয়ে প্রবেশের আকাঙ্ক্ষা।


🧾 যেসব নতুন রাজনৈতিক দল ও প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করেছে

এ পর্যন্ত গণমাধ্যমে যেসব দলের নাম এসেছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  1. নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি)

  2. জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি

  3. ওয়ার্ল্ড মুসলিম কমিউনিটি

  4. সমতা পার্টি

  5. বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি)

  6. সার্বভৌমত্ব আন্দোলন

  7. বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি)

  8. বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১

  9. বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি

  10. বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি)

  11. জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ

  12. দেশ জনতা পার্টি

  13. আমজনতার দল

  14. বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি

  15. বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (বিএসডিপি)

  16. বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টি

  17. জাতীয় নাগরিক পার্টি

  18. জনতার বাংলাদেশ পার্টি

  19. জনতার দল

  20. গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি

  21. ভাসানী জনশক্তি পার্টি

  22. বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি (বিএজেপি)

  23. জাতীয় নাগরিক কমিটি (প্ল্যাটফর্ম)

  24. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন (প্ল্যাটফর্ম)

  25. বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (ছাত্র সংগঠন)

  26. ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (ঘোষণার অপেক্ষায়)


🧠 রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের চোখে নতুন দলের হিড়িক

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের এই প্রবণতা বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় পুরনো একটি দৃশ্যপটের পুনরাবৃত্তি মাত্র।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন:

“নির্বাচনের গন্ধ এলেই দেশে হঠাৎ করেই ব্যাঙের ছাতার মতো ছোট ছোট দল গজিয়ে ওঠে। এরশাদের আমলেও এমনটা দেখা গিয়েছিল। সেই সময় একপর্যায়ে দেশে ১২০টির মতো দল তৈরি হয়, যার মধ্যে ৯০টি দল নিয়ে একটি জোট গঠন করা হয়েছিল।”

তিনি মনে করেন, আজকের এই প্রবণতার পেছনেও তেমন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যই কাজ করছে।

অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলেন:

“রাজনীতি এখন অনেকের কাছে দ্রুত অর্থ ও প্রভাব অর্জনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আদর্শের জায়গা সরে গিয়ে এখানে ‘রাজনৈতিক অর্থনীতি’র বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই অনেকেই ব্যক্তিগত সুবিধা কিংবা প্রশাসনিক সুবিধা পাওয়ার আশায় দল গঠন করছে।”

তাঁদের মতে, এসব দলের বড় অংশ আদর্শনির্ভর রাজনীতির ধারক নয়, বরং তা অনেকটাই সাময়িক রাজনৈতিক কৌশল বা ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার প্রয়াসমাত্র।

 


🧓 ‘রাজনৈতিক লেবেল’ না থাকায় জেলেই আটকে থাকা!

ডেসটিনির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীন গঠন করেছেন বাংলাদেশ আ-আম জনতা পার্টি
তিনি বলেন,

“যেদিন শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লেন, তার পরের কয়েকদিনে বহু মানুষ জেল থেকে ছাড়া পেল। আমি যখন চাই, তখন বলা হলো—‘আপনার তো কোনো রাজনৈতিক দল নেই।’ অর্থাৎ রাজনৈতিক লেবেল থাকলে ছাড় মিলত!”

এই অভিজ্ঞতা থেকেই নিজের ‘জুলুমের কথা’ জানানোর জন্য একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন বলেও জানান তিনি।


🎓 এনসিপি ও ছাত্র নেতৃত্বের উত্থান

সব দল সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও ন্যাশনাল চেঞ্জ পার্টি (এনসিপি) এক প্রকার আলাদা গুরুত্ব পাচ্ছে।
এটি মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকে গড়ে ওঠা একটি সংগঠন। এই প্ল্যাটফর্ম থেকেই গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ

শিবিরের সাবেক নেতাদের একটি অংশ এর মধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন নতুন দল ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে।


🧑‍🤝‍🧑 জনগণ কী বলছে?

রাজধানীর এক CNG চালক  মো. আক্কেল আলি  বলেন  “বাংলাদেশে মনে হয়  ১০ জনেও দল করন যায়। যার যার মতো খালি দল বানাইতাছে। এগুলা আমরাও ১টা দল  বানাইতে হারি।” কেউ কি কইতে পারবো বাংলাদেশে কত দল।

শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীদের কাছেও  জিজ্ঞান  বেশিরভাগ দলের নামই অজানা।


📉 ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: কয়টি দল টিকে থাকবে?

রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, অনেক দল এলেও টিকে থাকে খুব কম। কেউ কেউ বড় দলে মিশে যায়, কেউ আবার একবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই অদৃশ্য হয়ে যায়।


📌 উপসংহার
নতুন দল গঠন গণতান্ত্রিক চর্চার একটি বহিঃপ্রকাশ হতে পারে। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো ব্যক্তিগত বা কৌশলগত স্বার্থ রক্ষার জন্য গঠিত হয়।
আগামী নির্বাচন ঘিরে এই দলগুলোর ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং কয়টি দল সত্যিকার অর্থে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারবে—তা সময়ই বলে দেবে।


🗨️ আপনার মতে, এই নতুন দলগুলো কি গণতন্ত্রের শক্তি বাড়াবে, না কি রাজনৈতিক বিভ্রান্তির নতুন অধ্যায় শুরু করবে? 

আমাদের কমেন্ট করে জানান।